জঙ্গিদের বিদেশসংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সাম্প্রতিক কয়েকটি জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে দেশের সন্ত্রাসীরা আন্তর্জাতিক কোনো সংগঠনের কাছ থেকে দিকনির্দেশনা পাচ্ছে কীনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2016, 12:03 PM
Updated : 28 July 2016, 12:03 PM

জঙ্গিবাদের মূল পরিকল্পনাকারীদের মূল উপড়ে ফেলতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক সেমিনারে মাহমুদ আলী বলেন, “আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলো বাংলাদেশের জঙ্গিদের কোনো দিকনির্দেশনা দিচ্ছে কীনা, সেটাও তারা (গোয়েন্দা সংস্থাগুলো) খতিয়ে দেখছে।”

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর এর দায়িত্ব স্বীকার করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের নামে বার্তা আসে ইন্টারনেটে; যদিও সরকার বলছে, বাংলাদেশে বেড়ে ওঠা এই জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক সংশ্লিষ্টতা নেই।

এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও কয়েক তরুণের নিখোঁজ হওয়ার কথা জানায়, যাদের মধ্যে অনেকে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েছেন বলে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সম্প্রতি বলেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশে রয়েছেন বলেও তথ্য মিলছে।

তরুণদের ধর্মীয় উগ্রবাদের দিকে ঝুঁকে পড়া থেকে রক্ষা করতে সরকার তাৎক্ষনিক এবং স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়ারও চিন্তাভাবনা করছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। 

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে দেশে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠতে শুরু করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে আমরা নাগরিক সমাজ, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে আলোচনা করছি। সবশ্রেণির মানুষ এগিয়ে আসছে।”

সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে করনীয় বিষয়ক এ সেমিনারের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ আন্তর্জাতিক অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)।

সেমিনারে অংশ নেন কূটনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকরা।

বিআইআইএসএসর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুর রহমান জানান, গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার প্রেক্ষাপটেই তাদের এই সেমিনার।

আলোচনায় অংশ নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুর রশিদ বলেন, সাম্প্রতিক হামলাগুলোর প্রকৃতি নিয়ে অনেক সময়ই ভুল অর্থ দাঁড় করানো হয়েছে।

ইন্সটিটিউট অফ কনফ্লিক্ট,  ল’ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট স্টাডিজের (আইসিএলডিএস) নির্বাহী পরিচালক রশিদ বলেন, তারা (সন্ত্রাসী) দেশিয় সন্ত্রাসী, যারা স্থানীয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় বেড়ে উঠেছে।

জঙ্গি মদদে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ১৯৯২ সালের পর থেকে এই দুটি দলকে কখনই হামলার লক্ষ্য করা হয়নি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, সাম্প্রতিক হামলাগুলো থেকে একটা বিষয় পরিস্কার, কায়েমি একটি গোষ্ঠি দেশকে অস্থিতিশীল করা এবং অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

“তারা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক এবং নিরাপত্তীনতার ভীতি সৃষ্টি করতে চায়। তারা দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্তও করতে চায়,” বলেন মন্ত্রী।

 এ কাজে তারা ধর্মকে ব্যবহার করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজ্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সারাদেশেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে।

“আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সরকার বাংলাদেশ থেকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদের চক্র ভেঙ্গে এসবের মূল উপড়ে ফেলতে বদ্ধপরিকর।”

এজন্য সরকার বিভিন্ন দেশ, আঞ্চলিক বিভিন্ন সংস্থা এবং জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

এ পর্যায়ে তিনি ‘গ্লোবাল কমিউনিটি রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড এনগেজমেন্ট ফান্ডের (জিসিইআরএফ)’ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ার কথা জানান।

সরকারি-বেসরকারি অংশগ্রহণে গড়ে ওঠা জিসিইআরএফ স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সন্ত্রাস ঠেকাতে সহায়তা দিয়ে থাকে।

বিআইআইএসএসের পর্ষদ চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমেদও সেমিনারে বক্তব্য দেন।