লম্বা ছুটির শুরুতে ‘স্বস্তির’ ঈদযাত্রা

ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাস ও ট্রেন স্টেশনে অপেক্ষার ভোগান্তি গত কয়েক বছর ঈদযাত্রার সঙ্গীতে পরিণত হলেও এবারের চিত্র ভিন্ন।

ওবায়দুর মাসুমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2016, 07:52 AM
Updated : 1 July 2016, 09:24 AM

ঈদের ছুটি শুরু হলেও রাজধানীর বাস টার্মিনাল ও রেল স্টেশনে শুক্রবার সকালে দেখা যায়নি তেমন ভিড়। কোনো কোনো কাউন্টারে পাওয়া গেছে ঈদের টিকেট। অবশ্য ‘কিছুটা দেরিতে’ গাড়ি ছাড়ার অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।

পরিবহন মালিকরা বলছেন, ঈদে লম্বা ছুটি থাকায় যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় নেই। শুক্রবার সকালে অনেক গাড়ির আসন ফাঁকা যাচ্ছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আফজাল হোসেন ঈদ করতে যাবেন গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়।

শুক্রবার সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আগেই টিকেট কাটা ছিল। গাড়ি ছাড়তে আধঘণ্টা দেরি হচ্ছে। শুনেছি এবার যানজট নেই, পরিস্থিতি অনেক ভালো।”

ঢাকায় চাকরি করলেও মেয়ে কুমিল্লায় এবং ছেলে রংপুরে পড়াশোনা করে জানিয়ে আফজাল বলেন, “লম্বা ছুটি পেয়েছি, এবার পরিবারকে ভালোমতো সময় দিতে পারব।”

রোজার ঈদ সামনে রেখে শবে কদরের পরদিন আগামী ৪ জুলাই সোমবার সরকারি ছুটি ঘোষণা হওয়ায় টানা নয় দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা।

শুক্রবার শুরু হয়েছে টানা নয় দিনের ঈদের ছুটি। ৯ জুলাই ছুটি শেষে আগামী ১০ জুলাই কাজে যোগ দেবেন সরকারি চাকুরিজীবীরা।

ঈদের ছুটি শুক্রবার শুরু হলেও বৃহস্পতিবার শেষ অফিস সেরেই ঢাকা ছেড়েছেন অনেকে। পরিবহন মালিকরাও বলছিলেন একই ধরনের কথা।

গাবতলীতে শ্যামলী পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক পারভেজ বলেন, ৪০ শতাংশ মানুষ বৃহস্পতিবার ঢাকা ছাড়ায় শুক্রবার তেমন ভিড় নেই। ২৭ রোজার দিন ভিড় হতে পারে।

দিনাজপুরের তাহমিদুল ইসলাম চাকরি করনে রাজধানীর মহাখালীর একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে।

গ্রামের বাড়ি ঈদ করতে গাবতলী থেকে হানিফ পরিবহনের শুক্রবার সকাল ৯টার বাসের টিকেট কেটেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “সোয়া ১০টায়ও সে গাড়ি টার্মিনালে আসেনি।”

নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর যেতে হানিফ পরিবহনের টিকেট কটেছিলেন।সকাল ৯টায় গাড়ি ছাড়ার কথা থাকলেও ১০টায়ও ছাড়েনি।

অবশ্য গাড়ি ছাড়তে এক দেড় ঘণ্টা দেরি হলেও খুব বিরক্ত নন আসাদুজ্জামান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বহুদিন পর বাড়ি যাচ্ছি, খুব ভালো লাগছে। অনেক ঘোরাঘুরি করব, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সময় দেব।”

তবে হানিফ পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন দাবি করেন, ‘ঘড়ি ধরেই’ গাড়ি ছাড়ছেন তারা।

অবশ্য গাড়ি ছাড়তে ‘যেটুকু দেরি হচ্ছে’ সেজন্য ‘হালকা যানজটকে’ দায়ী করেন তিনি।

গাবতলীতে গোল্ডেন লাইন পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক সোহেল হাওলাদার বলেন, তাদের সকাল ৮টার গাড়িতে সাতটি সিট ফাঁকা গেছে।

গাবতলী বাস টার্মিনালে হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক সঞ্জিত কুমার দাস জানান, সকালে তাদের ১০টি গাড়ি ছাড়ার কথা থাকলেও যাত্রী কম থাকায় ছয়টি ছেড়েছেন।

“এরপরেও প্রতি গাড়িতে ৮ থেকে ১০টা করে আসন ফাঁকা যাচ্ছে। উত্তরবঙ্গের যাত্রী থাকলেও খুলনা-বরিশাল রুটের যাত্রী কম; লম্ব ছুটির জন্য এই অবস্থা।”

ঈদযাত্রা নিয়ে প্রশ্ন করতেই ঠাকুরগাঁওয়ের বাসিন্দা ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক কাব্য করেই বলেন, “শুধুই অপেক্ষার পালা, কখন গাড়ি ছাড়বে। অনেক দিনের চেনা-পরিচিত গ্রামে যাব, মাটির গন্ধ টানছে। ফজলি, আম্রপালি এখনও শেষ হয়নি, ওগুলো খাব।”

শুক্রবার গাবতলীসহ বিভিন্ন বাস টার্মিনালে গিয়ে সহজেই বাসের টিকেট পাওয়ার কথাও জানান কয়েকজন।

মাগুরা যেতে চট্টগ্রাম থেকে শুক্রবার সকালে গাবতলী এসেছেন কাজী সোহাগ।

নির্ধারিত ভাড়ায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসতে পারলেও ঢাকা থেকে মাগুরা যেতে ৪০০ টাকার টিকেট ৫৫০ টাকায় কিনতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

“টিকেটের জন্য একটু ঘুরতে হলেও টিকেট পেয়েছি- এটাই স্বস্তির,” বলেন সোহাগ।

যশোর যেতে গাবতলী বাস টার্মিনালে অপেক্ষা করছিলেন পূবালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা ফারজানা তামান্না।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গ্রামের বাড়ি যাওয়া সবসময়ই আনন্দের। এবার ছুটি বেশি, ঈদও হবে স্পেশাল।”

শুক্রবার সকালে কমলাপুল রেল স্টেশনে গিয়েও তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। বেলা ১২টা পর্যন্ত স্টেশন থেকে ১৪টি ট্রেন ছেড়ে গেছে।

এর মধ্যে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সোয়া এক ঘণ্টা এবং খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট পরে ঢাকা ছেড়েছে বলে জানান এক কর্মকর্তা জানান।

খুলনা যেতে আগেভাগে স্টেশনে এসেও ‘ঠিক সময়ে’ ট্রেনের দেখা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সরকারি কর্মকর্তা শিব্বির আহমেদ।

খুলনার যাত্রী গৃহবধূ উম্মে কুলসুমও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে অভিযোগ করেন, ঠিক সময়ে ট্রেন না ছাড়ার।

কমলাপুর রেল স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুক্রবার বিভিন্ন ধরনের ১৩২টি ট্রেন কমলপুর আসা-যাওয়া করবে।

দেরিতে স্টেশনে পৌঁছায় দুটি ট্রেন দেরিতে ছাড়তে হয়েছে বলে জানান তিনি।