‘সুন্দরবন হত্যার’ পরিকল্পনা বাংলাদেশের নয়: এমাজ উদ্দিন

‘সুন্দরবন হত্যায়’ রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা দেশের বাইরে থেকে করা হয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজ উদ্দিন আহমেদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2016, 09:25 AM
Updated : 22 July 2016, 09:26 AM

শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ‘সুন্দরবন একটাই: সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ‘অনেকটা আড়ালে’ ওই চুক্তি করা হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমি বিশ্বাস করি না, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিকল্পনা আমাদের দেশের কারও করা। বাংলাদেশের কেউ জেনেশুনে এই ক্ষতি করবে- তা বিশ্বাস করা যায় না।”

সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপালে মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধিতায় আন্দোলন চলছে কয়েক বছর ধরে।

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির এ আন্দোলনে স্থানীয়দের অনেকের সায় রয়েছে; তাদের পক্ষে কিছু পরিবেশবিদের মতও রয়েছে। বিএনপি নেতারা ক্ষমতায় গেলে ওই প্রকল্প বাতিলের কথা বলে আসছেন।

এসব বিরোধিতার মধ্যেই চলতি মাসের ১২ তারিখে এ প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার। ভারতীয় হাইকমিশনারসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না।

বিএনপিপন্থি পেশাজীবীদের সংগঠন ‘শত নাগরিক কমিটি’র আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন বলেন, “দেশে যখন জঙ্গি হামলা হয়েছে, তখন ‘অনেকটা আড়ালেই’ এ চুক্তি করা হয়েছে।

“সুন্দরবন ধংসের আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ চুক্তি করা হয়েছে। কোনো বাংলাদেশিকে নয়, এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ভারতের একজনকে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্যের বিশ্বাস, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের কেমন ক্ষতি হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে বিষয়ে পুরোপুরি অবগত নন।

“আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনের ক্ষতির বিষয়টি পুরোপুরি জানলে এতবড় ক্ষতি হতে দিতেন না।”

সুন্দরবনকে বাংলাদেশের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, “অনেক ঝড়ঝঞ্জা থেকে বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচিয়েছে এই সুন্দরবন।”

সরকারকে ‘তার জেদ থেকে সরে’ দেশের অন্য কোথাও বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপনের আহ্বান জানান তিনি।

‘সেভ দ্য সু্ন্দরবন ফাউন্ডেশন’র চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সৈয়দ তোশারফ আলী, বাপার সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ও আইনজীবী হুমায়ুন কবির বুলবুল।

বক্তারা সুন্দরবন রক্ষায় প্রকল্পের চুক্তি বাতিলের আহ্বান জানান।

সভায় মূল প্রবন্ধে সিএইচআরএমের নির্বাহী প্রধান মোজাহেদুল ইসলাম মুজাহিদ বলেন, ‘সুপার ক্রিটিকাল’ পদ্ধতিতে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার ফলে শতকরা ১২ ভাগ দূষণ কম হবে- সরকার এমন দাবি করলেও ৮৮ ভাগ দূষণের কথা বলছে না।

কয়েকটি গবেষণা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রবন্ধে বলা হয়ে, এ প্রকল্প বাস্তয়িত হলে ২০ বছরে এলাকার শতভাগ পানি, ২০ ভাগ বাতাস ও৬৫ ভাগ মাটি দূষণের শিকার হবে।

“সরকারের পক্ষ থেকে কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির দাবি করা হলেও বাস্তবে ৪ হাজার ৬০০ লোক এতে কাজ করতে পারবে। কিন্তু রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন পাঁচটি জেলার ১৯ উপজেলার কয়েক লাখ লোক তাদের জীবিকা হারাবে। এরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল।”