২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে নানা কর্মসূচি

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।  

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2016, 05:18 PM
Updated : 20 August 2016, 05:18 PM

বিভীষিকাময় এই হামলার যুগ পূর্ণ হচ্ছে রোববার। বিকাল ৪টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে ওই হামলায় নিহতদের শ্রদ্ধা জানাবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও এই কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।

হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সারাদেশের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

২১ অগাস্ট বিকালে আওয়ামী লীগের পূর্বনির্ধারিত সন্ত্রাস বিরোধী শোভাযাত্রার কর্মসূচি ছিল। শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরপরই তা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু সন্ত্রাসী গ্রেনেড হামলায় স্তব্ধ হয়ে যায় সন্ত্রাসবিরোধী সেই কর্মসূচি।

সেদিন বেঁচে গেলেও স্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভি রহমান বসে ছিলেন ট্রাকে তৈরি মঞ্চের পাশে কর্মীদের সঙ্গে। প্রাণ হারান তিনিসহ ২৪ জন। যারা আহত হন, তাদের অনেকে চিরতরে পঙ্গু হন, ঘটে অঙ্গহানি।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে চালানো ওই হামলার লক্ষ্য যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাই ছিলেন, তা পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে। 

সে সময় এই ঘটনার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয় বলে পরে উন্মোচিত হয়, আসামি হিসেবে এখন বিচারের সম্মুখীন ওই সময়ের তদন্ত কর্মকর্তারাও। 

অধিকতর তদন্তের পর এখন এই মামলার আসামির তালিকায় তখনকার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে যোগ হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ছেলে তারেক রহমানও।

গ্রেনেড হামলার দিনটি তাই জাতির ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে উঠে এসেছে রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদের বাণীতে।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের যে ষড়যন্ত্র চলছিল, ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলা তারই ধারাবাহিকতা বলে মনে করেন আবদুল হামিদ।

তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন নিহত ২৪ জনকে, সমবেদনা প্রকাশ করেছেন আহতদের প্রতি।

ওই হামলায় তাকে বাঁচাতে নেতা-কর্মীদের ভূমিকা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেছেন শেখ হাসিনা।

এক বাণীতে ২১ অগাস্টকে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় দিন হিসাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “২০০৪ সালের এই দিনে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশ্য দিবালোকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী সমাবেশে বর্বরতম গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।

“এর মধ্যেও আমাদের নেতাকর্মীরা মানববর্ম সৃষ্টি করে সেদিন আমাকে রক্ষা করেন।”

শেখ হাসিনা বলেন, “২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলার মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, শান্তি ও উন্নয়নের ধারাকে স্তব্ধ করে দেওয়া। বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করে হত্যা, ষড়যন্ত্র, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা।”

হামলার পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের তৎপরতা নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন,“এ ধরনের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচার করা ছিল সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার করার বদলে  তাদেরকে রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। হামলাকারীদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।  অনেক আলামত ধ্বংস করে।     

“জনগণকে ধোঁকা দিতে জজ মিয়া নাটক সাজায়। কিন্তু সত্য কখনও চাপা থাকে না। পরবর্তীতে  তদন্তে বেরিয়ে আসে বিএনপি-জামাত জোটের অনেক কুশীলব এই হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল।”

লক্ষ্য ছিলেন শেখ হাসিনা

গ্রেনেড হামলার পর সরকারের পক্ষ থেকে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের নেতৃত্বে এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগ ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে।

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বেসরকারি তদন্ত কমিটিও একটি প্রতিবেদন দিয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হামলার লক্ষ্য ছিলেন শেখ হাসিনা।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই), আন্তর্জাতিক পুলিশ (ইন্টারপোল) চাঞ্চল্যকর এ হামলার তদন্তে দুই দফায় ঢাকা আসে। তবে তারা তদন্ত শেষ না করেই ফিরে যান।

অভিযোগ রয়েছে, দেশীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অসহযোগিতার কারণেই আন্তর্জাতিক এই সংস্থাগুলো গ্রেনেড হামলার তদন্তে তেমন কিছু করতে পারেনি।

কয়েকজন তদন্ত কর্মকর্তার হাত ঘুরে চার বছর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ১১ জুন সিআইডি কর্মকর্তা ফজলুল কবীর ২২ জনকে আসামি করে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর অধিকতর তদন্ত শেষে যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়, তাতে শেখ হাসিনাই যে হামলার লক্ষ্য ছিল, তা স্পষ্ট করে বলা হয়।

হামলায় নিহতরা

২১ অগাস্টের হামলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমান ছাড়াও নিহত হন আওয়ামী লীগের ২৩ নেতা-কর্মী। এদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম, যিনি দলের সবার কাছে আদা চাচা নামেই পরিচিত ছিলেন।

সেদিন নিহত হন শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত ল্যান্স কর্পোরাল মাহবুবুর রশীদও।

নিহত অন্যরা হলেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ সেন্টু, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী সুফিয়া বেগম, মাদারীপুরের যুবলীগ নেতা লিটন মুন্সী ওরফে লিটু, নারায়ণগঞ্জের রতন সিকদার, ঢাকা মহানগর রিকশা শ্রমিক লীগ নেতা মো. হানিফ, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হাসিনা মমতাজ রীনা, সরকারি কবি নজরুল ইসলাম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মামুন মৃধা, ঢাকা মহানগর যুবলীগ নেতা বেলাল হোসেন, আমিনুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগকর্মী আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, যুবলীগ নেতা আতিক সরকার, শ্রমিক লীগকর্মী নাসির উদ্দিন সর্দার, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেত্রী রেজিয়া বেগম, আবুল কাসেম, জাহেদ আলী, মমিন আলী, যুবলীগ নেতা শামসুদ্দিন আবুল কালাম আজাদ ও ইছহাক মিয়া।