নিরাপত্তার কড়াকড়ি: উৎকণ্ঠা নিয়ে ঘরে ফেরা

ঈদের আগে গুলশানে রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা কড়াকড়ির ফলে ঢাকার অভিজাত ওই এলাকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি আশপাশের বিপণিবিতান ও রেস্তোরাঁয় আসা লোকজন ও তাদের স্বজনরা ভোগান্তিতে পড়েন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2016, 11:30 PM
Updated : 31 July 2016, 06:44 PM

শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশান ২ নম্বরে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা শুরুর পর বিভিন্ন টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হয়। এক পর্যায়ে র‌্যাব মহাপরিচালকের কথায় তা বন্ধ হলেও খবর ছড়িয়ে পড়ে পাশের বনানী এলাকার মার্কেট-রেস্তোরাঁয় আসা লোকজনের মধ্যে।

উদ্বেগ নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পরিবহন সংকটে পড়েন অনেকে। কোনো রকমে গাড়ি পেলেও সেখান থেকে বেরিয়ে আসতেও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

মধ্যরাতে কাকলী, মহাখালী, হাতিরঝিল, বাড্ডা, নতুনবাজার, বারিধারা থেকে গুলশানমুখী সড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় ঘরে ফিরতে সমস্যায় পড়ার কথা জানান অনেকে।

তাদের একজন আবু বকর সিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বনানী ১১ নম্বরের একটি রেস্তোরাঁয় খেয়ে রাত পৌনে ১২টার দিকে নামার পর দেখেন- রাস্তায় প্রচুর মানুষ দাঁড়িয়ে, কিন্তু কোনো পরিবহন নেই।

প্রায় আধা ঘণ্টা পর একটি সিএনজি অটোরিকশা পেলেও তাকে প্রায় তিনগুণ ভাড়া গুণতে হয়।

“তখন বাসায় ফেরাটাই গুরুত্বপূর্ণ। ছয় গুণ বেশি ভাড়া চাইলেও আমাকে ঘরে ফিরতে হবে।”

গাড়ি পাওয়ার পর নতুন সমস্যায় পড়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “দেখলাম সব রাস্তাই বন্ধ। কোনো রাস্তা দিয়েই বের হওয়া যাচ্ছে না। কাকলী দিয়ে বের হওয়া যাচ্ছে না, গুলশানের দিকেতো যাওয়াই যাচ্ছে না। পুরো বনানী ঘুরে অবশেষে মহাখালী দিয়ে বেরিয়ে আসি।”

রাতের খাবারের জন্য প্রায়ই বনানী এলাকার রেস্তোরাঁয় যাওয়া আবু বকর জানান, এই এলাকার রেস্তোরাঁগুলোতে রাত ১১টা পর্যন্ত শেষ অর্ডার নেওয়া হয়। খাবার দেওয়ার পর অতিথিদের খেয়ে বিদায় নিতে নিতে ১ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। অনেক রেস্তোরাঁয় আবার সেহরিও হয়। ভোর রাত পর্যন্ত ওই এলাকার রেস্তোরাঁ খোলা থাকে।

এছাড়া ঈদ সামনে রেখে এই এলাকার শপিংমলগুলোতে ১-২টা পর্যন্ত মানুষ কেনাকাটা করে।

“তাই মোটামুটি গভীর রাত পর্যন্ত এখানে ব্যাপক মানুষের আনাগোনা দেখা যায়। কিন্তু রাতে গুলশানের ঘটনা টিভিতে লাইভ দেখানোর পর সব মানুষ রাস্তায় নেমে এলে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। অনেক জায়গায় আবার বিভিন্ন শপিং মল বন্ধ করে দেওয়ায় মানুষ রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্যও হয়।”

একসঙ্গে অনেক মানুষ রাস্তায় নামায় গাড়ির অভাবে অনেকে অসহায় অবস্থান পড়েন।

“আবার যাকে সন্দেহ হয় তাকেই পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছিল, যা সেখানে নতুন আতঙ্ক ছড়ায়,” বলেন আবু বকর।

বনানীর এক ফ্যাশন হাউজের কর্মী রোকসানা কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ঈদের আগের এই সময়ে রাত ২টা পর্যন্ত তাদের  বিক্রি চলতে থাকে। অন্যদিনের মতো বেচাবিক্রি চলার মাঝে রাত সাড়ে ১০টার দিকে একজন ক্রেতা ঘটনা জানতে পেরে চিৎকার দিয়ে তা অন্যদের জানিয়ে দেন।

“এরপর দোকান খালি হয়ে হয়ে যায়। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকলেও আর কোনো ক্রেতা আসেনি।”

‘হাক্কা ঢাকা’র বনানী শাখার ব্যবস্থাপক মিরাজ জানান, সেহরিতে তাদের ৩০ জনের খাবার বুকিং দেওয়া ছিল। অতিথিরা সবাই রিজার্ভেশন বাতিল করায় সেহরিতে রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখেন তারা।

হামলার সময় বনানীতে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক তাজিন আজিজ চৌধুরী ছেলে সাহির।

সংকট পেরিয়ে তিনি বাসায় ফেরার পর স্বস্তি ফেরে মায়ের: “বন্ধুরা, আমার ছেলে সাহির শেষ পর্যন্ত এই মধ্যরাতে বাসায় ফিরতে পেরেছে। আলহামদুলিল্লাহ।”  

বনানী কবরস্থানের পাশে এক স্বজনের রেস্তোরাঁয় সাহির গাড়ি ফেলে আসেন বলে ফেইসবুকে জানান তাজিন আজিজ চৌধুরী। এক স্বজনের তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে পায়ে হেটে বনানী কবরস্থান পার হয়ে বেশ কিছু পুলিশ চেক পয়েন্ট পেরিয়ে অন্য স্বজনের গাড়ি ধরে বাড়ি ফেরেন তারা।

সাহিরকে উদ্বৃত করে তাজিন বলেন, “সেখানকার বাইরে এখন উন্মত্ত যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।”

এই দুঃস্বপ্নের সমাধানে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনার পাশাপাশি সম্মুখ সারিতে থাকা আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং আটকে পড়া মানুষরা যাতে তাদের পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলিত হতে পারেন সেই কামনাও জানান তিনি।

গুলশানের ওই রেস্তোরাঁ ঘিরে গুলি-বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২০ জন।

ঘটনার পর থেকেই রেস্তোরাঁটি ঘিরে রেখেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ভোররাতেও সেখানে জিম্মি দশার অবসান ঘটেনি।