জঙ্গিদের সংখ্যা ‘অতি নগণ্য’: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

জঙ্গিদের সংখ্যা ‘‌অতি নগণ্য’ মন্তব্য করে উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2016, 05:12 PM
Updated : 23 July 2016, 05:15 PM

শনিবার বিকালে রাজধানীতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, “আমরা সতর্ক আছি। জাতীয়ভাবে কাজ করার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি।

“আপনারা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন। কারণ এদের (জঙ্গিদের) সংখ্যা অতি নগণ্য এবং সংখ্যা উল্লেখ করার মতোও না। ‍সুতরাং আমরা এদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হবই।”

সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলায় সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জড়িত থাকার তথ্য আসার প্রেক্ষাপটে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

গত ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্তোরাঁ ও ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের প্রবেশপথের নিরাপত্তা চৌকিতে জঙ্গি হামলায় চার পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২৫ জন নিহত হয়। আহত হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও কয়েকজন।

এ দুই ঘটনায় নিহত পুলিশ সদস্যদের কথা স্মরণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “পুলিশ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যথাযথভাবে কাজ করছে।”

গুলশান-শোলাকিয়ার হামলায় বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল পড়ুয়া বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর নাম আসায় এর আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সরকার।

এবার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ছাত্রছাত্রীদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে নজর রাখার জন্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।

“আপনারা দেখুন আমাদের মেধাবী ছাত্ররা কোথায় যায়। জঙ্গিবাদী কার্যক্রমে কেন যায়… সেটা দেখুন, আমাদের জানান; আমরা সেটা নিয়ে কাজ করব। আমাদের পুলিশ বাহিনীতো এটা নিয়ে কাজ করছেই।”

গুলশান হামলার প্রসঙ্গ টেনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “গুলশানে আইএসের নামে রোজা-নামাজ না করে মানুষ হত্যা করেছে। আগে ভাবতাম এসব মাদরাসার ছোট ছেলেদের দিয়ে করানো হয়। এখন দেখি নামিদামি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে করানো হচ্ছে।

“প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সেভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়তো সেভাবে দেখা যায়নি। জীবনের সবদিক থেকে মেধাবী ও সৌভাগ্যবান তারাই এখন এদিকে যাচ্ছে।”

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে অভিহিত করে বিশ্বের অন্যান্য দেশে সাম্প্রতিক হামলার প্রসঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী।

কামাল বলেন, “আমরা ভাবতাম জার্মানি অনেক সতর্ক আছে, কিন্তু তাদের সেখানেও হামলা হয়ে গেল। ফ্রান্সে পরপর কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটলো। তুরস্কে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রেও হচ্ছে, কোথাও বাকি নাই। পাশ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়ায়ও হয়েছে।”

‘জীবনের মায়া ত্যাগ করে’ বিপদগামী তরুণরা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন কারণে এসব হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে মন্তব্য করে বাংলাদেশের জঙ্গি হামলাগুলো স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি করছে বলে পর্যবেক্ষণ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “কয়েকজন বিপদগামী তরুণ জীবনের মায়া ত্যাগ করে হামলা করছে। তারা কেন এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে… সেই প্রশ্ন। কোনো রাষ্ট্র যখন নির্যাতন করে তখন এমনটা হতে পারে, যেভাবে ফিলিস্তিনে তরুণরা কিংবা তামিলরা করেছে।

“কিন্তু বাংলাদেশে সব মতের মানুষ সমানভাবে বসবাস করছে। তাহলে কারা করছে, কেন করছে, কীভাবে করছে- তা যখন আমরা মিলিয়ে দেখছি, তখন উত্তর চলে আসছে। যারা স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি… এগুলো করছে।”

হামলাকারীদের যোগসূত্র তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম কিংবা আনসার আল ইসলামের নামে আগে তারা এগুলো করেছে। এখন আইএসের নামে আত্মপ্রকাশের প্রচেষ্টা নিচ্ছে।

“ইসলামের নামে রাষ্ট্র করার কথা তারা বলছে। বাংলাদেশের মতো এমন এক দেশে তারা এটা বলছে, যেখানে ৯০ শতাংশ মানুষই মুসলমান।”

কোরানের আগে-পরের অংশ না বলে শুধু জিহাদের অংশ পড়িয়ে তরুণদের বিপদগামী করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আসাদুজ্জামান কামাল।

দেশে জঙ্গিদের বিভিন্ন হামলার ঘটনা উদঘাটন করা হয়েছে দাবি করে কামাল বলেন, “একেকটা প্রচেষ্টা যখন তারা নেয়, তখন সেটা আমরা উদঘাটন করেছি। সেটা যেভাবে তাভেল্লা সিজারের ক্ষেত্রে করা হয়েছে, সেভাবে কুনিও হোশির ব্যাপারেও করেছি।”

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান।

অনুষ্ঠান অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোজাম্মেল হক খান, শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আলী আকবর, বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আলা উদ্দিন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক অধ্যাপক ইমামুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মিজান উদ্দিন বক্তব্য দেন।