জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয়তা বাড়বে: কেরি

সংক্ষিপ্ত ঢাকা সফর নিয়ে সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি; তিনি মনে করেন, তার এই সফর ধরে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও নিবিড় হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2016, 06:10 PM
Updated : 29 August 2016, 07:06 PM

সোমবার আট ঘণ্টার ব‌্যস্ত সফর শেষে যাওয়ার আগে রাজনীতিবিদ, সাবেক কূটনীতিক, সাংবাদিক ও তরুণ পেশাজীবীদের সামনে এক বক্তৃতায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান তিনি।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলাকারী যে এদেশেই বেড়ে ওঠা, সরকারের এই বক্তব‌্যে অমত করেননি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে এই জঙ্গিদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী দ্বারা প্রভাবিত বলে মনে করেন তিনি।

সফর নিয়ে উচ্ছ্বসিত কেরি টুইটে “বাংলাদেশের উন্নয়নের অসাধারণ এক গল্প’ শোনার কথাও বলেছেন।

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জন নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশে নিরাপত্তা নিয়ে ওয়াশিংটনের উদ্বেগের মধ্যে ঢাকায় এলেন জন কেরি।

নেমেই প্রথমে ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে গিয়ে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী; পরে বক্তৃতায় তিনি বলেন, একাত্তরে বাংলাদেশের পক্ষেই তার অবস্থান ছিল।

বঙ্গবন্ধু জাদুঘর থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান কেরি, সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনি।

ঢাকায় নামছেন

জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা

সন্ধ্যায় ঢাকা ছাড়ার আগে রাজধানীর ধানমন্ডির ইএমকে সেন্টারে বক্তৃতা দেন কেরি; যেখানে গুলশান হামলার প্রসঙ্গটি আসে, যাতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকও নিহত হন।  

কেরি বলেন, বাংলাদেশ ‘বিভক্ত’ এবং বাকি বিশ্বের কাছ থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ করতেই ওই হামলা চালানো হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। আর এর মধ‌্য দিয়ে তার দৃঢ় আশাবাদ জন্মেছে যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয়তা আরও বাড়বে।

“আপনারা আরও সক্রিয়তা এবং আরও নিবিড় যোগাযোগ, হয়ত বা আরও উপস্থিতি দেখতে পাবেন।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘খুব ঘনিষ্ঠভাবে’ কাজ করার ব্যাপারে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‌‘খুবই স্পষ্ট’ অবস্থান দেখেছেন বলে জানান কেরি।

“এই অবস্থা থেকে উত্তরণে বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আজ আমরা একমত হয়েছি, যাতে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একযোগে কাজ করবে।”

জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় অর্থায়ন থেকে যোগাযোগ এবং সুনির্দিষ্টভাবে শিক্ষা, চাকরি ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে প্রতিরোধ- সবদিক থেকে কাজ করার ওপর জোর দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

কেরি বলছেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সবার সঙ্গে তথ্য, নতুন কৌশল আদান-প্রদান ছাড়া কোনো দেশ যে সফল হতে পারে না, তা সবার কাছেই স্পষ্ট।

“সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হচ্ছে আমাদের মধ্যে যোগাযোগ।”

বিদায় পর্ব

সফর নিয়ে টুইট

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সিরিয়া ও ইরাকে আইএসবিরোধী অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে বলেও দাবি করেন ওয়াশিংটনের এই প্রতিনিধি।

বাংলাদেশে জঙ্গি হামলাগুলোর ঘটনায় আইএস ও আল কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর নামে দায় স্বীকারের বার্তা এলেও সরকার তাদের অস্তিত্ব নাকচ করে দেশে বেড়ে ওঠা জঙ্গিগোষ্ঠীকে দায়ী করছে।

বক্তৃতা পর্বে এবিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে কেরি বলেন, জঙ্গিদের ধরনের বিষয়ে ঢাকা তাদেরকে ‘হোম গ্রোন’ বলে যে অভিধা ব্যবহার করেছে তা নিয়ে তার ভিন্নমত নেই।

“তারা ‘হোম গ্রোন’, যেহেতু বিদেশি যোদ্ধারা এসব করতে এখানে আসেনি। এখানকার বাংলাদেশিদের কয়েকজনই এটি করছে।”

তবে এই জঙ্গিদের কেউ কেউ ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা এই জাতীয় মাধ্যমের সহায়তায় কোনো গোষ্ঠী দ্বারা প্রভাবিত বলে মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

“এখানকার (জঙ্গি কার্যক্রম) পরিচালনাকারী অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। আলোচনায় আমরা বিষয়টি ভালোভাবেই স্পষ্ট করেছি। এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।”

প্রায় আধা ঘণ্টার বক্তৃতায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিরাপত্তা বিষয়েই বেশি কথা বলেন। তবে সেই সঙ্গে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখা এবং সহিংস উগ্রপন্থা মোকাবেলার মধ্যে সম্পর্ক টানেন কেরি।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে

বিএনপিবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবে নেয়নি বলে চলে আসা গুঞ্জনের মধ্যে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরির তার প্রথম ঢাকা সফর করলেন।

বক্তৃতা অনুষ্ঠানে আসার আগে বারিধারায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস কমপ্লেক্সে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি।  

বক্তৃতায় কেরি বলেন, “সন্ত্রাসীদের পরাজিত করতে আমাদের দীর্ঘদিনের লালিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা নয়, সেগুলোকে বজায় রাখতে হবে। ”

তিনি বলেন, সহিংস উগ্রপন্থা মোকাবেলায় এখনও গণতন্ত্রই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।

বক্তৃতা অনুষ্ঠানের পর মিরপুরে একটি তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শনে যান কেরি। তারপর বিকালেই তিনি নয়া দিল্লির পথে ঢাকা ছাড়েন।