‘উগ্রপন্থার বিস্তার রোধে সংস্কৃতিই হোক হাতিয়ার’

দেশব্যাপী জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে ধর্মের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও উগ্রপন্থার বিস্তার রোধে সংস্কৃতিই ‘মোক্ষম হাতিয়ার’ হতে পারে বলে মনে করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2016, 04:27 PM
Updated : 23 July 2016, 04:27 PM

শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার ঘটনায় ‘গভীর উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ’ সংস্কৃতিমন্ত্রী উগ্রপন্থার বিস্তার রোধে এই মত প্রকাশ করে বলেন, “দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করার মাধ্যমে সংস্কৃতিতেই হবে জোর প্রতিবাদ।”

রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ‘বিরহ বরিষণে রবীন্দ্র-নজরুল’ শিরোনামে ওই অনুষ্ঠান আয়োজন করে সরকারি সংগীত কলেজ।

এতে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালিদের চেতনা জাগ্রত করে তাদের সংস্কৃত করেছেন।

“তারা আমাদের মানবিক মূল্যবোধের সংস্কৃতির শিক্ষা দিয়েছেন; দেশপ্রেমিক ও বিশ্বমানব হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। যে সংস্কৃতি আমাদের বিভক্ত করে না, এই সংস্কৃতি আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে।”

সংস্কৃতিমন্ত্রী আরও বলেন, “সংস্কৃতিচর্চার ধারাবাহিকতায় আমরা হোঁচট খেয়েছি। সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ শক্তিটি দুই মহাকবির শিক্ষা থেকে আমাদের দূরে সরাতে চাইছে।

“যারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের সঙ্গে পশুর তুলনা করলে পশুরাও লজ্জ্বা পাবে।”

সম্প্রতি গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় অন্তত ২৫ জন নিহত হয়। এ দুইটি ঘটনার কথা সংস্কৃতিকর্মীদের বারবার স্মরণ করার আহ্বান জানান নাট্যব্যক্তিত্ব নূর।

তিনি বলেন, “এসব ঘটনা আমাদের স্মৃতিতে না থাকলে আমাদের সংস্কৃতি চর্চা ব্যাহত হবে। অপশক্তিকে রুখে দাঁড়ানোর কথা মাথায় রেখে সমস্ত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে।”

বাঙালির সাংস্কৃতিক শক্তিকে সংহত করার আহ্বান জানিয়ে সংস্কৃতিকর্মীদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, “বাঙালি কখনও হার মানেনি, মানতে পারে না।”

সঙ্গীত কলেজের অধ্যক্ষ শামীমা পারভীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিসচিব আক্তারী মমতাজ উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন সঙ্গীত কলেজের উপাধ্যক্ষ কৃষ্টি হেফাজ।

আলোচনা পর্বের পর একক, দ্বৈত ও দলীয় সঙ্গীতের সুরের মূর্চ্ছনায় সরকারি সঙ্গীত কলেজের শিক্ষার্থীরা যেন বর্ষার আবহ নিয়ে আসে মিলনায়তনে। শিল্পীদের সুরে, তালে, ছন্দের খেলায় শিল্পীরা যেন শুধু গানই পরিবেশন করেননি বাদল দিনকেই চিত্রিত করেছেন সমগ্র মিলনায়তনে।

‘মেঘের পরে মেঘ জমেছে’ গানটির সমবেত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু করে পরবর্তীতে শিল্পীরা ধারাবাহিকভাবে পরিবেশন করেন ‘অঝর ধারায় বর্ষা ঝরে’, ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’, ‘ফিরিয়া যদি সে আসে’, ‘শাওন গগনে ঘোর’, ‘এসো গো জ্বেলে দিয়ে’, ‘বরষা ওই এলো বরষা’, ‘শ্রাবণ তুমি বাতাসে’, ‘পরদেশি মেঘ’, ‘ঝর ঝর ঝরে শাওনধারা’, ‘আজি ঝর ঝর মুখর’, ‘শাওন আসিলো ফিরে,’ ‘আজি বরিষণ মুখরিত’, ‘কেন মেঘের ছায়া’।

বর্ষাকে নিয়ে রবিঠাকুর ও নজরুলের এসব গানে নান্দনিকতার এক ধাপে এগিয়ে যায় অনুষ্ঠানটি। এতে আবৃত্তি পরিবেশন করেন কৃষ্টি হেফাজ ও নৃত্য পরিবেশন করেন শুক্লা।