বিএনপির সঙ্গে ঐক‌্যের প্রশ্নই ওঠে না: আনু মুহাম্মদ

রামপালে তাপ বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির মদদের অভিযোগ প্রত‌্যাখ‌্যান করেছেন তেল-গ‌্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ‌্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির সদস‌্য সচিব আনু মুহাম্মদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2016, 12:19 PM
Updated : 29 August 2016, 01:21 PM

সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, বড় দুটি দল বরাবরই ক্ষমতায় গেলে তাদের আন্দোলনের বিরোধিতা করে, আবার বিরোধী দলে থাকতে সমর্থন করে।

সুন্দরবনের কাছে রামপালে তাপ বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতার জবাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে তেল-গ‌্যাস রক্ষা কমিটি এই সংবাদ সম্মেলন করে।

এই প্রকল্প অব‌্যাহত রাখতে সরকারের অবস্থান প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ব ঐতিহ‌্য ‘সুন্দরবন রক্ষায়’ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন নাগরিক এই কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ।

তিনি বলেন, “জনগণকে নিয়ে আমরা সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন করব। যত দিন পর্যন্ত এ প্রকল্প বাতিল না হবে, সুন্দরবন রক্ষা না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলবে। আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।”

ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ‌্যোগে বাগেরহাটের রামপালে ১৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ‌্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে, যা বিশ্ব ঐতিহ‌্য সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ হুমকিতে ঠেলে দেবে দাবি করে এর বিরুদ্ধে তেল-গ‌্যাস রক্ষা কমিটির ব‌্যানারে আন্দোলন করছে বাম দলগুলো।

সম্প্রতি বিএনপি এই আন্দোলনে সমর্থন জানায়, খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে ওই প্রকল্প রামপাল থেকে সরানোর দাবিও তোলেন।

তার পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলন ডেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির মদদে এই আন্দোলন হচ্ছে বলে খালেদার সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ‌্য হয়েছে।

বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে আন্দোলনের সম্ভাবনা নাকচ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন এটা নিয়ে আন্দোলন করে আসছি। এখন তিনি (খালেদা) উপলব্ধি করে সমর্থন করেছেন ভালো, তবে তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সম্ভব না।

“যে সব দল ক্ষমতায় থাকাকালে জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তি করেছে, তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।”

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব‌্যের পরিপ্রেক্ষিতে আনু মুহাম্মদ বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশের বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়েরই সমর্থন পাওয়ার অভিজ্ঞতা তাদের হয়েছে।

“হঠাৎ করে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমর্থন জানানোকে প্রধানমন্ত্রী একটি স্বাধীন জনপ্রিয় আন্দোলনে কালি মাখানোর সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, শুধু বিএনপি নয়, গত ১০ বছরে দেশের দুই বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়েরই সমর্থন পাওয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের হয়েছে।”

রামপালে বিদ‌্যুৎ কেন্দ্রের নকশা

সাগরে খনিজ অনুসন্ধানে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার অভিযোগ তুলে তেল-গ‌্যাস রক্ষা কমিটির আন্দোলনের সূচনা, পরে আরও বিভিন্ন বিষয়েও আন্দোলন করে নাগরিক এই সংগঠন।   

প্রধানমন্ত্রীকে ফুলবাড়ী আন্দোলন স্মরণ করিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, “যখন বিএনপি-জামায়াত সরকার ফুলবাড়ীতে গুলি চালানোর পর গণঅভ্যুত্থান অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল, তখন আওয়ামী লীগ আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিল।

“সেসময় বর্তমান সরকারের মতোই তৎকালীন সরকার ‘থলের বেড়াল’ তত্ত্ব হাজির করেছিল, আন্দোলন নিয়ে নানা কুৎসা রটনা শুরু করেছিল। সরকারে থাকলে এই দলগুলোর ভূমিকা হয় সম্পূর্ণ বিপরীত, গুলি-লাঠি-টিয়ার গ্যাস-হামলা-নির্যাতন-কুৎসা কোনো কিছুই বাদ যায় না। বর্তমান সরকারের ভূমিকাও তার প্রমাণ।”

তেল-গ‌্যাস রক্ষা কমিটির রোড মার্চসহ নানা কর্মসূচিতে অর্থায়ন নিয়ে শেখ হাসিনার প্রশ্ন তোলার জবাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ‌্যালয়ের অর্থনীতির এই অধ‌্যাপক বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি যখন আমাদের ফুলবাড়ী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন, তখন আমরা যেভাবে খরচ যোগাতাম, এখনও আমরা সেভাবেই খরচ যোগাই।

“তবুও আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি, এই আন্দোলন জনগণের গায়ে গতরে, অসংখ্য মানুষের শ্রমে-ঘামে গড়ে তোলা আন্দোলন। লং মার্চের কথা বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যারা দিনরাত পরিশ্রম করে খেয়ে না খেয়ে এসব কর্মসূচিতে অংশ নেয় তাদেরকেও চাঁদা দিয়ে অংশ নিতে হয়। ক্ষমতায় থাকা বড় দলগুলোর মতো আমাদের আন্দোলন টাকার উপর ভর করে না, কারও পৃষ্ঠপোষকতার তোয়াক্কা করে না।”

সংবাদ সম্মেলনে আনু মুহাম্মদ

“প্রধানমন্ত্রী আপনি হয়ত ভুলে গেছেন, ভাষা আন্দোলনে মানুষকে পয়সা দিয়ে আনতে হয়নি, ৬০ দশকের আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ মানুষ জীবন বাজি রেখে গেছে। পয়সা দিয়ে দালাল আসে, যেমন রামপালের প্রকল্পের পক্ষে প্রচারকরা আছে,” বলেন তেল-গ‌্যাস রক্ষা কমিটির সদস‌্য সচিব।

তিনি বলেন, “আমরা আন্দোলন করছি সুন্দরবন রক্ষার জন্য, জনগণের সম্পদ রক্ষার জন্য, ব্যক্তিগত সম্পদ রক্ষার আন্দোলন আমরা করছি না।”

এই প্রকল্পের বিরোধিতার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব‌্যবহার করেই এই তাপ বিদ‌্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে, এতে পরিবেশ দূষণ ন‌্যূনতম মাত্রায় থাকবে, সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না।

তবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব‌্যে আশ্বস্ত না হয়ে আনু মুহাম্মদ দাবি করেন, তারা ‘বৈজ্ঞানিক তথ্য বিশ্লেষণের’ উপর ভর করে এই প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন।

এনিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় রাজি আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেন, তবে নিশ্চয়ই আমরা আলোচনা করব। আলোচনা করতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। সরকার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আশ্বাস দিলে আমরা আলোচনা করব।”

পুরানা পল্টনে মুক্তি ভবনে এই সংবাদ সম্মেলনে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক উপস্থিত ছিলেন।