‘সংকটের কথা সেদিনই বলেছিলেন হুমায়ূন আজাদ’

‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’ কবিতায় হুমায়ূন আজাদ বলেছিলেন, উগ্রপন্থার বিস্তারের কথা; উল্লেখ করেছিলেন স্বাধীনতাবিরোধীদের আস্ফালনের কথা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2016, 06:00 PM
Updated : 29 August 2016, 06:00 PM

সঙ্কোচহীন সেই কবির ‘নির্ভীক উচ্চারণকে’ সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করায় জাতি তার মূল্য চুকাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

কবি-প্রাবন্ধিক-সমালোচক-শিক্ষক অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটরিয়ামে হুমায়ূন আজাদ ফাউন্ডেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে আয়োজন করে আলোচনা সভা।

আয়োজন করা হয়, তার কবিতা থেকে আবৃত্তি অনুষ্ঠানের।

অনুষ্ঠানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন বলেন, “হুমায়ূন আজাদ ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথাবিরোধী লেখক। গভীর অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন হুমায়ূন আজাদ তার সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে আজও বেঁচে আছেন, তিনি বেঁচে আছেন তার কবিতা, প্রবন্ধে।”

জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের উত্থান নিয়ে হুমায়ূন আজাদের সঙ্গে আলাপচারিতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “আজকের এই সঙ্কটের কথা তিনি আমাকে সরাসরি বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন জামায়াত-শিবির চক্র দেশকে একদিন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করাবে। কতটা দুরদৃষ্টিসম্পন্ন হলে তিনি সময়ের বহু আগে বলে যেতে পেরেছেন।”

হুমায়ূন আজাদকে অত্যন্ত স্পষ্টভাষী অভিহিত করে তিনি সত্য বলতে কখনও পিছপা হননি বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক আজাদের সহকর্মী এই শিক্ষক।

অধ্যাপক আরেফিন বলেন, “অত্যন্ত স্পষ্টভাষী মানুষটি সত্য বলতে কখনও পিছপা হননি। মানুষ হিসেবে ছিলেন ভীষণ আন্তরিক। চিকিৎসাধীন অবস্থাতেও কত আন্তরিকতায় আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তার মৃত্যুর খবরটি জার্মান দূতাবাসের মাধ্যমে যখন জানলাম, তখন সত্যি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।”

উগ্রবাদ-সংস্কারবিরোধিতা, নারী, রাজনীতির নানা প্রসঙ্গে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন হুমায়ূন আজাদ। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল দেশের শাসনযন্ত্র। তার লেখা ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ বইটি নিষিদ্ধ হয়েছে সবে। তখনই বিভিন্ন নিবন্ধে তিনি মৌলবাদের বিপক্ষে শোর তুলেন।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে উগ্রবাদীরা তার উপর আক্রমণ করে। ভয়াবহ সেই হামলায় গুরুতর আহত এই কবি-প্রাবন্ধিক দীর্ঘ চিকিৎসায় সেরে উঠেন। কিন্তু সেই ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই সে বছর ১১ অগাস্ট জার্মানির মিউনিখে মারা যান।

হুমায়ূন আজাদের ছোট ভাই ও হুমাযূন আজাদ ফাউন্ডেশন সভাপতি মো. সাজ্জাদ কবির সভায় অনুরোধ জানান, “আণবিক শক্তি কমিশনের সামনে যেখানে হুমায়ূন আজাদের উপর আক্রমণ করা হয়েছিল, সেখানে একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হোক। একইসঙ্গে হুমায়ূন আজাদের কর্মক্ষেত্র বাংলা বিভাগে কোনো একটি কক্ষকে তার নামে নামাঙ্কিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।”

পরে উপাচার্য জানান, হুমায়ূন আজাদের স্মৃতিরক্ষার্থে এখনও ‘সুনির্দিষ্ট’ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিলে তিনি তা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি সংস্কৃতিসচিব বেগম আক্তারী মমতাজ বলেন, “হুমায়ূন আজাদ অসীম সাহসিকতার সঙ্গে কালোকে কালো আর সাদাকে সাদা বলতে পারতেন। তিনি সারা জীবন ভর ধর্মান্ধতা, প্রতিক্রিয়শীলতার বিরুদ্ধে লিখেছেন।”

হুমায়ূন আজাদের ছাত্র কবি মোহন রায়হান বলেন, “বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কবিদের অনেক চরণের চাইতে শক্তিশালী, অসম্ভব তার শব্দ চয়ন, অসাধারণ শব্দ জ্ঞান, অদ্ভূত তার উপমা-প্রতীক নির্মাণ।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “হুমায়ূন আজাদ জীবনে ঝুঁকি নিয়েছেন বারবার। কিন্তু কখনও ভজন বা চাটুকারিতা করেননি। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন তিনি পূর্ণাঙ্গ জীবন যাপন করেছেন।”

স্মরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল, প্রাবন্ধিক ও প্রকাশক খান মাহবুব, সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ কবীর, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামীম রেজাসহ আরও অনেকে।