সাক্ষীর নিরাপত্তায় কার্যকর পদক্ষেপ কেন নয়: হাই কোর্ট

ফৌজদারি মামলায় সাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে হাই কোর্ট।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2016, 11:12 AM
Updated : 30 June 2016, 03:31 PM

চট্টগ্রামের এক মামলায় সাক্ষী হওয়ায় পর হয়রানির অভিযোগ তুলে ওই সাক্ষীর করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর অবকাশকালীন বেঞ্চ এ রুল দেয়।

আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, চট্টগ্রামের মহানগর পুলিশ কমিশানার, কোতোয়ালি থানার ওসিসহ ১০ বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

রুল বিচারাধীন অবস্থায় সাক্ষী ও রিট আবেদনকারী কমল কুমার দেব নাথ ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী চৌধুরী সামসুল আরেফিন ও ফাহিমা বাররীন।

আইনজীবী সামসুল আরেফিন আদেশের বিষয়টি বৃহস্পতিবার জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইয়াবা উদ্ধারের ওই মামলায় কমল নাথ সাক্ষী হওয়ার পর থেকেই জামিনে মুক্ত আসামি তাকে হুমকি দিয়ে আসছে। এর প্রতিকার চেয়ে সাধারণ ডাইরিও করেন তিনি।

“বিচারিক আদালত পুলিশকে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন। তবে পুলিশ মনগড়াভাবে তদন্ত করে। পরবর্তীতে আসামির হুমকির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। আসামি ও পুলিশের এক ধরনের যোগাসাজশো এখন কমল নাথের স্বাভাবিক জীবনযাপন দুরূহপ্রায়। এসব কার্যক্রম নাগরিকের মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত সংবিধানের  ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৬ ও ৪৩ অনুচ্ছেদ পরিপন্থি।”

“এসব কারণে ফৌজদারি মামলায় সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হলে আদালত রুলসহ ওই আদেশ দিয়েছেন।”

মামলার বিবরণে জানা যায়, ১১৭৫ পিস ইয়াবা উদ্ধারের এক মামলায় চট্টগ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী কমল কুমার নাথ সাক্ষী হন। ওই ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় ২০১১ সালের ২৪ মার্চ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে অশোক বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কতোয়ালী থানায় মামলা হয়। 

কমল কুমার নাথের আইনজীবীরা বলেন, সাক্ষী হওয়ার পর থেকে আসামি কমলকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। ২০১৫ সালে মামলায় সাক্ষী দেওয়ার পর জামিন মুক্ত ওই আসামির হুমকির পরিমাণ বাড়ে। এ অবস্থায় আসামি অশোকের জামিন বাতিলের দরখাস্ত করেন সাক্ষী কমল। পাশাপাশি কতোয়ালী থানায় ২০১৫ সালের ১৪ অক্টোবর সাধারণ ডায়েরি করেন।

আইনজীবীরা জানান, তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এসআই শিবু চন্দ্র দেবকে। তার তদন্ত শেষে মনগড়া প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে নারজি দিলে চট্টগ্রাম মহানগর মুখ্য হাকিম নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দেন। কতোয়ালী থানার ওসি তদন্ত শেষে পূর্ববর্তী তদন্ত কর্মকর্তার ন্যায় একই রকম প্রতিবেদন দেন। এর বিরুদ্ধেও নারাজি আবেদন করা হয়েছে এবং আসামির জামিন বাতিলের আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

এ অবস্থায় গত ১৫ ফেব্রয়ারি পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর ‘সিকিউরিটি সেলের’ মাধ্যমে পুরো ঘটনা তদন্ত করা এবং সাক্ষী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আবেদন করেন কমল নাথ।

এতে সাড়া না পেয়ে ২৭ জুন বিবাদীর নিষ্ক্রিয়তা এবং সাক্ষী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন তিনি। পরে শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ আদেশ দেয়।

১৫ ফেব্রুয়ারি করা ওই আবেদন নিষ্পত্তিতে বিবাদীর নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তাও রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে বলে জানান আইনজীবী সামসুল আরেফিন।

আবেদনের যুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় সাক্ষীরা নিজের ও তার পরিবারের নিরাপত্তার ভয়ে মাদকদ্রব্য ও ডাকাতি মতো মামলায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে বিচার চলার সময় সাক্ষী দিতে আসেন না।

“কেউ কেউ দিতে আসলেও সঠিকভাবে সাক্ষ্য দিতে পারেন না, ফলে বৈরী সাক্ষী বলে ঘোষিত হন। এতে অনেক দোষী ব্যক্তিকে বিচারের মুখোমুখি করা যায় না, আবার অনেক সময় নিরাপরাধ ব্যক্তি দীর্ঘ আইনি জটিলতার কারণে হয়রানির মুখে পড়েন।”

“পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাক্ষীর সুরক্ষার বিধান থাকলেও আমাদের দেশে নেই। তাই ফৌজদারি মামলায় সাক্ষীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনাও চাওয়া হয় রিটে।”