ঝুলে আছে হাসিনা হত্যাচেষ্টার ৪ মামলার বিচার

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলা ছাড়াও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, তার চারটির বিচার শেষ হয়নি বহু বছরে।

প্রকাশ বিশ্বাসপ্রকাশ বিশ্বাসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 August 2016, 11:42 AM
Updated : 22 August 2016, 03:02 AM

এর মধ্যে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভার মঞ্চের পাশে বোমা পেতে রাখাসহ দুটি মামলা দায়েরের পর পেরিয়ে গেছে ১৬ বছর। আর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে ফ্রিডম পার্টির সদস্যদের হামলার ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল ২৭ বছর আগে।

শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ তিন দফায় ক্ষমতায় এলেও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা এসব মামলার বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে পারেননি।

চার মামলাতেই বিস্ফোরক, বিশেষ ক্ষমতা আইনের ধারায় অভিযোগ থাকলেও সেগুলোর মূল প্রতিপাদ্য শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা।

কোটালীপাড়ার দুই মামলায় কয়েক মাস ধরে বিচারে কিছুটা গতি এসেছে। তবে একদম থেমে গেছে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে ফ্রিডম পার্টির হামলার ঘটনার দুই মামলা।

কোটালীপাড়ার দুই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য চলছে ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যু নালে। অন্য  ঘটনার মামলা রয়েছে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে।

কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখার মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মীর মহিউদ্দিনের গত ১৪ অগাস্ট ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল।

‘ঠিকঠাক’ সাক্ষ্য দিতে না পারায়, বার বার ‘মনে নেই’ বলায় বিচারক মমতাজ বেগম তাকে ভর্ৎসনাও করেন।

এ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি শামসুল হক বাদল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাক্ষী না আসাসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন মামলাটির কার্যক্রমে গতি ছিল না। সম্প্রতি দুটি মামলাতেই কিছুটা গতি এসেছে।

এ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালেই ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার অন্য মামলার বিচার চলছে বলে শামসুল হক বাদল জানান।

গোপালগঞ্জ শহরে মুফতি হান্নানের সোনার বাংলা সাবান কারখানা থেকে বোমা তৈরির মাল-মসলা উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা হয় ওই মামলা।

২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয় মাঠে শেখ হাসিনার ভাষণের জন্য মঞ্চ নির্মাণের সময় মাঠের উত্তর পাশের একটি দোকানের সামনে থেকে পুঁতে রাখা ৭৬ কেজি বোমা উদ্ধার করা হয়। দুই দিন পর ওই মাঠেই জনসভায় ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল শেখ হাসিনার।

ওই ঘটনায় কোটালীপাড়া থানার উপ পরিদর্শক নূর হোসেন বাদী হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেন।

স্পর্শকাতর ও আলোচিত এ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের আদালত থেকে ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। পরে তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে পাঠানো হয় দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে।

২০১০ সালের অক্টোবরে তিন নম্বর ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের একজন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হলেও দুই নম্বর ট্রাইব্যুনালে প্রায় দুই বছরে একজনেরও সাক্ষ্য হয়নি।

মামলায় ২৫ আসামির মধ্যে জঙ্গি সংগঠন হুজির নেতা মুফতি হান্নানসহ নয়জন কারাগারে, একজন জামিনে এবং ১৫ জন পলাতক রয়েছেন।

ফ্রিডম পার্টির হামলা

এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৯ সালের ১০ আগস্ট মধ্যরাতে ঢাকার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধু ভবনে হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।

ওই ঘটনায় বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ধানমণ্ডি থানায় দুটি মামলা করেন।

এজাহারে বলা হয়, ফ্রিডম পার্টির সদস্য কাজল ও কবিরের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল ৩২ নম্বরের বাড়িতে অতর্কিতে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলা করে। হামলাকারীরা তখন ‘কর্নেল ফারুক-রশিদ জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দেয়।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মামলাটির তদন্ত গতি পায়। এরপর ১৯৯৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সিআইডি তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র দেয়।

ফ্রিডম পার্টির নেতা ও বঙ্গবন্ধুর খুনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আবদুর রশিদ, মেজর (অব.) বজলুল হুদাসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয় দুই মামলার অভিযোগপত্রে।

এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের বাকি মেয়াদে এবং পরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময় মামলার কার্যক্রম আর এগোয়নি।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৫ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ও বিচারকাজ শুরু হয়।

ওই বছর ২৭ অগাস্ট মামলার বাদী পুলিশের হাবিলদার জহিরুল হক সাক্ষ্য দেন। তখন তিনি বরিশাল মহানগর পুলিশে কর্মরত।

২০১৩ সালের ২ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির খালেকুজ্জামান সাক্ষ্য দেন। আবারও তাকে সাক্ষী হিসেবে ডাকা হলে ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বরে তিনি সাক্ষ্য দেন।

বর্তমানে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা দুটি বিচারাধীন।

এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি এবিএম বশীর উদ্দিন মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিদেশে পলাতক এ মামলার আসামি নাজমুল মাকসুদ মুরাদকে ২০১৪ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

“এ কারণে মামলার বাদী হাবিলদার জহিরুল হক ও তদন্তকারী কর্মকর্তা খালেকুজ্জামানকে আবারও তলব করে আদালত। কিন্তু তারা সাক্ষ্য দিতে আসছেন না।”

ওই আদালতের অতিরিক্ত পিপি সাইফুল ইসলাম হেলাল বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি দুই মামলাতেই সাক্ষী হাজির করতে। সাক্ষী আনা গেলে মামলার বিচার আবার গতি পাবে।” 

এ মামলার আসামিদের মধ্যে পাঁচজন কারাগারে ও চারজন জামিনে আছেন। পলাতক আছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আবদুর রশিদসহ চারজন।

এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সৈয়দ ফারুক রহমান ও বজলুল হুদার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।