সারা বিশ্বই আমাদের সঙ্গে: হাসিনা

জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের মানুষ একা নয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সারা বিশ্বই বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2016, 05:00 PM
Updated : 23 July 2016, 05:00 PM

শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় একথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশ সংঘটিত সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এই ঘটনা ঘটানোর ফলে হয়তো অনেকের ভেতরে এই ধারণা ছিল যে, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে হেয় হবে।

“কিন্তু আমি এটুকু বলতে পারি, বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ থেকে সরকার প্রধান, রাষ্ট্র প্রধান; এমনকি কুইন এলিজাবেথ ও ডিউকসহ প্রত্যেকে আমার কাছে মেসেজ পাঠিয়েছে, চিঠি লিখেছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তারা একদিকে এই ঘটনার নিন্দা করেছে, অপরদিকে এত দ্রুত সময়ে আমরা যে এই সন্ত্রাসীদের দমন করতে পেরেছি সেটার প্রশংসা করেছে। পৃথিবীতে এ ধরনের বহু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে হয়তো অনেক বেশি সময় লেগেছে আক্রমণকারী, সন্ত্রাসী বা যারা জিম্মি করেছে তাদের দমন করতে। কিন্তু বাংলাদেশ একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।”

বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের পাশে থাকার বার্তা পৌঁছে দিয়েছে বলে জানান তিনি।

“এটা আমি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে জানাতে চাই যে- বাংলাদেশের জনগণ একা নয়, সারা বিশ্ব আমাদের সাথে আছে সন্ত্রাস দমনে।”

গত ১ জুলাই গুলশানে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশি নাগরিক ও দু্ই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২২ জনকে হত্যা করে। পরে কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়, জীবিত উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকজন জিম্মিকে।

এর এক সপ্তাহের মাথায় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জমায়েতের কাছেই পুলিশের ওপর জঙ্গিরা হামলা চালালে দুই পুলিশ নিহত হন। পরে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হন এক হামলাকারী।

শেখ হাসিনা জানান, গুলশানে হামলার তদন্তের জন্য ‘স্পেশাল টিম’ করে দেওয়া হয়েছে।

“এই ঘটনাটার পর আমরা আরও সতর্কতা অবলম্বন করেছি। সেই সাথে সাথে এর শেকড় কোথায়? সেই শেকড়ের সন্ধানে আমরা নেমেছি যে, কোথা থেকে তারা অর্থ পেল, অস্ত্র পেল, তাদেরকে এইভাবে মানুষ খুন করতে কারা উৎসাহিত করল এবং কাদের কথায় তারা এই ধরনের ঘটনা ঘটালো। এর সব আমরা বের করতে পারব।”

একইসঙ্গে শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সবাইকে তিনি আহ্বান জানান, ‘কোথাও জঙ্গি সৃষ্টি হচ্ছে বা বিপথে নিয়ে যাওয়া’ এ রকম তথ্য পেলে তা সরকারকে জানাতে।

ধর্মের প্রকৃত শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। প্রত্যেক ধর্মই শান্তির বানী বলেছে। প্রত্যেকেই ধর্ম সম্পর্কে সহনশীলতার কথা বলেছে, অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীলতা দেখানোর কথাই বলা আছে।

“হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে কখনোই কোনো সমাধান হয় না।”

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের নিয়ে জঙ্গি-সন্ত্রাসবিরোধী কমিটি করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা খুব ভাল সাড়া পাচ্ছি। মানুষের মাঝে যথেষ্টে সচেতনতার সৃষ্টি হয়েছে।”

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “জনগণের শক্তিই হচ্ছে বড় শক্তি। জনগণ যখন সচেতন হবে বাংলাদেশে কোনো জঙ্গির স্থান হবে না।”

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগেরও ‘গুরুদায়িত্ব’ আছে বলে মন্তব্য করেন দলীয় সভানেত্রী।

জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ‘অভূতপূর্ব সাড়া’ পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটুকু বলতে পারি যে, জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য আজ গড়ে উঠেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েই আমাদের চলতে হবে।

“আমি বিশ্বাস করি যে, এই অন্ধকার থাকবে না। আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি। সে যাত্রা অব্যাহত থাকবে এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অবশ্যই এগিয়ে যাবে, উন্নতি হবে।”

‘দেশের উন্নয়নের জন্য’ আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করারও আহ্বান জানান তিনি।