‘চুরি’তে সবাই, দাবি ইনুর

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের প্রায় পুরোটাই চুরি হয় দাবি করে এজন্য জনপ্রতিনিধি-আমলা উভয়কে দায়ী করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2016, 12:32 PM
Updated : 24 July 2016, 07:18 PM

“আমি তো এমপি আমি জানি, টিআর কীভাবে চুরি হয়। সরকার ৩০০ টন দেয়, এরমধ্যে এমপি সাহেব আগে দেড়শ টন চুরি করে নেয়। তারপর অন্যরা ভাগ করে। সব এমপি করে না। তবে এমপিরা করেন।”

রোববার ‘বাংলাদেশ সামিট: টেকসই উন্নয়ন ২০১৬’ শীর্ষক দুদিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।

এই দুর্নীতির কথা সবার ‘জানা’ থাকলেও বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ নেই স্বীকার করে তিনি বলেন, “আমরা চোখ বন্ধ করে টিআরের এই চুরি এলাউ (অনুমোদন) করছি।

“কোটি কোটি টাকার চুরি। আমি হিসাব করে দেখেছি, টিআর দিয়ে সোনার মসজিদ বানিয়ে দেওয়া যায়, এত টাকা।”

এই দুর্নীতি বন্ধে প্রকল্পগুলো বাদ দিয়ে পল্লী রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে দাবি জানান ইনু।

“আমাদের সম্পদের সমস্যা, অথচ সম্পদ ছিটিয়ে দিচ্ছেন! কাকে দিচ্ছেন? একজন আমলাকে বড় লোক করার জন্য? একজন এমপিকে বড় লোক করার জন্য? উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বড় লোক করার জন্য? তালিকা করে প্রয়োজনীয় লোকদের রেশন দেন। তাহলে চুরিটা তো বন্ধ হবে।”

বৈদেশিক সহায়তাসহ বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে না পারার প্রসঙ্গ তুলে তথ্যমন্ত্রী অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা বাড়াতে ইউনিয়ন পরিষদকে সরাসরি বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ করেন।

পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন পিকেএসএফ চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে হবে। এজন্য সাধারণ মানুষের বাজারে ঢোকার প্রবেশগম্যতা, ক্ষমতার কাঠামো প্রবেশগম্যতা, মানব সম্পদের ক্ষেত্রগুলোতে প্রবেশগম্যতা, সম্পদের কাছে যাওয়ার প্রবেশগম্যতা বাড়াতে হবে।

“কোন দেশে কয়জন প্রধানমন্ত্রী নারী হলেন বা কটা এমপি, স্পিকার বা বিরোধীদলীয় নেতা নারী হলেন, তার উপর ভিত্তি করে নারীর ক্ষমতার মাপকাঠি নির্ধারণ করা যায় না।”

সমাজতন্ত্র বলতে লজ্জা কেন?

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের বাজেটে দিকবদল ঘটালেও তার দর্শন অর্থমন্ত্রী মুহিত স্বীকার করছেন না দাবি করে তার সমালোচনা করেছেন জাসদ সভাপতি ইনু।  

“গত সাত বছর ধরে মুহিত ভাই বাজেট দিচ্ছেন। বাজেটে অতীতের থেকে একটা দিক বদল হয়েছে কিন্তু। সমাজের চাহিদাকে আপনি স্বীকার করছেন, রাষ্ট্রের ভূমিকাকে অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায় বৃদ্ধি করেছেন, ব্যক্তি উদ্যোগকে আরেকটু উৎসাহিত করেছেন এবং বাজার শক্তির স্বীকৃতি দিয়েছেন। এটা দিক বদল।”

“কিন্তু এ দিক বদলটা কেন করলেন আপনি? এর দর্শনটা কী? সেটা তো এখানে লিখলেন না। লজ্জা লাগল? ইউরাপের লোকের তো লজ্জা লাগে না। আপনি তো বহুত বড়াই করে বলেন, চার নীতিতে ফেরত গেলাম। সে চার নীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা, আরেকটি হচ্ছে সমাজতন্ত্র।”

অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে ইনু বলেন, “আপনি খালেদা জিয়া ও সমারিক শাসকদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা থেকে একটা দিক বদল করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আপনি এ দিক বদল করেছেন।

“সামাজিক খাতে আপনি বিনিয়োগ বেশি করেছেন। গ্রামের জন্য বেশি বরাদ্দ দিচ্ছেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য বেশি বরাদ্দ দিচ্ছেন। ব্যাংকিং খাতের ওপর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করেছেন।”

“এই পরিবর্তন আপনি সমাজতন্ত্র বিশ্বাস করেন, এ জন্য আসছে। আপনি বৈষম্য থেকে বেরোনোর চিন্তা করছেন। তাহলে আপনি সমাজতন্ত্র বিশ্বাস করেন। কিন্তু আপনার বাজেটের কোথাও বা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কোথাও সমাজতন্ত্র শব্দ নেই। সমাজটাকে অন্ধকারে কেন রাখছেন আপনি?”

“জঙ্গিবাদীরা যদি আমি এখানে একটা বর্বর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব বলতে লজ্জা না পায়, তাহলে আমি সমাজতন্ত্র বলতে লজ্জা পাব কেন”- মুহিতের উদ্দেশে বালেন জাসদ সভাপতি।

ইনু বলেন, “এ মুহূর্তে আমরা তিনটি যুদ্ধের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। একটি হচ্ছে জঙ্গি দমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য উন্নয়ন যুদ্ধ। তিন নাম্বার যুদ্ধ হচ্ছে দলবাজি, ক্ষমতাবাজি, দুর্নীতি, দলীয়করণ পরিহার করে সুশাসনের যুদ্ধ।”

টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি গণতন্ত্র ও সাংস্কৃতিক ‘প্রবৃদ্ধিও’ অব্যাহত রাখার উপর জোর দেন ইনু।

সভাপতির বক্তব্যে খলীকুজ্জমান বলেন, “টেকসই উন্নয়নের ১৭ এজেন্ডার মধ্যে জঙ্গিবাদ দমনকে একীভূত করতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা উচিৎ।”