ঢাবিতে ইতিহাস বিকৃতি: দেড় মাসেও বসেনি তদন্তকারীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মরণিকায় ইতিহাস বিকৃতিতে বিক্ষোভের মুখে রেজিস্ট্রারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া সৈয়দ রেজাউর রহমান চাকরিতে বহাল রয়েছেন।

মাসুম বিল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2016, 01:48 PM
Updated : 24 August 2016, 01:57 PM

এদিকে ঘটনার পর দেড় মাসের বেশি পার হলেও এখনও কার্যত তদন্ত কাজ শুরু করেনি কর্তৃপক্ষের করা তদন্ত কমিটি।

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে আসার আগে রেজাউর রহমান যে দপ্তরে ছিলেন সেই ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরে যোগ দিয়ে বর্তমানে তিনি ছুটিতে আছেন বলে জানা গেছে।

গত ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মরণিকায় ‘স্মৃতি অম্লান’ শিরোনামে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর বর্ণনা দিতে গিয়ে জিয়াউর রহমান হলের ক্ষেত্রে জেনারেল জিয়াকে ‘বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনাপ্রধান ও মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।

আর বঙ্গবন্ধু হল ও বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে স্মরণিকার অষ্টাদশ পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে লেখা হয়, তিনি “বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক নেতা, যিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব এবং বাংলাদেশের জাতির জনক হিসেবে বিবেচিত।”

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বিষয়টি প্রকাশিত হলে প্রতিবাদের মুখে সেখানে সেটি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এরপর ছাত্র বিক্ষোভের এক পর্যায়ে ক্রোড়পত্র প্রকাশের দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রেজাউর রহমানকে অব্যাহতির ঘোষণা দেন তিনি।

তাতেও মানছিলেন না বিক্ষুব্ধরা; উপাচার্যের উপস্থিতিতে তার গাড়িতে হামলার পর বাসভবন ঘিরে অবস্থান ও ফটকে তালা লাগিয়ে দেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য আরেফিনের নাম ধরে ‘রাজাকার’ স্লোগানও দেওয়া হয় ওই সমাবেশ থেকে।

এরপর এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসে ওই আন্দোলনের অবসান হয়।

এরপর ২১ জুলাই ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দিনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ সিন্ডিকেট।

তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক কামাল বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। আমি কিছুদিন বিদেশে ছিলাম, এখন আরেকজন সদস্য দেশের বাইরে রয়েছেন। তবে উনি দেশে না ফিরলেও আমরা বসতে পারি।”

খুব শিগগির কমিটি তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে বৈঠকে বসবে বলে জানান তিনি।

সৈয়দ রেজাউর রহমানের চাকরির বিষয়ে টিএসসির ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদান দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক শাহিন ইসলাম বলেন, “যেহেতু উনি (রেজাউর রহমান) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন, সেহেতু ওই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর এখানে স্বাভাবিকভাবে তার যোগদান হয়ে যায়।

“যোগদান করার কিছু এখানে নেই। এখন তিনি ছুটিতে আছেন।”

এক দফা ছুটির মধ্যে সৈয়দ রেজাউর রহমান ছুটি বাড়ানোর জন্য আরেকটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারপর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে আসা এনামুজ্জামান।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “আগের দপ্তরে যোগ দিয়ে এখন তিনি ছুটিতে আছেন।”

তদন্ত কমিটির কাজ শুরু না করার বিষয়ে তিনি বলেন, “তদন্ত কমিটি তাদের তথ্যানুসন্ধানে সময় নিচ্ছে। কমিটির প্রধান বেশ কিছু দিন দেশের বাইরে ছিলেন। এখন তদন্ত করলে আমরা পরবর্তীতে দেখব।”

বিএনপির আমলে উপাচার্য পদে নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজের সময়ে ২০০৭ সালে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের পদে আসেন সৈয়দ রেজাউর রহমান। এর আগে টিএসসির উপ-পরিচালক ছিলেন তিনি।

ক্ষমতার পট পরিবর্তনে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ওই বছর ১৫ জানুয়ারি উপাচার্য পদে আসেন অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার পদে রেজাউরের ওপরই আস্থা রাখেন তিনি।