সংসদ-ইসি নিয়ে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যে ‘বাতিল হবে’ এনজিওর নিবন্ধন

জাতীয় সংসদ ও নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও সংবিধান সম্পর্কে কোনো বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ‘বিদ্বেষমূলক বা অশালীন’ মন্তব্য করলে ওই এনজিওর নিবন্ধন বাতিলের সুপারিশ এসেছে সংসদে উত্থাপিত একটি বিলে।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2016, 04:45 PM
Updated : 25 July 2016, 04:45 PM

বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন বিল-২০১৬ এ বিধান রাখার সুপারিশ করেছে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।

সোমবার বিলটি যাচাই-বাছাই করে কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংসদে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন।

এতে সুপারিশ করা হয়, কোনো এনজিও বা ব্যক্তি ‘বিদ্বেষমূলক বা অশালীন’ মন্তব্য করলে বা রাষ্ট্র বিরোধী কর্মকাণ্ড করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে এনজিও ব্যুরো সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওর নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে।

গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে বিলটি উত্থাপন করেন সংসদ কাজে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।

এর কয়েকদিন পরে টিআইবির ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সংসদকে ‘পুতুল নাচের নাট্যশালা’ হিসেবে অভিহিত করেন।

তার এই মন্তব্যকে ঘিরে সংসদের অধিবেশনে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এক পর্যায়ে সংসদীয় কমিটি থেকেও টিআইবিকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।

ইফতেখারুজ্জামানের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় কমিটি বিলে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কটাক্ষমূলক মন্তব্য ও অপরাধ সম্পর্কিত এই বিধান যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এরপর বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তিরা ১৮ মে অনুষ্ঠিত আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে বিলের এই ধারাটি বাতিলের সুপারিশ করে। কিন্তু সংসদীয় কমিটি তাদের সুপারিশ আমলে নেয়নি।

প্রতিবেদন ওঠানোর সময় সুরঞ্জিত জানান, বিলটি কমিটিতে আলোচনার সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে কমিটির আলোচনা হয়েছে।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আরও বলেন, “টিআইবি সংসদ নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়ায় সংসদে উত্তেজনা হয়েছে। কোনো এনজিও সংসদ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, এমন নিয়ম বিশ্বে নেই।

“এই আইনটি হলে টিআইবি বা অন্য কোনো সংস্থা নির্বাচন কমিশন, সংসদ বা অন্য কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করতে পারবে না।”  

ওই বৈঠকের পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, টিআইবি সংসদ নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছিলে। এ জন্য তাদের ‘সরি’ বলার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি। তাই কমিটি প্রস্তাবিত আইনে সংসদসহ যে কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়ার জন্য এনজিওদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রেখেছে।

বিলে আলোচিত ওই ধারায় বলা হয়, কোনো এনজিও বা ব্যক্তি এই আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে এবং সংবিধান ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক বা অশালীন মন্তব্য করলে বা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

প্রস্তাবিত আইনে আরও বলা হয়, সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে নিষিদ্ধ ঘোষিত বা তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক অনুদান গ্রহণ করতে পারবে না। বিদেশ থেকে পাওয়া অনুদান যে কোনো তফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে।

কোনো প্রতিষ্ঠান নারী, শিশু, মাদক ও অস্ত্র পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এসব ক্ষেত্রে এনজিও ব্যুরো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জরিমানাসহ নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে।