ফুলবাড়ীর শিক্ষায় রামপাল আন্দোলন সফলের ডাক

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত কয়লা খনির বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে ‘শিক্ষা নিয়ে’ রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী আন্দোলন ‘সফল’ করার অঙ্গীকার করেছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2016, 09:54 AM
Updated : 26 August 2016, 02:35 PM

ফুলবাড়ী আন্দোলনের দশক পূর্তিতে শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে সেই আন্দোলনে নিহতদের স্মরণ করার পর এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এই প্রত‌্যয় জানানো হয়। 

জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সমাবেশে বলেন, “কোনো ন্যায্য সংগ্রাম কখনো বিফলে যায় না, ফুলবাড়ীতে সেটা প্রমাণিত হয়েছে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সুন্দরবনে বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী আন্দোলন এগিয়ে নিতে হবে।”

বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার আমলের শেষ দিকে ২০০৬ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত কয়লা খনির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে হাজার হাজার মানুষ।

তাদের দাবি ছিল, ফুলবাড়ী কয়লা খনির জন‌্য এলাকাবাসীকে জমি-জমা ও বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না; উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা আহরণ করা চলবে না। কয়লা খনি প্রকল্প বাতিল করতে হবে এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত বিদেশি ঠিকাদার এশিয়া এনার্জিকে ওই এলাকা থেকে চলে যেতে হবে।

ওই আন্দোলনের মধ‌্যে ২৬ অগাস্ট তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির মিছিল-সমাবেশে গুলি চালায় পুলিশ। এতে নিহত হন তিনজন, আহত হন অনেকে।

সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনরত শত শত মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সাধারণ মানুষ ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়ক ও রেললাইন অবরোধ করে টানা বিক্ষোভ শুরু করলে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ওই জনপদ।

অবশেষে ৩০ অগাস্ট আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়। সে চুক্তির মূল কথা ছিল- ফুলবাড়ী থেকে এশিয়া এনার্জিকে প্রত্যাহার করা হবে। বন্ধ করা হবে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা আহরণ।

সেই থেকে ফুলবাড়ীতে গুলি করে হত‌্যার দিনটি ‘জাতীয় সম্পদ রক্ষা দিবস’ হিসেবেও পালন করে থাকে বিভিন্ন সংগঠন।

জাতীয় কমিটি ছাড়াও সিপিবি, বাসদ (মার্ক্সবাদী), বাসদ (খালেকুজ্জামান), ওয়ার্কার্স পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, গণসংহতি আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন বাম সংগঠন শুক্রবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ফুলবাড়ী আন্দোলনের সংগঠক নূর মোহাম্মদ বলেন, “বিএনপি সরকার কোনো ধরনের উসকানি ছাড়া ফুলবাড়ীর সমাবেশে পেছন থেকে গুলি করেছিল, হত্যা করেছিল। কোনো ধরনের উসকানি থাকলে হয়তো একটা কিছু বুঝতাম, যদিও গুলি করার কোনো অজুহাত থাকতে পারে না। ওই আন্দোলনে উসকানির অজুহাতও ছিল না সরকারের সামনে।”

তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার প্রত‌্যয় জানিয়ে বলেন, “ফুলবাড়ীতে বিজয়ের কথা শুধু স্মরণে করে আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে চলবে না।”

অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, “ফুলবাড়ী আন্দোলনে তিনটি বিষয় ছিল, যেগুলো থেকে শিক্ষা নিলে রামপালের আন্দোলনও সফল হবে। প্রথমত, ফুলবাড়ীতে জনগণকে ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করা গিয়েছিল ও তারা তাদের স্বার্থ যথাযথভাবে বুঝতে পেরেছিলেন। দ্বিতীয়ত, সমগ্র জাতি ওই আন্দোলনের পক্ষে ছিল। এবং তৃতীয়ত, শাসক শ্রেণি দু’ভাগে বিভক্ত ছিল, ক্ষমতার বাইরের অংশ আওয়ামী লীগ আন্দোলনের পক্ষে এবং ক্ষমতাসীন বিএনপি বিপক্ষে ছিল।”

আর রামপাল আন্দোলনের পরিস্থিতি ব‌্যাখ‌্যা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির এই শিক্ষক বলেন, “রামপাল ইস্যুতে ক্ষমতার বাইরের অংশ বিএনপি আন্দোলনের পক্ষে আছে; কিন্তু ওই এলাকার জনগণকে সেভাবে উদ্বুদ্ধ করে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা যায়নি। তাদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।”

ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করেছে সরকার, যা নিয়ে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি এবং পরিবেশবাদীদের এক অংশের আপত্তি।

তাদের আশঙ্কা, ওই এলাকায় তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে তা বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশকে হুমকিতে ফেলবে। অন‌্যদিকে সরকার বলছে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব‌্যবহার করে দূষণের মাত্রা ন‌্যূনতম রেখেই এ বিদ‌্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে।

সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্সের পরিচালনায় শহীদ মিনারের সমাবেশে অন‌্যদের মধ‌্যে কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বক্তব‌্য দেন।