হায়াৎ মামুদের ৭৭তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন

ভয়ভীতি কিংবা প্রলোভনে সাহিত্যিক হায়াৎ মামুদ ‘আদর্শ থেকে কখনও বিচ্যুত হননি’ মন্তব্য করে তার ৭৭তম জন্মবার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে এসে এই কবি-প্রাবন্ধিক ও অনুবাদকের প্রশংসা করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2016, 06:15 PM
Updated : 28 July 2016, 06:15 PM

বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলা একাডেমিতে হায়াৎ মামুদের জন্মবার্ষিকীর আয়োজন করে ‘রঙ্গে ভরা বঙ্গ’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন।

এতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ‘একুশে পদক’ পাওয়া হায়াৎ মামুদের শিক্ষক হিসেবে ভূমিকার প্রসঙ্গেও কথা বলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী।

নূর বলেন, “আমি শুনেছি হায়াৎ মামুদ ছাত্রদের অসাধারণ পড়াতেন। আমার বড় আফসোস, আমি যদি তার ছাত্র হতে পারতাম, সে কতই না আনন্দময় হত। এক অনির্বচনীয় আনন্দ পেতাম আমি।”

“আজকের এ দিনে তার মতো মানুষের বড় প্রয়োজন। তিনি আমাদের পথ দেখাবেন, আমরা সে পথেই হাঁটব।”

১৯৩৯ সালের ২ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের হুগলীতে জন্ম নেওয়া হায়াৎ মামুদ বাংলা একাডেমিতে চাকরির পর অধ্যাপনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কবিতা, অনুবাদ সাহিত্য, প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য সবক্ষেত্রেই তার সদর্ভ বিচরণ।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে গত শতকের ৬০-এর দশকে তার লেখা ‘মৃত্যুচিন্তা রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য জটিলতা’ দারুণ সাড়া জাগিয়েছিল।

শিশু সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৩ সালে ‘বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’ ও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৬ সালে ‘একুশে পদক’ পান তিনি।

৭৭তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে হায়াৎ মামুদের জীবন ও কর্মের উপর প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মা, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের রাশিয়ান ভাষা বিভাগের প্রধান এলেনবাস আলোকপাত করেন।

মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদের ছাত্র প্রাবন্ধিক ও গবেষক সরকার আবদুল মান্নান।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান শোনালেন কেমন করে মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান থেকে হায়াৎ মামুদ নামটি এলো, তার গল্প।

“৫০ বছর আগের কথা বলছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এলেন মনিরুজ্জামান নামে একজন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কবিসহ আরও বেশকজনের নাম দেখা গেল একই। তখন কবি মাজহারুল ইসলাম এসে তার নাম পরিবর্তন করে রাখলেন হায়াৎ মামুদ।”

হায়াৎ মামুদের রাশিয়ান বন্ধু এলেনবাস বলেন, “১৯৯৫ সালের কথা, তখন ঢাকায় কারফিউ চলছিল, সে অবস্থার মধ্যেও হায়াৎ মামুদ আমার বাসায় এলেন। রাশিয়ান ভাষার একটি বইয়ের অনুবাদ নিয়ে তিনি এতোটাই মনোনিবেশ করেছিলেন যে কারফিউর কথা তিনি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলেন।”

দ্বিজেন শর্মা বলেন, “তার মতো সদানন্দ, সদা হাস্যময় মানুষ পৃথিবীতে বড় দুস্প্রাপ্য। তার মধ্যে চিন্তা-ভাবনার লেশমাত্র নেই।

“১৯৬২ সালে তিনি যদি আমাকে শিশু সাহিত্যিক এখলাস উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে না দিতেন, তবে আমি কোনোদিনই শিশুদের জন্য লিখতাম না।”

জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানকে ঘিরে হায়াৎ মামুদকে ইমেইলে শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।

তিনি লিখেছেন, “তার মতো সরল, সহৃদয়বান মানুষ আমি আর দেখিনি। আমার বন্ধু বলে বলছি না, হায়াৎ সত্যি নিরহঙ্কারী।

“ওর মতো মানুষ দ্বিতীয়টি হবে না। সে এক অসূয়াশূন্য মানুষ, ভেতরে কোনো ময়লা নেই তার। সে যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিনই আমাদের সৌভাগ্য।”

আলোচনা পর্বের আগে অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাচিকশিল্পী জোবায়দা লাবণী।