গুলশানে অভিযানের প্রস্তুতি, সরে যেতে নির্দেশ

ঢাকার কূটনৈতিক এলাকা গুলশানের এক ক্যাফেতে অস্ত্রধারীর হামলার পর জিম্মি সঙ্কটের অবসানে কমাণ্ডো অভিযানের প্রস্তুতির ইংগিত মিলেছে সার্বিক পরিস্থিতিতে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2016, 10:42 PM
Updated : 2 July 2016, 00:27 AM

ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে নৌবাহিনীর একটি কমান্ডো দল; ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে হালকা বৃষ্টির মধ্যে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা ওই ভবনের আশপাশের পুরো এলাকা ঘিরে অবস্থান নিয়েছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অপরাধ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদক লিটন হায়দার জানিয়েছেন।

অভিযান চালানো হলে কখন, কীভাবে তা চালানো হবে- সে বিষয়ে কোনো তথ্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কর্মকর্তা প্রকাশ করছেন না।

এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক, র‌্যাব প্রধান বেনজীর আহমেদসহ বিভিন্ন বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা শনিবার প্রথম প্রহরের পর কয়েক ঘণ্টা সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে একটি সূত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক সুমন মাহবুবকে নিশ্চিত করেছেন।

লিটন হায়দার জানান, ওই বৈঠক শেষে পুলিশ ও র‌্যাব কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ফেরার পর ভোর ৫টার দিকে হ্যান্ড মাইকে সাধারণ পোশাকের সবাইকে সেখান থেকে সরে যেতে বলা হয়।  

“গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা সাদা পোশাকে সেখানে আছেন, তাদের সবাইকে বাহিনীর ভেস্ট পড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”    

প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে অবস্থানরত অজ্ঞাত সংখ্যক অতিথি সেখানে আটকা পড়েন।

সেখান থেকে অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসতে পারা একজন বলেছেন, অন্তত ২০ জন ওই ক্যাফের ভেতরে আছেন, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিদেশি। তবে গণমাধ্যমে আসা তথ্য অনুযায়ী এই সংখ্যা আরও বেশি।  

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে, যদিও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ওই দাবি সঠিক কি না- তা বলার সময় এখনও আসেনি।

র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ রাত ১১টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, যারা ভেতরে আছেন, তাদের জীবনের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

“এখন আমরা চেষ্টা করছি, যাতে শান্তিপূর্ণভাবে এটা কিছু করা যায়।... বিপথগামী যারা ভেতরে আছেন, তাদের সঙ্গেও আমরা কথা বলতে চাই।”

হামলাকারীরা কিছু দাবি-দাওয়ার কথা বলেছে- এমন তথ্য কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে এলেও পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

লিটন হায়দার বলেন, মধ্যরাতের পর থেকে গুলি ও বিস্ফোরণের ঘটনা কমে আসে এবং পরিস্থিতি থমথমে হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে রাত ১টার পর থেকে কমাণ্ডো অভিযানের প্রস্তুতির আঁচ পাওয়া যেতে থাকে।

এক পর্যায়ে ৭৯ নম্বর সড়কের মোড়ে পুলিশের কয়েকটি সাঁজোয়া যান এনে রাখা হয়। অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি প্রস্তুত রাখা হয় ফায়ার সার্ভিস এবং বিদ্যুৎ বিভাগের গাড়ি।

“ভোরের আগে আগে পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, যে কোনো সময় উদ্ধার অভিযান শুরুর প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ওই ক্যাফের কাছাকাছি  পৌঁছানোর কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন,” বলেন লিটন।

সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক জঙ্গি কায়দায় হামলায় সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লেখক, ব্লগার, প্রকাশক; ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ভিন্ন মতাবলম্বীরা নিহত হলেও কূটনৈতিক এলাকার কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে এ ধরনের হামলা ও জিম্মি সঙ্কট এই প্রথম।

হামলার পর পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে অন্তত দুই পুলিশ  কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২৫ জন।