জন্মাষ্টমীতে জঙ্গি নির্মূলে ঐক্যের ডাক

হিন্দু সন্ন্যাসী হত্যার পাশাপাশি ঈদ জামাতে জঙ্গিদের হামলার কথা উল্লেখ করে সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের এক নেতা বলেছেন, এদের কোনো ধর্ম নেই।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2016, 02:48 PM
Updated : 25 August 2016, 04:43 PM

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সব ধর্মের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

শ্রীকৃষ্ণের জন্মবার্ষিকীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় উৎসব জন্মাষ্টমীর কেন্দ্রীয় শোভাযাত্রার উদ্বোধনীতে একথা বলেন তিনি।

ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির আয়োজনে বৃহস্পতিবার বিকালে পলাশী মোড়ে এই শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়।

শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল বলেন, “সাম্প্রদায়িক শক্তি আমাদের সন্ন্যাসী হত্যা থেকে শুরু করে শোলাকিয়ার ঈদ জামাতেও হামলা চালায়। তাদের কোনো ধর্ম নাই। তাদের বিরুদ্ধে আমরা সকল ধর্মের লোকই ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।”

মন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, বাংলাদেশ মূল্যবোধগতভাবে অসাম্প্রদায়িক দেশ হলেও সেটাকে নস্যাৎ করার কাজ অনেক সময় ধরে চলেছিল।

“বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল, তারা সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক জোট করেছিল। তাদের ছড়ানো সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প এখন আমাদের ওপর জঙ্গি হিসাবে আবির্ভুত হয়েছে।”

সেই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। তার নেতৃত্বেই আমাদের সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করতে হবে। যে অসাম্প্রদায়িক মূল নীতির ওপর বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল, সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

তিনি বলেন, “অসুরকে বধ করে ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য যুগে যুগে বিভিন্ন জাতিতে বিভিন্ন দেশে এমনি ধরনের মহাপুরুষের আবির্ভাব হয়, যারা সাধারণ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। দুষ্টকে দমন করে ন্যায়নীতির প্রচার ও কল্যাণকর কাজ করেন, এমনিভাবে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব হয়েছিল।”

মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, “যারা রাজনীতিতে পরাজিত হয়ে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদে জড়িত হয়েছেন তাদের বলব, সেখান থেকে ফিরে এসে রাজনীতি ও অর্থনীতির মূলধারায় ফিরে আসুন। প্রধানমন্ত্রী বলে থাকেন, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’, আজকের এই জন্মাষ্টমীর আয়োজনে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের উপস্থিতিতে তার বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।”

পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেন, “হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সকলের এই বাংলাদেশ। হাজার বছর ধরে এটা প্রমাণ হয়েছে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক দেশ এটা। মাঝেমধ্যে কিছু লোক সেই সম্প্রীতিকে নষ্ট করতে চায়। কিন্তু জনগণ সব সময় সেটাকে প্রতিহত করে দিয়েছে।”

সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের বিরুদ্ধেও জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তাদের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নাই। এ কারণে সবগুলো ঘটনায় জড়িত সকলকে আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। তাদের বিচারের মুখোমুখি করার কাজ করছি আমরা।”

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠান শেষে বের হওয়া শোভাযাত্রায় অংশ নেন নানা সাজের হাজারো মানুষ।  নেচে-গেয়ে কৃষ্ণের জন্মদিন উদযাপন করেন তারা। কয়েকশ ট্রাকের বহরের পাশাপাশি পায়ে হেঁটে ঢোলের বাদ্য আর গানের তালে এগিয়ে চলে শোভাযাত্রা।

শোভাযাত্রার সামনের অংশে প্রথম দিকে শ্রীকৃষ্ণের সাজ নিয়ে হাতির পিঠে চড়া ব্যক্তিও সেখানে বাড়তি অনুষঙ্গ যোগ করেন।

বাংলাদেশ সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন দীপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পলাশী থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, হাই কোর্ট, বঙ্গবাজার, গোলাপ শাহ মাজার, নবাবপুর রোড হয়ে বাহাদুর শাহ পার্কে পৌঁছে শেষ হয় এ শোভাযাত্রা।