দুর্নীতির অর্থই জঙ্গিবাদে: দুদক চেয়ারম্যান

জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিকে ‘বৈশ্বিক সমস্যা’ হিসেবে তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুর্নীতির অর্থই জঙ্গিবাদে যাচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2016, 09:35 AM
Updated : 31 July 2016, 07:43 PM

রোবাবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ দুটোই বর্তমানে বৈশ্বিক সমস্যা এবং এ ‍দুই সমস্যার মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। দুর্নীতির অর্থই জঙ্গিবাদে ব্যবহৃত হচ্ছে।”

অর্থনৈতিক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ- এই দুই সমস্যাকে সমান গুরুত্ব দিয়ে প্রতিহত করতে না পারলে কেউ নিরাপদ থাকবে না বলে মন্তব্য করেন দুদক প্রধান। 

বিশ্বের অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক কয়েকটি জঙ্গি হামলার পর জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

গত ১২ জুলাই সিঙ্গাপুরে গ্রেপ্তার চার বাংলাদেশিকে জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগে দুই থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয় দেশটির আদালত।

এছাড়া দেশে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে কাজ করছে এমন কয়েকশ প্রতিষ্ঠান জঙ্গিবাদে অর্থ লগ্নি করছে বলেও সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

অর্থনৈতিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সম্প্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এনজিওগুলো প্রতিবছর প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার অনুদান সংগ্রহ করে। এই অর্থ কোন খাতে কীভাবে খরচ করা হয় তার বিস্তারিত তথ্য সরকারের কাছে নেই।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “বিষয়টা স্পষ্ট... আপনার কষ্টার্জিত অর্থ আপনি নেতিবাচক কোনো কাজে লগ্নি করবেন না। সৎভাবে অর্থ উপার্জন করে তো কেউ জঙ্গিবাদের পেছনে ব্যয় করবে না। সুতরাং যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জঙ্গিবাদের পেছনে টাকা ঢালছে, তারা অবশ্যই দুর্নীতিগ্রস্ত।”

দুর্নীতি দমন কমিশন পাঁচ বছর মেয়াদী কৌশলগত একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করেছে, যাতে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার উন্নয়ন, কার্যকর তদন্ত ও অনুসন্ধান কার্যক্রম, কার্যকর বিচার প্রক্রিয়ার জন্য দৃঢ় প্রসিকউশনসহ আটটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ওই পরিকল্পনার খসড়া নিয়েই সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে আসেন দুদক চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, চলতি বছরের শুরুতেই দুদক ব্যাংকিং, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য– এই তিন খাতে গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

“ব্যাংকিং সেক্টর, বিশেষ করে প্রাইভেট ব্যাংকগুলোতে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে পাচার হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রচুর সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। আমরা সরকারি ব্যাংকগুলোর দুর্নীতি যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান করছি, তেমনি বেসরকারি ব্যাংকগুলোকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে মনে রাখতে হবে যে সেখানে জনগণের টাকা থাকে।”

দুর্নীতির কারণ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শিক্ষার মান নিয়েও কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান।

“আমাদের শিক্ষার মান কমে গেছে। সম্প্রতি ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে এমন- বাচ্চারা স্কুলে গেলেই পাস হয়ে যায়। তাদের পড়ার টেবিলে বসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে। যদি কোনো স্কুলে পরীক্ষায় এক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ কোনো শিক্ষার্থীকে উপরের ক্লাসে প্রমোশন দেওয়া হয়, তাহলে আমরা মামলা করব।”

তার যুক্তি, ওইভাবে এক শ্রেণি থেকে উপরের শ্রেণিতে ‘প্রমোশন’ দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করা হয়।

“তেমনিভাবে যেসব চিকিৎসক সরকারের বেতন নিয়ে গ্রামে কাজ করেন না- এটাও ক্ষমতার অপব্যবহার। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধেও মামলা হবে।”

দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী সাংবাদিকদের পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মত বিনিময় করবে কমিশন।

দুদক কমিশনার নাসিরউদ্দিন আহমেদ, দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরের সম্পাদক নঈম নিজাম, দৈনিক কালের কন্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, একাত্তর টিভির সিইও মোজাম্মেল হক বাবু মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।