জঙ্গি হামলা: বাংলাদেশ থেকে সরলো দুটি আন্তর্জাতিক সভা

রাজধানীর অভিজাত এলাকায় জঙ্গি হামলায় বিদেশি নাগরিক নিহত হওয়ার পর দুটি আন্তর্জাতিক সভার স্থান বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 July 2016, 01:06 PM
Updated : 31 July 2016, 07:30 PM

হামলার পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কারণে সংশ্লিষ্ট দুটি সংগঠন ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

দুটি আয়োজনের মধ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকায় অনুষ্ঠেয় এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টারের সম্মেলনে (অ্যাপনিক-৪২) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রায় ৫০০ বিদেশি নাগরিকের অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

ওই সম্মেলনের স্থানীয় আয়োজক সংগঠন হিসেবে রয়েছে লোকাল হোস্ট ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)।

সংগঠনটির সভাপতি এম এ হাকিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সম্প্রতি অ্যাপনিক কর্তৃপক্ষ মেইল করে জানিয়েছে, তারা ঢাকায় এ সম্মেলন করতে পারছে না।

“বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণকারীরা ঢাকায় সম্মেলনে অনুষ্ঠানে আগ্রহ প্রকাশ করছে না বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তার বিষয়টিও তারা উল্লেখ করেছেন।”

তবে এই সম্মেলনের স্থান পরিবর্তনের বিষয়ে শুক্রবার ওয়েবসাইটে দেওয়া দেওয়া অ্যাপনিকের বিবৃতিতে বলা হয়, গত সপ্তাহে বাংলাদেশে সহিংসতার ঘটনায় অ্যাপনিক কমিউনিটির মধ্যে ঢাকায় অ্যাপনিক ৪২ সম্মেলনে উপস্থিতির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ওই হামলার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দায় স্বীকার করেছে বলে জঙ্গি কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট সাইট ইন্টেলিজেন্স জানিয়েছে।  

এরপর যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের চলাচলে ‘আরও সতর্ক’ হতে বলে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে।

এ কারণে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করেই অ্যাপনিক নির্বাহী কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অ্যাপনিকের বিবৃতিতে জানানো হয়। পাশাপাশি সম্মেলনের পরিবর্তিত স্থান ও চূড়ান্ত তারিখ শিগগিরই ঘোষণা করার কথাও বলা হয়।

অবশ্য আইএসপিএবি সভাপতি জানান, এই সম্মেলন শ্রীলঙ্কা বা থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, “প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এই সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। ইন্টারনেট ও নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ এবং নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে নতুন প্রযুক্তি উপস্থাপন ছাড়াও এখানে ওয়ার্কশপ ও বিভিন্ন ধরণের গবেষণা উপস্থাপন করার কথা।

“ট্রেনার ও পেপার সাবমিশন মিলে বিদেশি নাগরিক ৫০০ জনের মতো আসার কথা ছিল। স্থানীয় অংশগ্রহণকারী ৫০০ জন ধরা হয়েছিল। সব মিলে আমরা একহাজার অংশগ্রহণকারীর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য হেটেল আমারি এবং ল মেরিডিয়ানে এ বুকিং ও দেওয়া হয়েছিল।  

এদিকে দুই সপ্তাহ পর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় মুদ্রাপাচার বিষয়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি সভাও বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দ্য এশিয়া প্যাসিফিক মানি লন্ডারিং গ্রুপ (এপিজিএমএল) নামে এই সংগঠন অবৈধ অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে থাকে, বাংলাদেশও যার সদস্য।

নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ থেকে সংগঠনটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

২৪ থেকে ২৮ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠেয় প্রায় সাড়ে তিনশ বিদেশি প্রতিনিধির অংশগ্রহণে সংগঠনটির বার্ষিক সভার স্থান সরানোর কথা জানিয়ে সোমবার যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতে কোনো কারণ দেখানো হয়নি।

ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ওই সভা সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হবে। সভার সময় ও সুনির্দিষ্ট স্থান পরে জানানো হবে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলেছে, ১ ও ২ জুলাই ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের এক ক্যাফেতে জঙ্গিদের হামলায় ১৭ বিদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা সভার স্থান পাল্টাতে বাধ্য করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বৈঠকটি আপাতত স্থগিত হয়েছে। কোথায় হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।”

তবে বাংলাদেশ থেকে বৈঠক সরিয়ে নেওয়ার পেছনে কোনো কারণ দেখানো হয়নি বলে জানান তিনি।

ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে গচ্ছিত রিজার্ভ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি করে নেওয়া ৮ লাখ ১০ কোটি ডলার ফেরত আনতে চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।

অর্থ পাচার নিয়ে এই সম্মেলন ফিলিপিন্স থেকে ওই অর্থ উদ্ধারের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সহায়তা করবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আশা।