কিছু হলেই যেন ঢাকায় ছুটতে না হয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুই দশক পর কী হতে পারে- তা মাথায় রেখে শহর বা অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2016, 08:09 AM
Updated : 17 August 2016, 11:54 AM

বুধবার নিজ কার্যালয়ে নবগঠিত ময়মনসিংহ বিভাগের উন্নয়ন পরিকল্পনা সংক্রান্ত সভায় ‘কিছু হলেই রাজধানীতে ছুটে আসার’ সমালোচনা করে তিনি বলেন, “১৬ কোটি মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে হলে আমাদের ক্ষমতাকে আরও বিকেন্দ্রীকরণ করা একান্তভাবে প্রয়োজন।”

প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকারের ‘দায়িত্ব’ বাংলাদেশের মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়া। তার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর থেকে স্থানীয় সরকারগুলোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে জনগণের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে।

 শেখ হাসিনা বলেন, “এখন অনেক শহর এমন উন্নত হয়ে গেছে যে, ট্রাফিক জ্যাম হচ্ছে, বাইপাস করতে হচ্ছে। এসব চিন্তা-ভাবনা আমাদের পূর্ব থেকেই করা উচিৎ।

“২০ বছর, ২৫ বছর পরে কী হবে সেটা মাথায় রেখেই আমাদের প্রত্যেকটা পরিকল্পনা নেওয়া উচিৎ বলে মনে করি।

“এটা আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, যখনই আমরা যে পরিকল্পনা নেব, এটা মাথায় রাখবেন যে, আজ থেকে বিশ বছর পর কতটা উন্নতি হতে পারে, জনসংখ্যা কতটা হবে এবং কী হতে পারে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে- সে কথা মাথায় রেখেই কিন্তু আমাদের পরিকল্পনা নেওয়া উচিৎ।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোর মানসিকতা ত্যাগ করে ‘চিন্তাটাকে সবসময় আরও স্বচ্ছ, সুদূরপ্রসারী’ করতে হবে।

“তাহলে পরবর্তীতে ঝামেলাগুলি কম হবে।”

এক্ষেত্রে চীন কীভাবে কাজ করেছে সে দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।

“এই দূরদৃষ্টিটা তাদের (চীনাদের) আছে। অর্থাৎ যে কোনো পরিকল্পনা নিতে গেলে আমাদের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হতে হবে।”

বঙ্গবন্ধুর প্রশাসনিক সংস্কারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বাধীনতার পরপর আমাদের দেশে তখন মাত্র ১৯টি জেলা ছিল। জনগণ যাতে সেবা পায়, তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়, সেজন্য তিনি (বঙ্গবন্ধু) প্রতিটি মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করেন।”

বঙ্গবন্ধু মহকুমাকে জেলা করে মোট ৬০টি জেলা ভাগ করে দিয়েছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মধ্য দিয়ে তিনি জনসেবা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন।”

শেখ হাসিনা ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ ও উন্নয়নের সুবিধা তৃণমূলে নিয়ে যেতে নতুন নতুন বিভাগ সৃষ্টির কথাও উল্লেখ করেন।

দেশে বর্তমানে আটটি বিভাগ রয়েছে। আরও বিভাগ করা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

“ঢাকা বিভাগকে ভেঙে ময়মনসিংহ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে পরিকল্পনা আছে ঢাকা বিভাগটাকে আরেকটু ছোট করে দেওয়া।”

স্থানীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করার আগ্রহের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কোনো একটা কিছু হলেই ঢাকা ছুটে আসতে হবে। এভাবে তো মানুষের সেবাটা নিশ্চিত করা যাবে না। এজন্য ক্ষমতাটাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা একান্তভাবে প্রয়োজন।”

নতুন বিভাগীয় শহর গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নিজের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি জানান, আগেই গড়ে ওঠা সিলেট শহরকে রেখে সুরমার ওপাড়ে নতুন বিভাগীয় শহর গড়ে তোলার নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন। রংপুরেও নতুন জায়গায় বিভাগীয় শহর গড়ে তোলার নির্দেশনা রয়েছে।

একইভাবে ময়মনসিংহের পুরনো শহর রেখেই ব্রক্ষ্মপুত্র নদের ওপাড়ে নতুন বিভাগীয় শহরের স্থাপনা গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

“ময়মনসিংহ শহর একটা গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল। জায়গা পছন্দ করে দিয়েছি; আধুনিক, সুন্দর একটা শহর গড়ে উঠুক।”

শেখ হাসিনা বলেন, “শহর বাড়তে থাকে। একসময় ঢাকা বিশ্ববিদল্যায় ঢাকা শহরেরর বাইরে করা হয়েছিল। মহাখালীর টিবি হাসপাতাল শহরের বাইরে গ্রামে করা হয়েছিল। ১৯৬১ সালে আমরা যখন ধানমণ্ডি আসি আশপাশে তখনও ধানক্ষেত।

“অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, সামাজিক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই শহর গড়ে উঠছে।”

এসময় নতুন আবাসিক এলাকা বা শিল্পাঞ্চল হলে সেখানে বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে জলাধার তৈরির নির্দেশও দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পরিকল্পিতভাবে না করলে আগুন লাগলে নেভানোর পানি কোথায় পাব? একটা দৃষ্টান্ত দেই। বসুন্ধরায় যখন আগুন লাগলো পানি পাওয়া যাচ্ছিল না আগুন নেভাবার। পানি নিতে হল সোনারগাঁও হোটেলের সুইমিংপুল থেকে। তাহলে কি আমাদের ভবিষ্যৎ সুইমিংপুলেই আটকে থাকবে?”

অথচ পান্থপথে একটা খাল ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেটাকে বক্স কালভার্ট করে খালটাকে বন্ধ করে দিয়ে ওই এলাকার পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে গেছে। ধানমণ্ডি লেক থেকে হাতিরঝিল হয়ে সোজা নদী পর্যন্ত সংযোগ ছিল।”

অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আযম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম ও প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ সংশ্লিষ্ট সচিব ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।