পেট্রোল পাম্পে ধর্মঘট শেষ, ভোগান্তিতে নগরবাসী

কমিশন বৃদ্ধি ও ইজারার মাশুল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরির মালিক ও শ্রমিকদের ডাকা নয় ঘণ্টার ধর্মঘট শেষ হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 August 2016, 09:09 AM
Updated : 28 August 2016, 10:14 AM

রোববার সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের ৫ হাজার ৬০০টি পেট্রোল পাম্পে জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ থাকায় অনেকে যানবাহন নিয়ে পাম্পে এসে তেল না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন।

গত ২০ আগস্ট শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে ১২ দফা দাবিতে রোববার সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সারাদেশে ধর্মঘটের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা।

রোববার সকাল রাজধানীর রমনা পেট্রোল পাম্পে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরি মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. নাজমুল হক দাবি করেন, বাধ্য হয়ে ধর্মঘট ডেকেছেন তারা।

“আমরা গত দুই বছর দেন-দরবার করেছি। ২০১৬ সালে এখন পর্যন্ত চারবার চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। গত সপ্তাহে কর্মসূচি ঘোষণার পরও কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।”

ধর্মঘটে ফলে জনসাধারণের ভোগান্তির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাজমুল বলেন, তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমাদের এ কর্মসূচি পূর্বঘোষিত। যাদের দরকার তারা গতকালই তেল নিয়ে নিয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলন চলার সময়ই রমনা পেট্রোল পাম্পে তেল নিতে আসে যানবাহনের চালকেরা; আসেন অনেক মোটরসাইকেল আরোহীও।

হাই কোর্টের আইনজীবী তুষার মাহবুব জানালেন তেল না পেয়ে তার ভোগান্তির কথা।

“পাম্পওয়ালারা স্ট্রাইক করেছে তা জানা ছিল না। তেল নিতে গিয়ে দেখি পাম্পগুলো বন্ধ। গাড়িতে একটুও তেল নেই। শাহবাগ থেকে ঠেলে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। এখানেও তেল নেই। মোটরসাইকেল যে কোথাও রেখে যাব তারও উপায় নেই।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের গাড়িচালক মো. নুরুল আমিনও পড়েছেন দুর্ভোগে: “কয়েকটা পাম্পে গেলাম। সবখান থেকে বলে দিচ্ছে তেল দেওয়া যাবে না। বেশ বিপাকে পড়ে গেলাম।”

পাম্প ছাড়াও এ সময় ট্যাংক লরির মাধ্যমে তেল উত্তোলন, পরিবহন এবং বিপণনও বন্ধ থাকে।

তবে দেশের সব পেট্রোল পাম্পে ধর্মঘট হয়নি বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পরিচালক (বিপণন) মীর আলী রেজা।

তিনি বলেন, “আমরা তাদের দাবিগুলো শুনেছি। এগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, তা আমাদের চেয়ারম্যান মহোদয় ভেবে দেখছেন। আমরা গত ১৫ তারিখে মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠকও করেছি। আশা করছি সুরাহা হবে।”

গত ২০ অগাস্ট রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে রোববারের কর্মবিরতির ডাক দেন ঐক্য পরিষদের নেতারা।

ধর্মঘটের কর্মসূচি ঘোষণার দিন সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা অভিযোগ করেন, তিন মাসের মধ্যে কমিশন বৃদ্ধিসহ নানা দাবি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও ছয় বছরেও তা মানা হয়নি। সম্প্রতি ১২ দফা দাবি আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে তিন বার চিঠি পাঠিয়েও কোনো লাভ হয়নি।

তাদের দাবি, গত কয়েক বছরে পেট্রোল পাম্প পরিচালনায় ব্যয় কয়েকগুণ বাড়লেও কমিশন বাড়ানো হয়নি। ২০১১ সালের হিসেবেই পাম্প মালিকদের কমিশন দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় কমিশন না বাড়লে পাম্প পরিচালনা করা সম্ভব নয়।

সড়ক ও মহাসড়কের পাশে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের জমি সংযোগ সড়ক হিসেবে ইজারা নিয়ে পেট্রোলপাম্পগুলো বসানো হয়েছে।

সওজের পক্ষ থেকে কয়েকবছর পরপর জমির ইজারা মাশুল বাড়ানো হচ্ছে বলে এটাকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।

বাঘাবাড়ি ডিপো বন্ধ

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ধর্মঘটের কারণে রোববার সকাল থেকে শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি ডিপো থেকে জ্বালানি উত্তোলন এবং জেলার সব পাম্পগুলো থেকে তেল বিক্রি বন্ধ ছিল।

তবে সিরাজগঞ্জে নবনির্মিত ফিলিং স্টেশনে চাঁদা দাবির প্রতিবাদে শনিবার থেকে চলা উত্তরবঙ্গ ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি তেল ডিপো থেকে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলা এবং টাঙ্গাইল ও জামালপুরে জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধের কর্মসূচি থাকায় এই এলাকায় তেল উত্তোলন ও সরবরাহ বন্ধই থাকবে।

সিরাজগঞ্জ তেল পাম্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন জানান, কমিশন বৃদ্ধিসহ ১২ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে রোববার সকাল থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার সমিতিভুক্ত ১৭টিসহ মোট ২৫টি পাম্প থেকে তেল বিক্রি এবং বাঘাবাড়ি ডিপো থেকে জ্বালানি উত্তোলন ও সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

উত্তরবঙ্গ ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহজাহান সিরাজ জানান, সিরাজগঞ্জের তাড়াশের খালকুলায় নবনির্মিত ফিলিং স্টেশন সম্প্রতি উদ্বোধনের পর থেকে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা চাঁদা দাবি করে আসছে। এর প্রতিবাদে শনিবার সকাল থেকে বাঘাবাড়ি ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

“আগামীকাল সোমবার প্রশাসনের সাথে বৈঠকের কথা রয়েছে। আশা করছি ওই বৈঠকেই বিষয়টির সমাধা হয়ে যাবে।”

যমুনা অয়েলের বাঘাবাড়ি ডিপোর ইনচার্জ আব্দুল মজিদ খান জানান, জ্বালানি পাম্প মালিক ও ট্যাংকলরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যৌথ কর্মসূচি কারণে রোববার সকাল থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলাসহ টাঙ্গাইল ও জামালপুরে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা কাজে যোগ না দেওয়ায় শনিবার সকাল থেকেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।