সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়তে চায় যুক্তরাষ্ট্র

বিশেষজ্ঞ সহায়তার প্রস্তাব দিয়ে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2016, 10:48 AM
Updated : 29 August 2016, 07:25 PM

আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অস্ত্র ছাড়া সব ধরনের বাংলাদেশি পণ্যের ‘শুল্ক ও কোটামুক্ত’ প্রবেশাধিকার চেয়েছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারে আরও মার্কিন বিনিয়োগ প্রত‌্যাশা করেছেন তিনি।   

প্রথমবারের মত বাংলাদেশ সফরে আসা জন কেরি সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে গেলে তাদের বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয় বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান।

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের তথ্য আদান-প্রদানের প্রয়োজন রয়েছে। টেরোরিজমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-ইউএস একসঙ্গে লড়াই করবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রী বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে আরও ‘ঘনিষ্ঠভাবে’ কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলেও প্রেস সচিব জানান।

“তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় তাদের যথেষ্ট এক্সপার্টাইজ আছে। তারা এ বিষয়ে সহায়তা করতে পারেন।”

ইহসানুল করিম বলেন, “প্রযুক্তি সুবিধায় এগিয়ে থাকায় জঙ্গি কর্মকাণ্ডের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনেক তথ্য আসে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সেসব তথ্য তারা আমাদের দিলে জঙ্গি ধরতে সুবিধা হবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইএস ধীরে ধীরে কোনঠাসা হয়ে পড়ায় তাদের বিদেশি যোদ্ধারা (যারা সিরীয় নন) নিজ নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী তার কাছে জানতে চান, আইএসের অর্থ ও অস্ত্র কোথা থেকে আসছে। জবাবে কেরি বলেন, ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস এর দখল করা খনি থেকে তেল বিক্রি করে অর্থ পাচ্ছে তারা।

প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদকে একটি ‘বৈশ্বিক সমস্যা’ হিসেবে বর্ণনা করে এর বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে বাংলাদেশে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন বলে প্রেস সচিব জানান।

বৈঠকের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণতন্ত্র, উন্নয়ন, নিরাপত্তা এবং বৈশ্বিক নানা বিষয়ে দুই দেশের অংশীদারিত্বমূলক কার্যক্রম কীভাবে আরও নিবিড় করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেন শেখ হাসিনা ও কেরি।  

সন্ত্রাসবাদের যে হুমকির মধ‌্যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই রয়েছে, তা ঐক‌্যবদ্ধভাবে মোকাবেলার উপর জোর দেন তারা। পাশাপাশি কেরি মানবাধিকার ও গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার উপরও জোর দেন।

এক দিনের সংক্ষিপ্ত সফরে সকালে ঢাকা পৌঁছান জন কেরি। ২০১২ সালে হিলারি ক্লিনটনের সফরের পর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রথম বাংলাদেশ সফর।

কেরি বেলা ১২টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল, ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ছিলেন কেরির সঙ্গে।

প্রেস সচিব বলেন, প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, স্বাস্থ্য ও জ্বালানি খাতে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে বলে মত দেন জন কেরি।

“বাংলাদেশের উন্নতির প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তোমরা দুর্দান্ত কাজ করছ’।”

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অন্যান্য ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদাত্বের বিষয়েও কেরি কথা বলেন বলে ইহসানুল করিম জানান।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আগে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে দেখে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

প্রেস সচিব বলেন, “বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জাদুঘর দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে জন কেরি বলেছেন, হি ইজ ইমপ্রেসড।”

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সময় কেরি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সিনেটর এডওয়ার্ড মুর কেনেডির (টেড কেনেডি) সমর্থনের কথাও তুলে ধরেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ঘিরে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলেনের ঘটনাবলী তাকে বলেন।

প্রেস সচিব জানান, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ করেন বৈঠকে।

“জবাবে জন কেরি বলেন, আই আন্ডারস্ট্যান্ড ইওর সেনসিটিভিটি। দিস ইস্যু ইজ আন্ডার রিভিউ।”

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বর্তমান পররাষ্ট্রনীতি ব্যাখ্যা করে কেরিকে বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’- এই নীতি নিয়ে তার সরকার কাজ করছে।  

খাদ্য নিরাপত্তা, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দরিদ্রতার হার কমিয়ে আনার কথাও তিনি তুলে ধরেন।

অন‌্যদের মধ‌্যে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন বৈঠকের সময়।