জিম্মি সঙ্কট: ১২ ঘণ্টার ঘটনাক্রম

ঢাকার কূটনীতিকপাড়া গুলশানের একটি ক্যাফেতে জঙ্গিদের হানা দেওয়ার ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযানে মারা পড়েছে হামলাকারীরা, উদ্ধার হয়েছেন ১৩ জন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2016, 00:52 AM
Updated : 2 July 2016, 00:52 AM

জঙ্গিরা ২০ জন বিদেশিকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে বলে অভিযান শেষে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে হামলাকারীদের সঙ্গে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকও ছিল।      

সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক জঙ্গি কায়দায় হামলায় সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লেখক, ব্লগার, প্রকাশক; ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ভিন্ন মতাবলম্বীরা নিহত হলেও কূটনৈতিক এলাকার কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে এ ধরনের হামলা ও জিম্মি সঙ্কট বাংলাদেশে এই প্রথম।

এর আগে জিম্মি সঙ্কটের ঘটনা বাংলাদেশ দেখেছিল ১৯৭৭ সালে। মুম্বাই থেকে টোকিওগামী একটি জাপানি বিমানের যাত্রীদের জিম্মি করে বিমানটি ঢাকায় নামিয়েছিল দেশটির বামপন্থি বিদ্রোহী দল ‘ইউনাইটেড রেড আর্মি’। দলের কর্মীদের মুক্তি এবং দাবিকৃত অর্থ পাওয়ার পর জিম্মিদের বিভিন্ন দেশে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

কিন্তু গুলশানের ঘটনাটি সম্পূর্ণ আলাদা। এর পুরো ঘটনাটিই ঘটেছে বাংলাদেশে, হামলাকারীরাও বাংলাদেশি, তবে নিহতদের অধিকাংশ বিদেশি। 

গুলশানে ৭৯ নব্বর সড়কে লেকের পাড়ে বিদেশিদের কাছে জনপ্রিয় হলি আর্টিজান বেকারিতে শুক্রবার রাতে গুলি ছুড়তে ছুড়তে ঢুকে পড়ে এক দল যুবক। খবর শুনে তাদের ঠেকাতে গিয়ে মারা যান দুজন পুলিশ কর্মকর্তা।

এরপর রাতে র‌্যাব ওই এলাকায় অবস্থান নেয়। সকালে সামরিক বাহিনী শুরু করে কমান্ডো অভিযান, যার মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে এই জিম্মি সঙ্কটের।

অভিযান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে ঘটনাটিকে ‘জঙ্গি হামলা’ উল্লেখ করে বলেন, হামলাকারী ছয়জন ‘খতম’ হয়েছে, একজন ধরা পড়েছে।

হলি আর্টিজান বেকারি নামের ওই ক্যাফের সড়কেই কাতার ও রাশিয়ার দূতাবাস; পরের রাস্তায় নর্ডিক ক্লাব। এর কাছেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসা।

হলি আর্টিজন বেকারি গুলশান এলাকার বিদেশিদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয়। অনেককেই দেখা যেত এর খোলা লনে চাদর বিছিয়ে রোদ পোহাতে। অনেকে পোষা প্রাণিদেরও নিয়ে যেতেন। সবুজ লনে শিশুরাও খেলার পর্যাপ্ত জায়গা পেয়ে ছোটাছুটি করত।

জনপ্রিয়তা বাড়ায় মাসখানেক আগে এই বেকারিতে যোগ করা হয় আইসক্রিম বিক্রির পৃথক স্টল। তারও আগে মূল ফটকের ঠিক পাশেই বসানো হয় পিজা কর্নার, শনিবার সকালের অভিযানে যা গুঁড়িয়ে যায়।

পিজা কর্নারের কঙ্কালটা কেবল এখন দাঁড়িয়ে আছে। জঙ্গি হামলার সাক্ষী হয়ে সিলিং থেকে ঝোলা ফ্যানটি শনিবার সকালে বাতাসে হালকা দুলছিল।

উৎকণ্ঠার এই ১২ ঘণ্টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক, আলোকচিত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় যেসব তথ্য জানা গেছে, তা এরকম।

# ঘটনার শুরু শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশান ২ নম্বরের কাছে ৭৯ নম্বর রোডের হলি আর্টিজান বেকারিতে, যার মালিক একজন স্প্যানিশ নাগরিক বলে র‌্যাবের তথ্য।

# বেকারির সুপারভাইজার সুমন রেজা জানান, আট থেকে ১০ জন যুবক হঠাৎ সেখানে ঢুকে পড়ে; তাদের একজনের হাতে তলোয়ার এবং বাকিদের কাছে ‘ছোট আকারের বড় ম্যাগাজিনের’ আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।

# হামলাকারীরা ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি দিয়ে ভেতরে ঢোকে এবং ফাঁকা গুলি শুরু করে। তখন ভেতরে ২০ জনের বেশি বিদেশি ছিলেন।

# ওই বেকারির কয়েকশ গজ দূরে এক বাসা থেকে স্থানীয় এক বাসিন্দা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, তিনিও তার ঘর থেকে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি এবং গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন।

# সুমন রেজা বলেন, হামলাকারীরা ১০-১২টি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর তিনি নিজে ও আর্টিজানের আরেকজন কর্মী দোতলার ছাদ থেকে লাফিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন।

# ভেতরে থাকা সহকর্মীদের ফোন করার চেষ্টা করলেও তারা ধরছেন না বলে জানান সুপারভাইজার সুমন।

# প্রায় আধা ঘণ্টা পর সোয়া ৯টার দিকে সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয় এবং অসংখ্য গুলির শব্দ পাওয়া যায়। পুলিশ ওই বেকারিতে ঢোকার চেষ্টা করলে ভেতর থেকে গ্রেনেড ছোড়া হয় বলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন।

# ৭৯ নম্বর রোডের আরেকটি বাড়ির এক বাসিন্দা রাত ১০টার দিকে টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুলিশ নিচ থেকে লাউড স্পিকারে বলছে, উপরে কেউ থাকলে যেন বেরিয়ে আসে। তার সন্দেহ, হামলাকারীদের কেউ হয়ত ওই বাড়িতে ঢুকে লুকানোর চেষ্টা করছে।

হলি আর্টিজান বেকারির সুপারভাইজার সুমন রেজা

# ওই বাড়ির জানালা দিয়ে উল্টো দিকের রাস্তায় আহত অবস্থায় পুলিশের পোশাক ও হেলমেটধারী একজনকে পড়ে থাকতে দেখার কথাও জানান তিনি।

# ওই বেকারি ঘিরে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের মধ্যে পুলিশসহ আরও অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।

# বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিনকে গুরুতর আহত অবস্থায় ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। পরে আর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলামও একই হাসপাতালে মারা যান।

# পুলিশের কনস্টেবল আলমগীর ও প্রদীপ এবং গাড়িচালক আবদুর রাজ্জাক রানাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া।

# রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে ওই বেকারিতে অস্ত্রধারীরা পরপর দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। কিছু সময় পরপর সেখান থেকে গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল।

# ওই বিস্ফোরণের পর রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে র‌্যাবের ‌মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “সেখানে কিছু অস্ত্রধারী প্রবেশ করেছে। এইটাই আমাদের কাছে খবর। সেই রেস্তোরাঁর কিছু কর্মচারী বের হয়ে এসেছে। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। এখন আমরা চেষ্টা করছি, যাতে শান্তিপূর্ণভাবে এটা কিছু করা যায়।”

# ঠিক কতজন সেখানে আটক পড়েছেন সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি বেনজীর। তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করব, যারা ভেতরে আছেন, যারা খেতে এসেছিলেন, তাদের জীবনের নিরাপত্তা অবশ্যই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বিপথগামী যারা ভেতরে আছেন, তাদের সঙ্গেও আমরা কথা বলতে চাই।”

রেস্তোরাঁটির দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে

# বিভ্রান্তিকর খবর এড়াতে এবং আতঙ্ক সৃষ্টি ঠেকাতে টেলিভিশনগুলোকে গুলশান সঙ্কটের সরাসরি সম্প্রচার না করতে অনুরোধ করেন তিনি। এরপর টেলিভিশনগুলো ওই রাস্তায় সরাসরি সম্প্রচার থেকে সরে যায়। 

# তবে জিম্মি সঙ্কটের তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর সারাবিশ্বের নজর নিবদ্ধ হয় গুলশানের দিকে। বিবিসি, সিএসএনসহ বিশ্বের নেতৃত্বস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো টেলিভিশন ও ওযেবসাইটে নিয়মিত ঢাকার খবরের আপডেট দিতে থাকে।    

# হলি আর্টিজান বেকারিতে কতজন আটকা পড়েছেন তার নিশ্চিত সংখ্যা জানা না গেলেও উৎকণ্ঠা নিয়ে বেশ কয়েকজন স্বজন উপস্থিত হন ঘটনাস্থলে। তাদের মাধ্যমেই জানা যায় কয়েকজনের নাম।

# জিম্মিদের মধ্যে অন্তত সাতজন ইতালীয় ব্যবসায়ী রয়েছেন বলে ধারণার কথা জানায় ঢাকার ইতালিয়ান দূতাবাস।

# গুলশান ২ নম্বর সার্কেলের দিকে যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা আটকে দেওয়া হয় হামলার পরপরই। গুলশান-১ নম্বরে চেকপোস্টে দায়িত্বরত এএসআই এরশাদ বলেছেন, কোনো অপরাধী যাতে পালাতে না পারে, সেজন্য এই ব্যবস্থা।

# আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা কড়াকড়ির ফলে ঢাকার অভিজাত ওই এলাকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি আশপাশের বিপণিবিতান ও রেস্তোরাঁয় আসা লোকজন ও তাদের স্বজনরা ভোগান্তিতে পড়েন। তাদের বাড়ি ফিরতে হয় উৎকণ্ঠার মধ্যে।

# মধ্যরাতের পর থেকে গুলি ও বিস্ফোরণের ঘটনা কমে আসে এবং পরিস্থিতি থমথমে হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে রাত ১টার পর থেকে কমান্ডো অভিযানের প্রস্তুতির আঁচ পাওয়া যেতে থাকে।

# রাত ১টার দিকেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন নৌবাহিনীর একটি কমান্ডো দল;সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দলকেও দেখা যায়।

# এক পর্যায়ে ৭৯ নম্বর সড়কের মোড়ে পুলিশের কয়েকটি সাঁজোয়া যান এনে রাখা হয়। অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হয় ফায়ার সার্ভিস এবং বিদ্যুৎ বিভাগের গাড়ি।

ঘটনাস্থলে বেনজীর আহমেদ

# প্রস্তুতির মধ্যেই অভিযানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক, র‌্যাব প্রধান বেনজীর আহমেদসহ বিভিন্ন বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা কয়েক ঘণ্টা সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করে।

# ওই বৈঠক শেষে পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ফেরার পর ভোর ৫টার দিকে হ্যান্ড মাইকে সাধারণ পোশাকের সবাইকে সেখান থেকে সরে যেতে বলা হয়। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা সাদা পোশাকে সেখানে আছেন, তাদের সবাইকে বাহিনীর ভেস্ট পড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়।

# মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস এর দায় স্বীকারের খবর আসে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।

# আইএসের মুখপত্র আমাকে দাবি করা হয়, ‘তাদের’ এই হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন ৪০ জন, যাদের কয়েকজন বিদেশি।

# রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আমাক কয়েকজনের রক্তাক্ত লাশের ছবি দেখিয়ে সেগুলো হলি বেকারিতে জিম্মি বিদেশি নাগরিকদের বলে দাবি করেছে।

# ভোরের মেঘলা আকাশে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা হলি আর্টিজান বেকারির আশপাশের পুরো এলাকা ঘিরে অবস্থান নেয়।

# ভোর পৌন ৪টার দিকে পুলিশ ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী এক তরুণকে রক্তাক্ত অবস্থায় আটক করে নিয়ে যায়। ওই তরুণ নিজের পরিচয়, সেখানে অবস্থানের কারণ বা কীভাবে তিনি রক্তাক্ত হয়েছেন- সেসব বিষয়ে তিনি সন্তোষজনক কোনো বক্তব্য দিতে পারেননি বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য।

# সকাল সাড়ে ৭টার পর কমোন্ডো অভিযান শুরু হয়। এতে প্যারা কমান্ডোদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানকে অংশ নিতে দেখা যায়।

রেস্তোরাঁর পাশের এলাকায় র‌্যাব সদস্যদের তৎপরতা

# প্রথম আধা ঘণ্টায় সহস্রাধিক রাউন্ড গুলির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায় দূর থেকেও।

# হলি আর্টিজান থেকে আনুমানিক ৫০ গজ দূরের এক বাড়ির বাসিন্দা জানান, তিনি পাশের প্রায় খালি একটি ভবন থেকে টেলিস্কোপ লাগানো স্নাইপার রাইফেল দিয়ে গুলি ছুড়তে দেখতে পেয়েছেন। গুলি ছোড়া হয় সাঁজোয়া যান থেকেও।

# সোয়া ৮টার পর সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান হলি বেকারির দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢোকে। ওই কম্পাউন্ডের বাইরের দিকে থাকা পিজা কর্নার এ সময় গুঁড়িয়ে যায়। এসময় লেক ভিউ ক্লিনিকের পার্কিংয়ে রাখা দুটি গাড়ি দুমড়ে যায়।

# অভিযানের শেষ দিকে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ফায়ার এক্সটিংগুইশার নিয়ে ওই ভবনের দিকে যেতে দেখেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক। কিছু সময় পর একদল চিকিৎসকও স্ট্রেচার নিয়ে ওই ক্যাফের ভেতরে যান।

# কমাণ্ডো অভিযানে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসেন কয়েকজন।

# সকাল ৯টার পর আরও কয়েক দফা বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায় ক্যাফের ভেতর থেকে। পরে জানা যায়, হামলাকারীদের পরিত্যক্ত গ্রেনেডে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিট।

# ৯টার দিকে ভবনটির বাইরে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।

# উৎকণ্ঠা নিয়ে রাতভর ৭৯ নম্বর রোডের মোড়ে অপেক্ষায় থাকা এক স্বজনের প্রশ্নের জবাবে সকালে অভিযান শেষে পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, “১৩ জন সেইফ।”

# ওই ক্যাফেতে শুক্রবার রাতে খেতে গিয়ে যারা জিম্মি হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে কতজন নিহত হয়েছেন- সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা।

# অভিযানের পর হলি আর্টিজান বেকারির ভেতরে অন্তত পাঁচ হামলাকারীর লাশ পাওয়ার খবর দেন এক র‌্যাব কর্মকর্তা।

অভিযান শেষে হলি আর্টিজান বেকারি প্রাঙ্গণে সেনা সদস্যরা

# জিম্মি সংকটে তারুশি নামে এক ভারতীয় তরুণীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন তার বন্ধু রইস হাসান খানের বাবা রাশেদ হাসান খান। তারিসি ও রইস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতে (বার্কলে) পড়াশোনা করেন।

# দুপুর পৌনে ১২টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনাটিকে জঙ্গি হামলা আখ্যায়িত করে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে নারী-শিশুসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ৬ জঙ্গি গুলিতে নিহত হয়েছেন। একজন আটক।

# দুপুর দেড়টায় সংবাদ সম্মেলন করে অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরে আইএসপিআর। এতে জানানো হয়, ২০ বিদেশি জিম্মিকে রাতেই হত্যা করা হয় ধারাল অস্ত্রের আঘাতে। তিন বিদেশিসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

# হামলাকারীরা মারা যাওয়ার পর একটি একে-২২ রাইফেল,  চারটি পিস্তল, চারটি অবিস্ফোরিত আইইডি উদ্ধার করা হয় বলে জানায় আইএসপিআর।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী

# সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ নামের সমন্বিত এই অভিযান সকালে ৭টা ৪০ মিনিটে শুরু হয়ে সকাল সাড়ে ৮টায় শেষ হয়। “প্যারা কমান্ডোরা ৭টা ৪০ মিনিটে অপারেশন শুরু হয়, ১২ থেকে ১৩ মিনিটের মধ্যে সকল অপরাধীকে নির্মূল করে সকাল সাড়ে ৮টায় অভিযানের সফল সমাপ্তি ঘটে।”