আত্মসমর্পণের আহ্বানে উল্টো গুলি-গ্রেনেড ছুড়েছিলেন তামিম: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় অভিযান শুরুর আগে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হলেও জঙ্গিরা সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2016, 07:27 AM
Updated : 27 August 2016, 07:36 AM

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অভিযান শেষের পর জানানো হয়, ওই আস্তানায় পুলিশের গুলিতে ‘নব‌্য জেএমবি’র প্রধান গুলশান হামলার ‘হোতা’ তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন।

অভিযান শেষে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, “তাদের সারেন্ডার করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাতে সাড়া না দিয়ে গ্রেনেড এবং গুলির মাধ্যমে তারা তাদের আত্মপ্রকাশ করেছিল।

“পুলিশ এবং সোয়াট বাহিনী চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে পরে ফায়ার ওপেন করে।”

ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হকও সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গিরা ‘আক্রমণাত্মক’ ছিল।

“আমি তাদের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছিলাম। তাদের বলা হয়েছিল, তারা যেন হাত উঁচু করে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। অর্থাৎ তাদেরকে স‌্যারেন্ডার করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেই সুযোগ তারা গ্রহণ না করে পুলিশের দিকে ৪-৫টি গ্রেনেড ছোড়ে ও গুলি চালায়। পুলিশ বাধ্য হয়ে অ্যাকশনে গেছে।”

অভিযানে থাকা ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জঙ্গিরা প্রচুর গুলি ছুড়ছিল, কল‌্যাণপুরের চেয়েও এখানে গুলি ছুড়েছিল বেশি। তারা ছয়টি গ্রেনেড ছুড়েছিল।”

তিনি জানান, দুটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়েছে, দুটি অবিস্ফোরিত অবস্থায় বাড়িটিতে ছিল, দুটি পাশের বাড়ির চালে পাওয়া গেছে।  

পাইকপাড়ার কবরস্থান এলাকার তিন তলা ওই বাড়িটি ভোরে ঘিরে ফেলে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস‌্যরা। পরে র‌্যাবসহ অন‌্য বাহিনীগুলোও অভিযানে যোগ দেয়।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ ভবনটির ভেতরে ঢুকতে অভিযান শুরু করে, যাকে ‘হিট স্ট্রং টোয়েন্টি সেভেন’ নাম দেওয়া হয়েছে। আশপাশের এলাকা ঘিরে রাখায় কাউকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয় নি।

আইজিপি বলেন, “আমাদের যারা স্নাইপার ছিল, তারা পাশের বিল্ডিং থেকে ফায়ার করেছে।

“মূল অপারেশন হয়েছে এক ঘণ্টা। অপারেশন শেষে আমরা ভেতরে ঢুকে দেখতে পাই তিনজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের চেহারা তামিম চৌধুরীর যে ছবি আমাদের কাছে আছে, তার সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে। এতে স্পষ্ট সে তামিম চৌধুরীই হবে।”

তিনজনই কি পুলিশের গুলিতেই নিহত হয়েছেন- জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, “অভিযান চালিয়েছে পুলিশ, তো পুলিশের গুলিতে মারা যাবে না তো কি আপনার গুলিতে মারা যাবে?”

গোয়েন্দা কর্মকর্তা ছানোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘরের দরজার কাছে দুজনের লাশ পড়েছিল, তামিমের লাশ ছিল ঘরের ভেতরে। তামিমের কাছে গ্রেনেড এবং বাকি দুজনের একজনের কাছে এ কে-২২ রাইফেল এবং পিস্তল ছিল। 

নিহতদের মধ‌্যে বাকি দুজনের পরিচয় এখনও জানা না গেলেও একজন জঙ্গি দলটির ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কেউ বলে ধারণা পুলিশ কর্মকর্তা ছানোয়ারের।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, “মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী এই অভিযানে নিহত হয়েছে এবং তার সঙ্গে তার দুই সহযোগী… তাদের পরিচয় আমরা ইনভেস্টিগেশনের পরে জানাব। আমরা মনে করি, তামিম চৌধুরীর সবচেয়ে বড় সহযোগী এখানে নিহত হয়েছে।”

অভিযানের সময় ভবনে জঙ্গি ছাড়া আর কেউ ছিল কি না- প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ প্রধান বলেন, “আমরা তো এই তিনজন ছাড়া আর কাউকে পাইনি। অপারেশন শুরুর আগে আমরা নিশ্চিত হয়েছি জঙ্গি ছাড়া আর কোনো পুরুষ, নারী কিংবা শিশু রয়েছে কি না। নিশ্চিত হওয়ার পরেই আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি।”

তামিম আহমেদ চৌধুরী

গুলশান হামলার পর কল‌্যাণপুরে যে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নয়জন নিহত হন, সেখানেও তামিম কিছু দিন ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছিল।

আইজিপি বলেন, “কল্যাণপুরের ঘটনার পরে ওষুধ ব্যবসায়ীর পরিচয়ে তারা এই বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল। প্রায় এক মাস আগে তারা এই বাসাটি ভাড়া নেয় বলে আমরা জানতে পেরেছি।”

গ্রেপ্তার জেএমবির এক সদস‌্যের কাছ থেকে পাইকপাড়ার আস্তানাটির খোঁজ মেলে বলে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান।

আইজিপি বলেন, “আমরা ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে খবর পাই, তামিম চৌধুরী নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ডিএমপির সিটি ইউনিট ও সোয়াট টিমসহ এখানে আমরা অভিযানে আসি। লোকাল পুলিশ, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ, সিটি ইউনিট ও সোয়াট এই অপারেশন করে।”

কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি তামিম (৩০) গুলশান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বলে পুলিশ দাবি করে আসছিল। তাকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা ছিল। আইজিপি বলেছিলেন, তামিম ‘নতুন জেএমবি’র প্রধান।  

২০১৩ সালে আসার পর তামিম দেশেই রয়েছেন ধরে নিয়ে অভিযান চালাচ্ছিল পুলিশ।

শহীদুল বলেন, “তামিম চৌধুরী সিরিয়াতে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল। গুলশান হামলা, শোলাকিয়ার ঘটনাসহ যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, সবগুলো তামিমের নেতৃত্বে নিউ জেএমবি ঘটিয়েছে।

“আমরা মনে করি, তামিম চৌধুরীর চ্যাপ্টার এখানে শেষ হয়েছে। বাকি যে জঙ্গিরা রয়েছে তাদের আমরা শিগগিরই ধরতে পারব,” বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।