শিল্পকলা একাডেমির এ সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন একদল সংস্কৃতিকর্মী। অপরদিকে প্রতিপক্ষ বলছে, ‘নীতিমালা ভঙ্গ করায় সমুচিত শিক্ষা হয়েছে তীরন্দাজের।’
শিল্পকলা একাডেমির কফি হাউজ থেকে শুরু করে ফেইসবুকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে কয়েকদিন ধরে।
এ প্রেক্ষাপটে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব’, শিল্পকলা একাডেমি ও গ্রুপ থিয়েটার চর্চা ‘কলুষিত করার ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডে’ যুক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
শিল্পকলা একাডেমিতে গত ২০ জুলাই ‘কণ্ঠনালীতে সূর্য’ নাটক মঞ্চায়নের আগে ‘বাকবিতণ্ডা ও বাহাস’ শিরোনামে তীরন্দাজের একটি আলোচনার আয়োজন ভেস্তে দেয় কর্তৃপক্ষ। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে ওই আলোচনায় তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদের অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
শিল্পকলা একাডেমির এ সিদ্ধান্তে কঠোর সমালোচনা করেছেন নাট্যকর্মীদের অনেকে।
নাট্যদল বটতলার অন্যতম অভিনেত্রী সামিনা লুৎফা নিত্রা তার ফেইসবুকে লিখেছেন, “অধঃপতিত হতে গেলেও কিছুটা ঊর্ধ্বে অবস্থান করতে হয়। আমাদের শিল্পকলাকেন্দ্রিক বিনোদন শিল্পীদের পতিত হবারও আর কোনো উঁচ্চতা নেই। অভিনয় নিয়ন্ত্রণের দাদাগিরি দেখিয়ে সরকারি একাডেমি আজ একটি দলের নাটক বন্ধ করে দিয়েছে।”
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শিল্পকলার হল বরাদ্দ নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করছে বলেও অভিযোগ করেন সংস্কৃতিকর্মীদের কেউ কেউ।
বিষয়টি নিয়ে ফেইসবুকে এভাবে সমালোচনার প্রেক্ষাপটে রোববার শিল্পকলা একাডেমি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “নাটক বন্ধ নয়, জোরপূর্বক অনির্ধারিত তথাকথিত ‘সুন্দরবন চুরি বিষয়ক বাকবিতণ্ডা ও বাহাস’ অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে।”
ঘটনাটি নিয়ে তীরন্দাজ নাট্যদল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব ও নাট্যচর্চার সুনাম ‘ক্ষুণ্ন করতে ক্রমাগতভাবে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে’ বলেও অভিযোগ এনেছে শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
“তারা সংস্কৃতিকর্মী ও সাংবাদিকদের বিভ্রান্ত করতে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে। তাদের বক্তব্য শিল্পকলা একাডেমি তাদের নাটক করতে দেয়নি। কিন্তু এই বক্তব্যটি একটি জঘন্য মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়।”
এ বিষয় জানতে তীরন্দাজ নাট্যদলের প্রধান দীপক সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “যদি হল বরাদ্দ বাতিল করা হয়, তবে আমরা নাটক করবো কী করে? আমাদের তো শিল্পকলা থেকেই বেরিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হল।
“এখন বলা হচ্ছে, আমরা মিথ্যাচার করেছি। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন কিছু প্রচার করছি না বা মিথ্যা তথ্য প্রচার করছি না যাতে শিল্পকলা একাডেমি বা গণ্যমান্য কারও সম্মান ক্ষুণ্ন হয়। আমরা কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করিনি। একটি দল সুন্দরবন ইস্যুকে কেন্দ্র করে নাট্যকর্মীদের মধ্যে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছে।”
শিল্পকলা একাডেমি বলেছে, তীরন্দাজ শুধু নাটক প্রদর্শনের জন্য অনুমতি বা হল বরাদ্দ নিয়েছিল। নাটকের আগে বা পরে কোনো আলোচনা অনুষ্ঠানের বিষয়ে তারা অনুমতি নেয়নি এবং হল বরাদ্দের ফরমেও উল্লেখ করেনি। এমনকি ‘বাকবিতণ্ডা ও বাহাস’ অনুষ্ঠানের ভিডিওধারণের জন্য ক্যামেরার অনুমতিও নেওয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে দীপক সুমন বলেন, “আমরা মৌখিকভাবে অনুমতি চেয়েছিলাম। শিল্পকলা একাডেমিতে এর আগেও আমরা অনেক দিন রাজনৈতিক আলোচনা শুনেছি। রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানও হতে দেখেছি। তখন কি অনুমতির দরকার হয়নি?”
তার এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাতীয় নাট্যশালায় আমরা সব সময়ই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে নিরুৎসাহিত করি। যুবলীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে যে অনুষ্ঠানটি করেছে, তাও তো জাতীয় চিত্রশালায়। তাদের অভিযোগ একেবারেই অমূলক।”
ভবিষ্যতে জাতীয় নাট্যশালার হল বরাদ্দ নিয়ে কেউ কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে যেন না পারে সেজন্য কড়া নজরদারি থাকবে বলে জানান তিনি।
একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, “শিল্পকলা একাডেমিতে কোনো অবাঞ্ছিত লোকজনকে আমরা প্রবেশের অনুমতি দেব না।”