ট্যানারি মালিকদের ‘ছলছুতায়’ বিরক্ত প্রধানমন্ত্রী

ঢাকার হাজারীবাগ থেকে যাতে না সরতে হয় সেজন্য ট্যানারি মালিকরা নানা ‘ছল-চাতুরি’ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2016, 09:02 AM
Updated : 31 July 2016, 09:47 AM

চামড়া ব্যবসায়ীদের এই ‘অযথা’ দেরির সমালোচনা করে তিনি দ্রুত ট্যানারি সরানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

রোববার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২০১৬’ এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “সাভারের হরিণধরা এলাকায় আমরা ট্যানারি শিল্প তৈরি করে দিয়েছি। সেখানে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

“তবে ট্যানারি মালিকরা অযথা দেরি করছেন। তাদের বারবার বলা সত্ত্বেও নানা ছলছুতা নিয়ে…কেন দেরি করে আমরা জানি না। এটা করা ঠিক না।”

দফায় দফায় সময় দিয়েও ঢাকার ট্যানারিগুলোকে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে পাঠাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত গত ২৯ ফেব্রুয়ারি শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ট্যানারি স্থানান্তরে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন মালিকদের। ওই সময়ের পরে হাজারীবাগে কাঁচা চামড়ার প্রবেশ ঠেকাতে বসানো হয় পুলিশ প্রহরা।

পরে হাজারীবাগে থাকা ১৫৪ ট্যানারি সেখান থেকে না সরানো পর্যন্ত পরিবেশ দূষণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে গত ১৬ জুন নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। তবে ব্যবসায়ীদের এক আবেদনে হাই কোর্টের আদেশ ১৭ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করে চেম্বার আদালত।

এরপর ১৮ জুলাই আপিল বিভাগ দৈনিক ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কমিয়ে ১০ হাজার টাকা করে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন,  “তারা (মালিকরা) দ্রুত ট্যানারি স্থানান্তর করলে এ জায়গাটা (হাজারীবাগ) পরিবেশ আবার ফিরে পাবে।”

অনুষ্ঠানে তিনি বন্যাদুর্গত মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।

বন্যার ক্ষতি মোকাবিলায় ‘যথাযথ পদক্ষেপ’ নেওয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করে নদী ড্রেজিং করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানোসহ নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

দলের পক্ষ থেকে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রতি নির্দেশ রয়েছে অন্তত তিনটি (বনজ, ভেষজ ও ফলদ) করে গাছ লাগাতে।

“আশা করি দেশের সব মানুষই বৃক্ষরোপণের দিকে দৃষ্টি দেবেন।”

পরিবেশ রক্ষায় ‘সকলের’ দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলে আজকে বিশ্বের কাছে একটা ‘দৃষ্টান্ত’ স্থাপন করেছে।

‘পরমুখাপেক্ষী’ না থেকে নিজস্ব অর্থায়নে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

বাংলাদেশে যে জীববৈচিত্র্য রয়েছে তা সংরক্ষণ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বৃক্ষ নিধন ও পাহাড় কাটা বন্ধ করা, জলাভূমি ভরাট না করা, নদীর নাব্যতা যাতে না কমে সে ব্যবস্থা নেওয়া এবং কীটনাশকের ‘যথেচ্ছ’ ব্যবহার বন্ধ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

নৌযান থেকে নদীতে তেল পড়েও ‘ব্যাপক দূষণ’ হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার বলে মনে করি।”

তিনি বলেন, “অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে জীববৈচিত্র্য চ্যালেঞ্জের মুখে।”

প্রধানমন্ত্রী জানান, তার নেতৃত্বাধীন সরকারের নেওয়া কর্মসূচির ফলে গত সাত বছরে দেশে বনভূমির পরিমাণ ৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৭ শতাংশ হয়েছে।

“কিন্তু আমাদের আরও বেশি করতে হবে। কমপক্ষে ২৫ শতাংশে আমাদের যেতে হবে। আর সেখানে যাবার জন্য আমাদের কতগুলি পদক্ষেপ নিতে হবে।”

শেখ হাসিনা জানান, দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপকভাবে বনায়ন সৃষ্টি করা, বিশেষ করে সমুদ্র উপকুল ও নদীর মোহনাগুলোয় কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে নারকেল বাগান তৈরিরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  যেসব এলাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র অথবা শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে সেখানেই বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনি গড়ে তোলা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যেখানেই শিল্প হবে সেখানেই জলাধার থাকতে হবে।”

এটি নিশ্চিত করতে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ‘যথাযথ’ ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে প্রতিটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে পরিবেশগত প্রভাব ভালভাবে নিরুপণ করারও নির্দেশ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ‘জাতীয় পরিবেশ পদক’, ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন’ এবং বৃক্ষরোপণে ‘প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার’ তুলে দেন বিজয়ীদের হাতে। বিতরণ করা হয় সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেক। 

প্রধানমন্ত্রী কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন চত্বরে একটি গাছের চারা রোপণের পর বৃক্ষ মেলার উদ্বোধন করেন।