সংবাদ মাধ্যমের ‘সুবুদ্ধি’ চান শিল্পমন্ত্রী

গুলশনা হামলার সম্প্রচার প্রসঙ্গে বিদেশি সংবাদমাধ্যমের উদাহরণ টেনে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, দেশের স্বর্থের প্রশ্ন যেখানে জড়িত, সেখানে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকেও ‘বুদ্ধির’ পরিচয় দিতে হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 July 2016, 12:48 PM
Updated : 31 July 2016, 07:29 PM

রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটির এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশের মিডিয়াগুলোকে একটু বুদ্ধি করতে হবে যে কোনগুলো প্রচার করলে আমাদের জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়।

মন্ত্রিসভা কমিটির এই বিশেষ বৈঠকে বাংলাদেশে বিতর্কিত ইসলামী বক্তা জাকির নায়েকের পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

আমু বলেন, “আমাদের দেশের মিডিয়াগুলোকে ঠিকভাবে তাদের বুঝতে হবে ,কোন প্রচার করলে আমাদের জাতীয় স্বার্থ শূণ্য হয় বা জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ হয়। দুটি জিনিস উপলব্ধি করে তারা যেন প্রচার চালায়।”

গত ১ জুলাই রাতে গুলশানের কূটনৈতিক এলাকার এক ক্যাফেতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশের টেলিভিশনগুলোতে সরাসরি সম্প্রচারের প্রতিযোগিতা নিয়ে এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সমালোচনা করেছিলেন।

সেই রাতে হামলার দু্ ঘণ্টার মাথায় র্যােবের অনুরোধে টেলিভিশনগুলো সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করলেও স্টুডিও থেকে রাতভর ঘটনাস্থলের খবর এ বিষয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিদের মতামত প্রচার করে, যা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের আপত্তি।  

ওই রাতে সিএনএন এর মত আন্তর্জাতিক টেলিভিশনে অনেকটা সময় গুলশানের খবর দেখানোর প্রসঙ্গ টেনে আমু বলেন, “তাদের মিডিয়া থেকে আজ আমরা কী দেখলাম? পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তুরস্ক আমেরিকাসহ বড় বড় ঘটনা তারা আধা থেকে দশ মিনিট দেখায়। অথচ গুলশানের ঘটনা সারাদিন সিএনএন দেখায়। 

“এটা তাদের মিডিয়ায় কেন আসবে,” প্রশ্ন করেন শিল্পমন্ত্রী।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে গুলশান ও শোলাকিয়ায় বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে মন্ত্রিসভা কমিটির এই ‘বিশেষ’ বৈঠক হয়, যাতে আমু সভাপতিত্ব করেন।

‘জুমার খুতবা পর্যবেক্ষণ’

শুক্রবার জুমার নামাজের খুতবায় ঈমাম যে বয়ান দেন, তাতে কী শিক্ষা থাকে তা পর্যবেক্ষণ করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে মন্ত্রীসভা কমিটির বৈঠকে।

আমু বলেন, “আজ আমরা কী লক্ষ্য করি? আজ যদি নবাবি মসজিদ মদিনার সামনে বোমা ফাটিযে বলা হয় যে কাবা শরীফে তাওয়াফ বন্ধ করতে হবে... এটাতো ধর্মীয় গোষ্ঠী হতে পারে না। তারা ধর্মের নাম ভাঙিয়ে জঙ্গিবাদ করে, অথচ তারা ধর্মের মূলে আঘাত করে। এটা প্রশ্রয় দেওয়া যায় না।”

যারা ওয়াজ মাহফিল করেন, যারা জুমার দিন বয়ান করেন, প্রকৃত ধর্মীয় অনুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান শিল্পমন্ত্রী।

নিরাপত্তা বৃদ্ধি

মন্ত্রী বলেন, জঙ্গিরা হঠাৎ কোথাও যাতে আক্রমণ করতে না পারে, সেজন্য পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ইপিজেডসহ যেসব বড় প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করে, তারা নিরাপত্তা চাইলে সেসব পুলিশি সহায়তা দেওয়া হবে বলে মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি জানান। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে বিদেশিরা আছেন, তাদের ‘সবার জন্য’ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে আমু বলেন, “আপনারা নিশ্চিত থাকুন, এ ঘটনার (গুলশান) প্রেক্ষিতে নিরাপত্তার যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

পুলিশ বাহিনীর আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আজ  আমাদের দেশে যে অবস্থা, তাতে পুলিশ বাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে আরও আধুনিক করা, গোয়েন্দাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

‘মাদকাসক্ত করে মগজ ধোলাই’

জঙ্গি কার্যক্রম নির্মূলে সামাজিক সচেতনা বৃদ্ধি এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করে এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি।

আমু বলেন, জঙ্গি দলগুলো ‘মাদকাসক্ত করার মাধ্যমে’ তরুণদের ঘর ছাড়া করে পরে বিভিন্ন ‘মোটিভেশন দিয়ে’ বিপথগামী করছে।

“আজকে যে ভালো ভালো ঘরের ছেলে-মেয়েরা নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে মাদকাসক্ত করা হয় প্রথমে। এ বিপথগামীতা রোধে সামাজিক বিপ্লব দরকার। সেই সামাজিক বিপ্লবে সব শ্রেণির মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।”

১৩টি মন্ত্রণালয় নিয়ে মন্ত্রিসভা কমিটি হলেও রোববারের বিশেষ সভায় নয়জন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসনে আমুর সভাপতিত্বে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার এই বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, বিমান  ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি অংশ নেন ।

এছাড়া পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন  বৈঠকে।