বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় সকালে টিএসসিতে স্মরণিকাটি প্রকাশ্যে এলে প্রতিবাদের মুখে সেটি বাজেয়াপ্তের পাশাপাশি প্রকাশনার দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ রেজাউর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুপুরে ওই ঘোষণা দেওয়ার পর উপাচার্য আরেফিনের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
দুপুরের পর থেকে ভিসির বাংলোর সামনে সমবেত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভের এক পর্যায়ে উপাচার্যের বাংলোর প্রধান ফটকের বাইরে তালা লাগিয়ে দেন।
বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ছাত্রলীগের এক কর্মী প্রথম ভিসির পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান শুরু করেন।
‘ভিসির গদিতে/ আগুন জ্বালো এক সাথে’, ‘এক দফা এক দাবি/ভিসি তুই কবে যাবি’, ‘জামায়াত শিবির রাজাকার/এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘ভিসি তুই রাজাকার/এই মুহূর্তে গদি ছাড়’।
এরপর স্লোগান ধরেন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স।
এ সময় স্লোগান ওঠে- ‘ভিসি তুই রাজাকার/এই মুহূর্তে গদি ছাড়’, ‘হই হই রই রই/ভিসি তুই গেলি কই’, ‘এক দফা এক দাবি/ভিসি তুই কবে যাবি’, ‘আমার সোনার বাংলায়/আরেফিনের ঠাঁই নাই’, ‘রাজাকার আরেফিন যেখানে/ লড়াই হবে সেখানে’, ‘আরেফিন তুই বেরিয়ে আয়/ধোলাই হবে রাস্তায়’, ‘আরেফিনের চামড়া/তুলে নেব আমরা’।
এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনুর নেতৃত্বে একদল কর্মী ভিসির বাসভবনের দিকে জুতা প্রদর্শন করেন।
বিক্ষোভের মধ্যে বিকাল সোয়া ৫টার দিকে ভিসির বাংলো থেকে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ বের হওয়ার চেষ্টা করেন। তবে বাইরের পরিস্থিতি দেখে বাংলোর কর্মচারীরা ফটকের ভেতর থেকে তালা লাগিয়ে দেন।
এর ১৫ মিনিট পরে ফটকের বাইরেও তালা লাগিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। পরে রাত সোয়া ৮টার দিকে ফটকের তালা খুলে বাংলোর ভিতরে যান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন। সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ দুই নেতাও তাদের সঙ্গে উপাচার্যের কাছে যান। ঘণ্টাখানেক পরে বেরিয়ে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
বিক্ষোভকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ইফতার করেন উপাচার্যের বাংলোর সামনে রাস্তায়। এ সময় খাবারের উচ্ছিষ্টগুলো উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে ছুড়ে ফেলতে দেখা যায়।
সার্বিক বিষযে প্রক্টর আমজাদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিক্ষোভকারী ছাত্রদের দাবি ছিল, রেজিস্ট্রারকে অপসারণ করতে হবে। এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়, আমি তা বিক্ষোভকারীদের পড়ে শোনাই।
“তারপরও কীভাবে কেন বিক্ষোভ হচ্ছে, ভিসির পদত্যাগ চাইছে, তা বুঝতে পারছি না।”
বিক্ষোভকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের বিষয়ে কিছু বলছি না। যেহেতু বঙ্গবন্ধু সংশ্লিষ্ট একটা বিষয় নিয়ে ছেলেরা বিক্ষোভ করছে, আমি এটাকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনই বলব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মরণিকায় ‘স্মৃতি অম্লান’ শিরোনামে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর বর্ণনা দিতে গিয়ে জিয়াউর রহমান হলের ক্ষেত্রে জেনারেল জিয়াকে ‘বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, সাবেক সেনাপ্রধান ও মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
অপরদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে লেখা হয়েছে, তিনি “বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক নেতা, যিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব এবং বাংলাদেশের জাতির জনক হিসেবে বিবেচিত।”
স্মরণিকায় জগন্নাথ হলকে ‘সংখ্যালঘুদের’ হল হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে।
ওই ক্রোড়পত্রের প্রকাশনার দায়িত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ রেজাউর রহমান।
পরে বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ কর্মীরা বেলা ১২টা থেকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে তার কার্যালয়ে তালাবন্ধ করে রাখে। পরে প্রক্টর গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন।
এ ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতির পর বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “এটা বাইলাইন পাবলিকেশন ছিল। সেই প্রবন্ধের রচয়িতার ওপর দায় বর্তাবে। তাকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।”
২০০৮ সালের ভোটে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিএনপির আমলে নিয়োগ পাওয়া উপাচার্য এস এম এ ফায়েজ বিদায় নেন। এরপর ২০০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিককে উপাচার্যের দায়িত্ব দেয় সরকার।
এর প্রায় সাড়ে চার বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়। নির্বাচনের পর ২০১৩ সালের ২৫ অগাস্ট প্যানেলে থাকা তিনজনের মধ্যে আরেফিন সিদ্দিককেই ফের চার বছরের জন্য উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট পর্যন্ত মেয়াদ রয়েছে তার।