ভুলটা কোথায় ছিল, খুঁজছেন মুবাশ্বেরের বাবা

গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে তাদের মধ্যে মীর সামেহ মুবাশ্বেরের বাবা মীর হায়াতুল কবিরও ছেলের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2016, 02:58 PM
Updated : 31 July 2016, 07:24 PM

মোবাইল কোম্পানির কর্মকর্তা বাবা ও কলেজ শিক্ষিকা মায়ের ছেলে মুবাশ্বের পড়তেন ঢাকার উঁচু স্তরের পরিবারের সন্তানদের স্কুল স্কলাসটিকায়। পরিবারের সঙ্গে থাকতেন বনানী ডিওএইচএসের বাসায়।

সেই ছেলে কীভাবে জঙ্গি হয়ে উঠল তা বুঝে উঠতে পারছেন না বাবা হায়াতুল কবির।

“কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। কিছু একটা গোলমাল হয়েছে,” রয়টার্সকে বলেছেন তিনি।

মার সঙ্গে মীর সামেহ মুবাশ্বের

সাইট ইন্টেলিজেন্স হামলাকারীদের ছবি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাদের ছবির সঙ্গে মুবাশ্বেরের আগের ছবি মিলিয়ে এভাবে ফেইসবুকে তার পরিচয় তুলে ধরা হয়।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি গুলশানের একটি কোচিংয়ের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে নিখোঁজ হন মুবাশ্বের। ছেলের সন্ধানে বাবা-মা থানায় জিডি করেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমেও খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

চার মাস পর সেই মুবাশ্বেরের খোঁজ মেলে গত শুক্রবার রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিদের হাতে ২০ জনের প্রাণহানির পর। হামলার পরদিন আইএসের বরাতে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ সেখানে ‘হামলাকারী’ পাঁচজনের ছবি প্রকাশ করলে মোবাশ্বেরকে শনাক্ত করেন তার সহপাঠীরা।

পরে ওই ঘটনায় কমান্ডো অভিযানে নিহত জঙ্গিদের ছবি পুলিশ প্রকাশ করলে একজনের সঙ্গে মুবাশ্বেরের চেহারার মিল পাওয়া যায়।

ছেলের এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চেয়ে হায়াতুল কবির সিএনএনকে বলেন, “এটা ভয়ঙ্কর, অমানবিক, অবিশ্বাস্য। এই হত্যাকাণ্ড কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমি আমার ছেলের জন্য সকলের কাছে ক্ষমা চাই। এই পৃথিবীতে সে তার শাস্তি পেয়েছে।”

আগে বুঝতে পারলে ছেলেকে এ পথে যেতে দিতেন না দাবি করে তিনি বলেন, “যদি আগে থেকে জানতাম, আমার ছেলে এ ধরনের ঘটনা ঘটাবে, তাহলে আমি জীবন দিয়ে তা ঠেকাতাম।”

মীর হায়াতুল কবির

ছেলে সম্পর্কে হায়াতুল কবির বলেন, “তার (মুবাশ্বের) বয়স মাত্র ১৮ বছর। তার মধ্যে কোনো অস্বাভাবিকতা ছিল না। আমাদের পরিবারের বন্ধনও খুব জোরালো। আমি জানি না তার দোষ কতটুকু। নিজের ইচ্ছাতেই সে এমন ঘটনায় জড়িয়েছে কি না তা জানি না। নাকি কেউ তাকে ভুল বুঝিয়ে এ পথে এনেছে।”

তিনি জানান, মুবাশ্বের নিয়মিত কোরআন পড়ত। সেজন্য ছেলেকে কোরআনের ইংরেজি সংস্করণ কিনে দিয়েছিলেন তিনি।

“মাঝে মাঝে সে বলত, সে অ্যাকাউন্টেন্ট হতে চায়। আবার কখনও কখনও ধর্মতাত্ত্বিক বা সমাজতাত্ত্বিক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করত।”

মুবাশ্বের নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত এবং বাসার কাছের মসজিদে যেত বলে জানান তার বাবা।

বনানী ডিওএইচএসের এই ভবনে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন মুবাশ্বের।

মুবাশ্বেরের পড়ার টেবিল।

এখনও ছেলের লাশ দেখেননি জানিয়ে হায়াতুল কবির বলেন, “আমি এখনও বিশ্বাস করতে চাই, ওই সব লাশের মধ্যে আমার ছেলে নেই। সে ছিল শান্ত-শিষ্ট আদরের ছেলে।

“এটা আমার ছেলে নয়, এটা আমার ছেলে নয়।”

এর আগে মঙ্গলবার এই হামলার আরেক সন্দেহভাজন রোহান ইবনে ইমতিয়াজের বাবা এস এম ইমতিয়াজ খান (বাবুল) ছেলের কৃতকর্মের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।