বুনো হাতির পাশে পশু চিকিৎসক, পরিদর্শক আর মাহুত  

ভারত থেকে ভেসে আসা হাতিটির পরিচর্যায় সিরাজগঞ্জের চরে গেছেন বন বিভাগের পশু চিকিৎসক, পরিদর্শক ও মাহুত।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2016, 06:41 PM
Updated : 22 July 2016, 06:41 PM

দুই থেকে তিনের মধ্যে ভারতের প্রশিক্ষিত দল বাংলাদেশে পৌঁছলে তাদের নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে এ দেশের বিশেষজ্ঞরা।

বন্যপ্রাণী অঞ্চলের উপ বন সংরক্ষক সাহাব উদ্দিন জানান, শুক্রবার বিকালেই সিরাজগঞ্জের চরে হাতির দেখভালে পশু চিকিৎসক, বনবিভাগের পরিদর্শক ও মাহুত পাঠানো হয়েছে।

“আমাদের একটি প্রশিক্ষিত টিম ঘটনাস্থলে রয়েছে। হাতিটি নিরাপদে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুরছে, উৎসুক লোকজনকেও দূরে রাখতে হচ্ছে যাতে ঢিল না ছুড়ে।”

হাতিটিকে অজ্ঞান করে ওই এলাকা থেকে সরানোর মতো কোনো পরিবহন বা নৌ সুবিধা রয়েছে কিনা তা পর্যালোচনা চলছে বলে জানান এই বন কর্মকর্তা।

গত ২৬ জুন বুনো এই হাতিটি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার আন্তর্জাতিক মেইন পিলার নম্বর ১০৫২-এর কাছ দিয়ে বানের জলে ভেসে বাংলাদেশে আসে।

ভারতের আসাম রাজ্যের শিশুমারা পাহাড়ি এলাকা থেকে এই হাতি বাংলাদেশে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া হয়ে তিন দিন ধরে সিরাজগঞ্জের চরে হাতিটি রয়েছে।

ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত সিরাজগঞ্জের কাজিপুর থানার এসআই জুবায়দুল ইসলাম জানান, “হাতিটি ছিন্নার চরে শান্ত অবস্থায় রয়েছে। চরের কাঁশবনের পাশাপাশি কলাগাছও খাচ্ছে।”

এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও আসামের বন বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে হাতিটিকে কিভাবে সরানো যায় সে বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ নয়াদিল্লীতে এক বৈঠকে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের বন সংরক্ষক (বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল) অসিত রঞ্জন পাল।

নয়াদিল্লী থেকে শুক্রবার বিকালে দেশে ফিরে অসিত রঞ্জন পাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সুন্দরবন বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে নয়াদিল্লীতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেই হাতি উদ্ধারের বিষয়টি তুলে ধরেছি আমি।

“কেন্দ্রীয় সরকার এ নিয়ে তৎপর, আসামের প্রধান বনসংরক্ষকের সঙ্গেও কথা বলেছি। সেখানকার একটি প্রশিক্ষিত টিম তিন দিনের মধ্যে দেশে আসবে।”

 এ বন কর্মকর্তা বলেন, “এখন পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের চরে বুনো হাতিটি সুস্থ রয়েছে, কারো ক্ষতিও করে নি। ভালোভাবে খাবার পাচ্ছে।

“বুনো হাতিটি ভারতের সম্পদ। তাদের কারিগরি টিম এখানে পৌঁছানোও দরকার। ইতোমধ্যে টিমের সদস্যদের ভিসাও হয়েছে, সরকারি আদেশ জারি হলে তারা চলে আসবে। তাদেরকে পেলে দুইপক্ষ আলোচনা করে হাতিটির বিষয়ে যৌথভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব আমরা।”

এক মাস ধরে চরাঞ্চলে ঘুরে বেড়ানো বুনো হাতি নিয়ে বন বিভাগ চুপ মেরে বসে নেই বলে জানান বন্যপ্রাণী অঞ্চলের উপ বন সংরক্ষক সাহাব উদ্দিন।

মাসকাল ধরে হাতিটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন এ কর্মকর্তা।

শুক্রবার রাতে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভারতের কারিগরি দলটি আসতে বিলম্ব হলে পরবর্তী করণীয়ও আমাদের ঠিক রাখতে হচ্ছে।

“৫-৬ টন ওজনের বিশাল দেহী বুনোহাতির আচরণ পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে ট্রাঙ্কুলাইজ (অচেতন) করে কীভাবে স্বল্প সময়ে নিরাপদ স্থানে শিফট করা যায় এমন কর্মপরিকল্পনাও করতে হবে।”

২০০৪ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ ও আইইউসিএন পরিচালিত এক শুমারিতে দেখা যায়, দেশে হাতির সংখ্যা ১৯৬ থেকে ২২৭টি। ১১টি বন বিভাগে হাতির বিচরণ রয়েছে। বর্তমানে এ সংখ্যা ২৫০ থেকে ৩৫০ বলে দাবি করা হয়।

এছাড়া আরো ৮৩ থেকে ১০০টি হাতি মিয়ানমারের আরাকান, ভারতের আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে আসা যাওয়া করে। চিড়িয়াখানা ও বিভিন্ন সার্কাস মিলিয়ে বন্দি হাতি রয়েছে ৯৪-১০০টি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবাসস্থল ধ্বংস, চলাচল পথ বা করিডোর বাধাগ্রস্ত, হাতির চলাচল পথে মানব বসতি স্থাপনের কারণে লোকালয়ে বুনো হাতির তাণ্ডব বেড়েছে।