সাধাসিধে জীবনে অসাধারণ ছিলেন তাজউদ্দীন: এইচটি ইমাম

সাধারণ ও সাধাসিধে জীবন যাপন করলেও তীক্ষ্ণবুদ্ধির তাজউদ্দীন আহমদ ‘অসাধারণ’ কাজ করে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধকালে তাকে ঘনিষ্ঠভাবে দেখা এইচটি ইমাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2016, 03:56 PM
Updated : 24 July 2016, 04:01 PM

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিব এইচটি ইমাম স্মৃতিচারণায় তাজউদ্দীন আহমদের ব্যক্তিগত গুণাবলী তুলে ধরেন।

তার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, “এত তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও মেধা সম্পন্ন ব্যক্তিকে দেখলে বুঝা যাবে না, তিনি এত সাধাসিধে, সাধারণ ও সরল মানুষ ছিলেন। আমি তাকে হয়তো এক-দুইবার রাগ করতে দেখেছি। কখনো মেজাজ খারাপ করেননি, সকলকে নিয়েই কাজ করতেন।”

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সব কাজের মধ্যেও বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সেই চিন্তা তাজউদ্দীনের মধ্যে সব সময় ছিল বলে মন্তব্য করেন এইচটি ইমাম।

তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের কথা মেনে কীভাবে সাংগঠনিকভাবে সরকারকে এগিয়ে নেওয়া, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল নিয়ে সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদ গঠনের পাশাপাশি বিদেশিদের সঙ্গে আলোচনা এবং বাইরে থেকে আসা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পরামর্শ- সবই তিনি একইসঙ্গে করছেন। দেশ স্বাধীন হলে তা কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে সেই চিন্তাও করছেন।

“একইসঙ্গে এত কিছু ভাবা! আমি মনে করি, একজন অসাধারণ মানুষ ছাড়া সম্ভব নয়। তাকে সম্মান জানাতে তার এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে যেভাবে আলোচনা করা উচিত সেভাবে তার ব্যক্তিগত গুণাবলী এবং তার চরিত্র সেগুলো নিয়েও আলোচনা করতে হবে।”

তাজউদ্দীনের মতো কয়েকজন নেতা যদি থাকতেন, তাহলে আজকে বাংলাদেশের এই অবস্থা হতো না বলে মন্তব্য করেন ইমাম।

“যদিও বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে আমরা একটা লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি,” একইসঙ্গে বলেন তিনি।

অনির্বাণ-৭১ নামের একটি সংগঠনের আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এই আলোচনা সভায় কয়েকজন বক্তা তাজউদ্দীন আহমদকে ‘তার কর্ম অনুযায়ী মূল্যায়ন করা হয়নি’ বলে অভিযোগ করলে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ইমাম।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন বিয়োগান্তক নায়ক ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি এত বেশি অবদান রেখেছেন, তার সমপরিমাণ বা কাছাকাছি মূল্যায়নও হয়নি।

“ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু মূল্যায়ন হয়তো হয়েছে, কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে মূল্যায়নে অপেক্ষায় আমরা।”

বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমদ জুটির অসাধারণত্বের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু যদি স্রষ্টা হিসাবে বাংলাদেশের ব্রেইন হয়ে থাকেন, তাহলে তাজউদ্দীন ছিলেন আত্মা। জৈবিক নিয়মেও একটাকে বাদ দিয়ে অন্যটা চলতে পারে না।”

সৈয়দ আনোয়ার বলেন, “আমার কেন যেন মনে হয়, তাজউদ্দীন আহমদকে সঠিক মূল্যায়ন করেছিল জুলফিকার আলী ভুট্টো। কারণ ভুট্টো একবার মন্তব্য করেছিল, শেখ মুজিবের পেছনে একজন লোক চুপচাপ থাকে, তাকে নিয়ে সমস্যা। মাঝে মাঝে কথা বলে।”

ক্ষমতার রাজনীতির বাইরে গিয়ে মানুষলগ্ন ও সমাজলগ্ন রাজনীতির সঙ্গে তাজউদ্দীন মেধার সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন ইতিহাসের এই অধ্যাপক।

তাজউদ্দীন আহমদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডা. এমএ করিম বলেন, “তাজউদ্দীনকে মূল্যায়ন করা হয়নি। কারণ তাজউদ্দীন যেসব শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতেন তাদের সরকার ক্ষমতায় আসেনি। তবে আমি আশা করি, সময় আসবে তাজউদ্দীনকে মূল্যায়ন করার।”

তাজউদ্দীন আহমদের জ্যেষ্ঠ মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি বলেন, “দেশপ্রেম মানে আমার কাছে নিজের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করা। আমরা সকলে যদি নিজের দায়িত্বটা ঠিকমতো পালন করি, তাহলে সকলের সমষ্টিতে আমাদের দেশপ্রেম ফুটে উঠবে।

“তরুণ সমাজসহ সকলে যদি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হই এবং মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলি তাহলে তাজউদ্দীন আহমদকে যথাযথভাবে স্মরণ করা হবে।”

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ব্যারিস্টার এম আমীর-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অনির্বাণ-৭১ এর আহ্বায়ক এফতেখার পাভেল।