ঢাকায় ইন্টারনেট বন্ধের মহড়া

গুলশান হামলার মত বিশেষ পরিস্থিতিতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের যোগাযোগের পথ বন্ধে ইন্টারনেট সেবা তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেওয়ার মহড়া করতে যাচ্ছে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2016, 09:50 AM
Updated : 1 August 2016, 11:04 AM

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী সোমবার বিকেল থেকে মধ্য রাতের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্বল্প সময়ের জন্য এই মহড়া হবে।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোমবার বিকেল থেকে মধ্য রাত অবধি ঢাকার কোনো কোনো এলাকা এ মহড়ার আওতায় আসবে। তবে এলাকার নাম বলা যাচ্ছে না।”

মোবাইল ইন্টারনেট থেকে শুরু করে তারযুক্ত ইন্টারনেটসহ (ফিক্সড ব্রডব্র্যান্ড) সব ধরনের ইন্টারনেট সেবা এই মহড়ার অন্তর্ভুক্ত হবে জানিয়ে বিটিআরসি প্রধান বলেন, “এই মহড়া ১৫ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত হতে পারে।”

যে সব এলাকার ইন্টারনেট বন্ধ থাকবে সেসব এলাকার গ্রাহকদের আগে থেকে জানানো হবে কিনা বা এভাবে সেবা বন্ধ রাখলে গ্রাহক স্বার্থ লঙ্ঘিত হবে কিনা- এমন প্রশ্নে শাহজাহান মাহমুদ বলেন, “আগে থেকে জানানো সম্ভব হচ্ছে না, বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র কিছু সমস্যা তো মেনে নিতেই হবে।”

গত ১ জুলাই রাতে একদল অস্ত্রধারী তরুণ গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে দেশি-বিদেশি অতিথিরা ভেতরে আটক পড়েন। জিম্মি সঙ্কটের মধ্যে জঙ্গিদের ঠেকাতে গিয়ে বোমায় নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।

ওই পরিস্থিতিতে জঙ্গিদের যোগাযোগের পথ বন্ধ করতে গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ৭৯ নম্বর সড়ক ও আশপাশের ব্রডব্যান্ড সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হলেও মোবাইল ইন্টারনেট চালু থাকে।

পরদিন ভোরে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে সশস্ত্র বাহিনী ওই ক্যাফের নিয়ন্ত্রণ নেয়। অবশ্য তার আগেই ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। গভীর রাতেই তারা রক্তাক্ত লাশের ছবি ইন্টারনেটে তুলে দেয়, যা আইএস এর বরাত দিয়ে প্রকাশ করে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।

সেই রাতে ক্যাফের জঙ্গিরা বিশেষ একটি অ্যাপ ব্যবহার করে বাইরে যোগাযোগ করেছিল বলে পরে গণমাধ্যমে খবর আসে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করায় সে সময় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়নি।

মোবাইল যোগাযোগ ঠিক রেখে ডেটা ট্রান্সফার বন্ধ রাখা সম্ভব কি না- এ নিয়ে পরে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হয়। এ প্রেক্ষাপটেই বিটিআরসি মহড়া করার উদ্যোগ নিল।    

ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসপিএবি) সেক্রেটারি এমদাদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা বিটিআরসি পাঠিয়েছে। কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করা যায় কিনা- তা পরীক্ষা করতে এই মহড়া হবে।”

‘খুবই কম সময়ের জন্য’ কোনো কোনো এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হবে জানিয়ে এমদাদুল বলেন, “ইন্টারনেট সেবা ১০ থেকে ১৫ মিনিট বন্ধ থাকতে পারে। তবে কোন কোন এলাকায় বন্ধ হবে তা বিটিআরসি জানায়নি। তাৎক্ষণিক নির্দেশনা পাওয়ার পর ইন্টারনেট বন্ধ করা হবে।”

ইন্টারনেট গেইটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমের স্ট্রাটেজি অফিসার সুমন আহমেদ সাবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইআইজি, আইএসপি, নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দেশনা পাওয়া মাত্র ইন্টারনেট বন্ধ করতে পারে কি না তা দেথতেই এ মহড়ায় সবাই অংশ নিচ্ছে।”

বর্তমানে দেশে ২৭টি ইন্টারনেট গেইটওয়ে প্রতিষ্ঠান এবং বিটিআরসি-র হিসাবে ৪৯০টি আইএসপি ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে।

বিটিআরসির হিসাবে জুন পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল ৬ কোটি ৩২ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৫ কোটি ৯৬ লাখের বেশি গ্রাহক মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।