নিজাম হাজারীর সাংসদ পদ নিয়ে রায় ফের পেছাল

ফেনীর আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারীর সংসদ সদস্য পদে থাকা, না থাকা প্রশ্নে উচ্চ আদালতের রায় ঘোষণা ফের এক সপ্তাহ পিছিয়ে গেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2016, 10:17 AM
Updated : 23 August 2016, 10:17 AM

নিজাম হাজারীর ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে যে রিট আবেদন হয়েছিল, হাই কোর্ট তার রায় দেবে আগামী ৩০ অগাস্ট।

বিচারপতি মো. এমদাদুল হক ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের বেঞ্চ মঙ্গলবার রায় ঘোষণার দিন মঙ্গলবার ফের শুনানি নিয়ে নতুন দিন ঠিক করে দেয়।

নিজাম হাজারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, “সাজা যতটুকু খাটার কথা ছিল আমার মক্কেল তার চেয়ে বেশি খেটেছেন। বিষয়টি আমরা আদালতে বলেছি। আদালত আগামী মঙ্গলবার রায় দেবে বলেছে।”

ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারী ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

‘সাজা কম খেটেই বেরিয়ে যান সাংসদ’ শিরোনামে ২০১৪ সালের ১০ মে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে তার ওই পদে থাকার বৈধতা নিয়ে ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া রিট আবেদনটি করেন।

রিট আবেদনকারীর যুক্তি, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, কোনো ব্যক্তি যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তাহলে মুক্তির পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না।

২০০০ সালের ১৬ অগাস্ট অস্ত্র আইনের এক মামলায় দুটি ধারায় ১০ বছর ও সাত বছর কারাদণ্ড হয় নিজাম হাজারীর, যা আপিলেও বহাল থাকে।

সে হিসেবে নিজাম হাজারী ২০১৫ সালের আগে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য না হলেও তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সাংসদ হয়ে যান বলে অভিযোগ করা হয় রিট আবেদনে।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ৮ জুন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে রুল জারি করে।

নিজাম হাজারী কোন কর্তৃত্ববলে ওই আসনে সংসদ সদস্য পদে আছেন এবং ওই আসনটি কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় রুলে৷ পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনাও দেয় আদালত।

ওই রুলের উপর শুনানি গ্রহণে গতবছরের ১২ নভেম্বর হাই কোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চের এক বিচারপতি এবং পরে ২ ডিসেম্বর অন্য একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিব্রতবোধ করে।

প্রধান বিচারপতি এরপর বিষয়টি শুনানির জন্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হকের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চে পাঠান। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি হাই কোর্টে রুলের উপর শুনানি শুরু হয়।

শুনানিকালে ৩০ মার্চ হাই কোর্ট নিজাম হাজারীর কারাবাসের সময় ও রেয়াতের বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। সেইসঙ্গে নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে করা মামলার রায় ও নথিপত্র ৩০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে বলে।

এরপর ২৬ মে অপর এক আদেশে হাই কোর্ট অস্ত্র মামলায় নিজাম হাজারীর কারাবাসের সময় ও রেয়াতের বিষয় তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে কারা মহাপরিদর্শককে (আইজি-প্রিজন্স) নির্দেশ দেয়।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুর রহমান চৌধুরী টিকু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রথম প্রতিবেদনটি জমা পড়ার পর তাতে কিছু অষ্পষ্টতা থাকায় নিজাম হাজারীর সাজা ভোগ ও রেয়াত বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে আইজি-প্রিজন্সকে নির্দেশ দেওয়া হয়। 

এ নির্দেশনা অনুসারে আইজি-প্রিজন্সের দেওয়া প্রতিবেদন ১৯ জুলাই আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ বছরের সাজার মধ্যে নিজাম হাজারী সাজা খেটেছেন ৫ বছর ৮ মাস ১৯ দিন। কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাজা রেয়াত পেয়েছেন ১ বছর ৮ মাস ২৫ (৬২৫ দিন)। রেয়াতসহ মোট সাজা ভোগ করেছেন ৭ বছর ৫ মাস ১৪ দিন। এখনো সাজা খাটা বাকি আছে ২ বছর ৬ মাস ১৬ দিন।

রুলের ওপর শুনানি শেষে হাই কোর্ট গত ৩ অগাস্ট রায়ের দিন ঠিক করে দেয়। কিন্তু আদালত নতুন করে নথি চাওয়ায় ১৭ অগাস্ট রায় এক সপ্তাহ পিছিয়ে মঙ্গলবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল। এদিন আবার শুনানি করে আরও পরবর্তী মঙ্গলবার দিন ঠিক করে দিয়েছে আদালত।

আদালতে রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম কামরুল হক সিদ্দিকী ও সত্য রঞ্জন মণ্ডল। নিজাম হাজারীর পক্ষে লড়েন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও নুরুল ইসলাম সুজন এমপি। রাষ্ট্রপক্ষ ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুর রহমান চৌধুরী টিকু।