‘ধর্মীয় উগ্রবাদ রোধে নজরুল পাঠের বিকল্প নেই’

ধর্মীয় উগ্রবাদরোধ এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে দিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্মের প্রচারের কোনো বিকল্প নেই বলে অভিমত দিয়েছেন নজরুল গবেষক, সাহিত্যিক ও শিল্পীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2016, 02:37 PM
Updated : 27 August 2016, 02:37 PM

শনিবার বিকালে জাতীয় জাদুঘরে কবির ৪০তম প্রয়াণদিবসে এক অনুষ্ঠানে এমন অভিমত উঠে এসেছে। 

দুই দিনব্যাপী আয়োজনের মূল দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “নজরুল ইসলামকে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তার সেই সিদ্ধান্তটি ছিল অত্যন্ত দূরদর্শী।নজরুলের সৃষ্টির প্রভাব বিস্তৃত, নজরুলের সৃজনশীল জীবন ছিল মাত্র ২২ বছর। এ অল্প সময়ে তিনি যে কর্মযজ্ঞ রেখে গেছেন, তা অনন্য গল্প-কবিতা-উপন্যাসে সাবলীল গতিতে অসাধারণ মেধায় বাংলা সংস্কৃতিতে উপস্থাপন করেছেন।”

কবির নাতনি খিলখিল কাজী বলেন, “দাদু সারা জীবন মানুষ ও জীবনের জয়গান গেয়েছেন। সাম্যের গান গেয়ে তিনি জীবনভর ধর্মের উগ্রতার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তিনি অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা, সাহিত্যে ঘৃণা প্রকাশ করেছেন।”

নজরুলসংগীতের সঠিক স্বরলিপি প্রণয়নের মাধ্যমে নজরুল ইনস্টিটিউট নবপ্রজন্মের মধ্যে নজরুল চর্চাকে আরো বেশি বিকশিত করেছে বলে মন্তব্য করেন ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের এই সদস্য।

সংস্কৃতিসচিব আক্তারী মমতাজ বলেন, “এই প্রজন্মকে মানবিক মূল্যবোধে পুনরুজ্জীবিত করতে হলে নজরুলকে আরো বেশি করে জানতে হবে, তার সাহিত্যকর্মকে আরো বেশি চর্চা করতে হবে।”

এর আগে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ইকরাম আহমেদ, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে প্রবাসে নজরুল সাহিত্য গবেষণার নানা দিক তুলে ধরেন কবি সুফিয়া কামালের ছেলে সাজেদ কামাল, সাহিত্যকর্মের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন নজরুল ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক মো. আব্দুল কাইয়ুম।

ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এমিরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, “নজরুল সংগীত নিয়ে প্রতারণা চলছে। নজরুলের গানে নতুনভাবে সুরারোপের কথা বলে তারা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান নিচ্ছেন। কিন্তু আমি কপিরাইট আইন অনুযায়ী বলব- নজরুলের গানে নতুনভাবে সুরারোপের অধিকার কারো নেই।”

তিনি অভিযোগ করেন, “জাতীয় অর্থবছরের বাজেটে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জন্য যতটুকু বরাদ্দ আছে, তার সর্বনিম্ন বরাদ্দ নজরুল ইনস্টিটিউটের জন‌্য।”

অনুষ্ঠান শেষে নজরুল সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য শাহ্ সাদিয়া আফরিন মল্লিক ও নজরুল গবেষণায় অনন্য অবদানের জন্য গবেষক আবু হেনা আবদুল আউয়ালকে ‘নজরুল পুরস্কার-২০১৫’ প্রদান করা হয়।

সম্মাননা স্মারকের পাশাপাশি শিল্পীদের ১ লাখ টাকা সমমূল্যের একটি চেকও প্রদান করেছে নজরুল ইনস্টিটিউট।  

কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪০তম প্রয়াণবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করে।

সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে নজরুল ইসলামের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়কবি পরিবারের সদস্য, ভক্ত, অনুরাগী ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। এ সময় তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ হয়।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরাও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কবির প্রতি। পাশাপাশি তারা নজরুল সাহিত্যকে পাঠ্যপুস্তকে আরো গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

শ্রদ্ধানিবেদন শেষে উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “শুধু সিলেবাসে কিংবা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে নয়, নজরুলকে চেতনাকে ধারণ করতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে নজরুলের দর্শন উপস্থাপনের দায়িত্ব নিতে হবে। অন্যায়, অপরাধ, দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা রুখে দিতে নজরুলের চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে।”

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

এ ছাড়াও কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, শিশু একাডেমি, নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পরিষদ, নজরুল সঙ্গীত সংস্থা, নজরুল ইনস্টিটিউট, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, নজরুল একাডেমি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, আন্তর্জাতিক নজরুল চর্চা কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

শিল্পকলা একাডেমি

সন্ধ্যায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমি।

দুই পর্বে বিভক্ত অনুষ্ঠানমালার প্রথম পর্বে ছিল নজরুল বিষয়ক আলোচনা। এই পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব আকতারী মমতাজ। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ।