গৃহকর্মী হ্যাপিকে ‘ম্যানেজ’ করেছেন ক্রিকেটার শাহাদাত

ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে নির্যাতন মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে কোনো অভিযোগ করেনি গৃহকর্মী মাহফুজা আক্তার হ্যাপি (১১)।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 August 2016, 01:02 PM
Updated : 26 August 2016, 07:32 AM

বুধবার ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে তার সাক্ষ্য গ্রহণের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলী আসগর স্বপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেন, হ্যাপির জবানবন্দিতে বোঝা গেছে, সে ও তার আত্মীয়-স্বজনকে ‘ম্যানেজ করে ফেলেছেন’ শাহাদাত।

সাক্ষ্য গ্রহণের সময় জবানবন্দিতে শাহাদাত ও তার স্ত্রী জেসমিন জাহান নিত্যর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না করে হ্যাপি বলে, তার আঘাত ছিল দুর্ঘটনা বশত। অতীতে তাদের বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ও ডাক্তারের কাছে কিছু বলেছে কি না- তাও মনে নেই বলে জবানবন্দিতে বলেছে সে।

এর আগে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকার মহানগর হাকিম স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তীর আদালতে জবানবন্দিতে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছিল হ্যাপি।

সংশ্লিষ্ট আদালতের পুলিশ কর্মকর্তা এসআই নবী হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “ক্রিকেটার শাহাদাত রুটি বানানোর বেলন দিয়ে বারবার পিটিয়ে পরে আঘাতের স্থানে বরফ লাগাতেন বলে হ্যাপি জবানবন্দিতে আদালতে জানিয়েছেন।

“চোখের উপর অংশে বেশ কয়েকবার বেলন দিয়ে পেটানো হয়েছে বলেও আদালতকে জানিয়েছে সে।”

বুধবার ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ছিল হ্যাপির। এর আগে ১৭ অগাস্ট এ আদালতে সাক্ষ্য দেন শাহাদাত ও তার স্ত্রী নিত্য।

হ্যাপি আসামির পক্ষে জবানবন্দি দেওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলী আসগর স্বপন তাকে ‘বৈরী ঘোষণা করেন’।

পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “জবানবন্দিতে বোঝা গেছে, হ্যাপি ও তার আত্মীয়-স্বজনকে শাহাদাত ম্যানেজ করে ফেলেছে। তাছাড়া তার পক্ষ নিয়ে সাক্ষ দেবে কেন?”

সাক্ষ্য গ্রহণের সময় জবানবন্দিতে হ্যাপি বলেছে, “শাহাদাতের বাসায় সাত মাস কাজ করেছি। আমার কাজ করতে ভালো লাগত না। শাহাদাতের স্ত্রী আমাকে বকাঝকা করত। আসামিদের মধ্যে কেউই খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেয় নাই। দুর্ঘটনাবশত পড়ে গিয়েছিলাম, আমার পা ভেঙ্গে গিয়েছিল, তাই চিকিৎসা করাই।”

হ্যাপির মামা মো. সোহাগও এদিন সাক্ষ্য দেন।

তাদের জবানবন্দির পর বিচারক তানজিনা ইসমাইল আগামী ৩১ অগাস্ট বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন রাখেন।

ঢাকার মহানগর হাকিম স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তীর আদালতের মতো মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটকেও একই জবানবন্দি দিয়েছিল হ্যাপি।

তবে বুধবার দেওয়া জবানবন্দিতে এই শিশু বলেছে, “মামলার সময় মানুষের পরামর্শ মান্য করেছি। আমাকে ঘটনার বিষয়ে কেউ জিজ্ঞাসাবাদ করে নাই (অর্থাৎ আইও এবং ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি)। আমি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডাক্তারের কাছে কিছু বলেছি- কি না আমার মনে নাই।”

এদিকে বুধবারও আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন মামলার বাদী সাংবাদিক খন্দকার মোজাম্মেল হক।

গত ১৭ তারিখের শুনানিতেও ছিলেন না তিনি। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী হাজির না হওয়ায় সেদিন তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলী আসগর স্বপন ও আসামিপক্ষের আইনজীবী নজিবুল্লাহ হিরু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, বাদী আসলে বিচার এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন।

গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার পল্লবীর সাংবাদিক কলোনির সড়কে ওই শিশু গৃহকর্মীকে অচেতন অবস্থায় পাওয়ার পর তাকে থানায় নিয়ে গিয়েছিলেন সাংবাদিক মোজাম্মেল।

ঘটনা শুনে তিনি বাদী হয়ে জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার শাহদাত ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর পুলিশ মিরপুর ২ নম্বর সেকশনের বাসা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। 

তারপর ১৩ সেপ্টেম্বর ১১ বছর বয়সী ওই গৃহকর্মী নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেয়।

তদন্ত শেষে ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুর রহমান আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

এই মামলায় শাহাদাত ও নিত্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ ১৪ এবং সর্বনিম্ন ৭ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

গ্রেপ্তারের পর কিছু দিন কারাগারে থাকার পর ডিসেম্বরেই কারামুক্ত হন শাহাদাত ও তার স্ত্রী।

এই ঘটনার পর জাতীয় ক্রিকেট দলে আর স্থান হয়নি শাহদাতের।