মঙ্গলবার দুপুরে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি ফেরদৌস হোসেন।
তিনি জানান, “সাইনবোর্ড ঘাট এলাকায় নদীতে একটি লাশ পড়ে থাকার খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। মৃতদেহের প্যান্টের পকেটে ভিজিটিং কার্ড দেখে হাসান খালেদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।”
লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ময়নাতদন্তের জন্য তা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে ওসি বলেন, “তার শরীরের কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাচ্ছে না।”
হাসান খালেদ নিখোঁজ জানিয়ে গত শনিবার ধানমন্ডি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন তার শ্যালক শরীফুল আলম।
জিডিতে বলা হয়, শনিবার সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি হাসান খালেদ।
৫৫ বছর বয়সী হাসান খালেদ ধানমন্ডির ৪/এ নম্বর রোডের ৪৫ বাসায় এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন। নিউ ইস্কাটনের হাসান হোল্ডিং ভবনের অষ্টম তলায় তার অফিস।
আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা হাসান খালেদ কেমিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। গত ২৫ বছর ধরে তিনি আমদানি-রপ্তানি ও প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবসায় জড়িত ছিলেন।
যাদের হাত ধরে ডাচ-বাংলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ গঠিত হয়, তাদের মধ্যে হাসান খালেদ অন্যতম। বাংলাদেশের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের বাণিজ্যের উন্নয়নে ট্রেড ফ্যাসিলিয়েটর হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন।
ধারণা নেই ‘হত্যাকারী’ সম্পর্কে
এদিকে নিখোঁজের তিনদিন পর লাশ উদ্ধারের খবর আসার পর থেকে হাসান খালেদের ধানমন্ডির বাসায় ভিড় করেছেন আত্মীয়-স্বজনরা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাসায় গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনের মাঝে শোকের ছায়া, পড়েছে কান্নার রোল।
তবে ব্যবসায়ী হাসান খালেদকে কারা হত্যা করতে পারে এ বিষয়ে কোনো ধারণা নেই বলে জানিয়েছেন তার আত্মীয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।
এছাড়া নিখোঁজের ঘটনায় থানায় জিডি করা হলেও লাশ উদ্ধারের পর মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়নি বলে জানান নিহত ব্যবসায়ীর স্ত্রীর এই ফুফাতো ভাই।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার জানামতে এখনও মামলা করা হয়নি। ওইদিন জিডি করা হয়েছিল। আর সন্দেহের বিষয়টা বলতে পারছিনা। পুলিশ তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে বলে আশা করছি।”
ওষুধ আনতে বাইরে যান খালেদ
নিখোঁজের দিন সকালের নাস্তার আগে ওষুধ আনতে বের হয়ে ব্যবসায়ী হাসান খালেদ আর ফেরেন নি বলে বোন-ভাগ্নির বরাত দিয়ে জানান আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ওইদিন সকাল সাড়ে ৮টায় প্রতিদিনের মত অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিলেন ব্যবসায়ী হাসান খালেদ।
নাস্তার টেবিলে বসে খাওয়ার আগের প্রতিদিন যে ওষুধ (কিসের ওষুধ তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি) খেতেন তা তা শেষ হয়ে গেছে দেখে নাস্তার আগে ওষুধ আনতে ‘নীচে যাচ্ছি’ বলে বাসা থেকে বের হন তিনি। এরপর আর ফেরেন নি।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ আরও বলেন, “ওইদিন ওষুধ শেষ হয়ে যাওয়ায় রেডি হয়ে নীচে থেকে ওষুধ নিয়ে এসে নাস্তা করার কথা। বাসায় আসতে দেরি দেখে বোন ফোন দিয়ে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলে মোবাইল বন্ধ পান।”
হাসান খালেদের বাসার দারোয়ান বলেন, “স্যার কোনো সময়ই গাড়ি ছাড়া বাইরে বের হতেন না। ওইদিন হাতে ফোন নিয়ে অফিসে প্রতিদিন যেভাবে যান ওই ভাবেই বের হয়েছিলেন। পড়ে শুনি স্যারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”