ঈদযাত্রার টিকেট নিতে কমলাপুরে ভিড়

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের গন্তব্যে ট্রেনের অগ্রীম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2016, 05:55 AM
Updated : 29 August 2016, 06:28 AM

রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, যশোর, ঈশ্বরদী, রাজশাহী, দিনাজপুর ও লালমনিরহাটসহ বড় স্টেশনগুলো থেকে সোমবার সকাল থেকে ৭ সেপ্টেম্বরের টিকেট বিক্রি চলছে।

কমলাপুর রেল স্টেশনের ২৩টি কাউন্টার থেকে টিকেট বিক্রি সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়েছে, চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে ।

চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী ১২ বা ১৩ সেপ্টেম্বর ঈদুল আজহা হবে। সে অনুযায়ী ঈদের আগে ১১ সেপ্টেম্বর এবং ঈদের ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আগাম টিকেট বিক্রির সূচি ঠিক করা হয়েছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঈদযাত্রায় কমলাপুর স্টেশন থেকে প্রতিদিন ৬৯টি ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। এর মধ্যে অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হবে শুধু ৩১টি ট্রেনের প্রায় ২৩ হাজার ৫০০ আসনের।

আগাম টিকেট নিতে ভোর রাত থেকেই কমলাপুরে স্টেশনে ভিড় করছেন মানুষ, অনেকে রোববার রাত থেকেই অপেক্ষায় রয়েছেন।

তবে সোমবার উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেনের কাউন্টারে বেশি ভিড় দেখা যায়। পাশাপাশি জামালপুর হয়ে বাহাদুরাবাদের পথে ট্রেনের কাউন্টারেও ভিড় ছিল তুলনামূলক বেশি। তবে অপেক্ষা ও ভিড় থাকলেও টিকেট পাওয়ায় সন্তুষ্ট সবাই।

দেওয়ানগঞ্জে যাওয়ার জন্য তিস্তা এক্সপ্রেসের টিকিট কাটতে রোববার রাত ১০টা থেকে স্টেশনে আছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম। সকাল সোয়া ৯টার দিকে টিকিট পান তিনি।

তিনি বললেন, “বাস জার্নি করতে পারি না। এজন্য কষ্ট হলেও ট্রেনের টিকেটের জন্য এসেছি। কাঙ্খিত টিকেট পেয়ে ভালো লাগছে।”

সহজেই রাজশাহীর ধূমকেতু ট্রেনের টিকেট পেলেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সারওয়ার জাহান ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে রুবেল পারভেজও।

রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের চাহিদা ছিল আরও বেশি। ভোর সাড়ে ৪টা থেকে শান্তাহারের টিকেটের জন‌্য কমলাপুরে দাঁড়িয়ে থেকেও পাননি আরিফ হোসেন।

“শান্তাহারের টিকেট নাকি নেই। বাধ্য হয়ে চাটমোহরের টিকেট নিলাম।”

ওই কাউন্টারের কর্মী আনোয়ার জানালেন, রংপুরের টিকেট এখনো যথেষ্ট আছে। কিন্তু মাঝের স্টেশনগুলোর টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে।

নারীদের নির্ধারিত কাউন্টার থেকে বগুড়া যাওয়ার টিকেট কিনতে এসেছেন রিতা আক্তার।

ঈদ টিকেট পেয়ে স্বস্তির কথা জানালেন তিনি: “অন্য সময়ের চেয়ে এবার ভিড় কম মনে হচ্ছে। টিকেটও পেলাম সহজেই।”

চট্টগ্রামগামী সুর্বণ এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতী, সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেটের জন্য ৭ নম্বর কাউন্টারে কিছুটা ভিড় থাকলেও চট্টলা এক্সপ্রেস, উপকূল এক্সপ্রেসের টিকেটের জন্য ৮ নম্বর কাউন্টারে কাউকে দেখা যায়নি।

সকাল সাড়ে ৯টায় সিলেটের বিভিন্ন ট্রেনের জন্য নির্ধারিত ৯ নম্বর কাউন্টারেও কোনো যাত্রীকে দেখা যায়নি; কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের ট্রেনের নির্ধারিত ১১ ও ১২ নম্বর কাউন্টারও ছিল মোটামুটি ফাঁকা।

এই কাউন্টারের বিক্রেতা আল আমিন জানালেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ ভাগ টিকেট বিক্রি হয়েছে।

“ভিড় খুবই কম। লোকজনই তো নাই। এখনও অনেক টিকেট অবিক্রিত রয়েছে।”

ঢাকা কলেজের ছাত্র ইমরানুল করিম কাউন্টারের এসেছেন সকাল ৭টায়। সাড়ে ৮টায় মহানগর প্রভাতী ট্রেনের টিকেট কিনলেন তিনি।

“সকাল ৭টায় এসেছি। এখনই টিকেট পেলাম। সাধারণত এমন হয় না। ভিড় আরও বেশি থাকে।”

টিকেট বিক্রিতে রেলওয়ের ব্যবস্থাপনায় খুশি চট্টগ্রামের সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট কিনতে আসা জেসমিন হেলাল।

“আমি প্রতি ঈদেই ট্রেনে বাড়ি যাই। এবার ব্যবস্থাপনা খুব ভালো। সকাল সাড়ে ৬টায় এখানে এসেছি। পৌনে ৯টায় টিকেট পেলাম।”

সকাল ৯টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে আসেন রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন। স্টেশনের বিভিন্ন কাউন্টার ঘুরে দেখেন তিনি।

সকাল ৯টা পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার টিকেট বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার কয়েকটি ট্রেনে নতুন কোচ যুক্ত হওয়ায় ট্রেনে যাত্রী ধারণক্ষমতা বাড়বে।

“ঈদের আগে কয়েকটি ট্রেনে বাড়তি বগি যুক্ত হচ্ছে। এতে প্রায় ৩০ ভাগ ধারণ ক্ষমতা বাড়বে।”

ট্রেন টিকেট নিয়ে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না বলে দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা কালোবাজারি রোধে অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আমরা সবদিকে নজর রাখছি। কালোবাজারি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”

গত রোববার সংবাদ সম্মেলনে অগ্রিম টিকেট বিক্রির দিন ঘোষণা করেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক।

সে সময় তিনি জানান, রেলের বহরে থাকা এক হাজার ছয়টি কোচের সঙ্গে আরও ১৪০টি কোচ যোগ করা হয়েছে। এছাড়া নিয়মিতভাবে চলাচলকারী ২০২টি ইঞ্জিনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ১৮টি ইঞ্জিন।

ঈদের আগের টিকেট বিক্রির সূচি

টিকেট কেনা যাবে                       যাত্রার তারিখ

২৯ অগাস্ট                                            ৭ সেপ্টেম্বর

৩০ অগাস্ট                                            ৮ সেপ্টেম্বর

৩১ অগাস্ট                                             ৯ সেপ্টেম্বর

১ সেপ্টেম্বর                                            ১০ সেপ্টেম্বর

২ সেপ্টেম্বর                                            ১১ সেপ্টেম্বর

ঈদের পরে টিকেট বিক্রির সূচি

টিকেট কেনা যাবে                         যাত্রার তারিখ

৫ সেপ্টেম্বর                                            ১৪ সেপ্টেম্বর

৬ সেপ্টেম্বর                                            ১৫ সেপ্টেম্বর

৭ সেপ্টেম্বর                                            ১৬ সেপ্টেম্বর

৮ সেপ্টেম্বর                                            ১৭ সেপ্টেম্বর

৯ সেপ্টেম্বর                                            ১৮ সেপ্টেম্বর

৭ সেপ্টেম্বর থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত উপকূল এক্সপ্রেস, বিজয় এক্সপ্রেস ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস ছাড়া অন্য সব আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক বিরতি থাকবে না।

ঈদের তিন দিন আগ থেকে আগামী ৯, ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর এবং ঈদের পরের সাত দিন আগামী ১৪ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন জোড়া করে বিশেষ ট্রেন চলবে বলেও জানান রেলমন্ত্রী।

ঈদকে সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা রেল কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। রেল ভবনে একটি কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে, সেখান থেকে তারা দায়িত্ব পালন করবেন।