যুদ্ধাপরাধ: তিন ভাইয়ের মধ্যে খালাস চেয়ে দুইজনের আপিল

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে হবিগঞ্জের রাজাকার মুহিবুর রহমান মৃত্যুদণ্ড এবং তার চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাক আমৃত্যু কারাদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল করেছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2016, 08:21 AM
Updated : 30 June 2016, 08:51 AM

দুই আসামির আইনজীবী এম মাসুদ রানা বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আপিল জমা দেন।

যুদ্ধাপরাধ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ জুন এ মামলার রায়ে হবিগঞ্জের রাজাকার মুহিবুরকে মৃত্যুদণ্ড এবং তার ভাই মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া ও চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাককে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়।

আইন অনুযায়ী, যুদ্ধাপরাধ মামলায় রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে উভয়পক্ষ আপিল করতে পারে। এ হিসেবে রায় ঘোষণার ৩০তম দিনে দুই আসামি আপিল করলেন।

তাদের আইনজীবী এম মাসুদ রানা জানিয়েছেন, আরেক আসামি আঙ্গুর মিয়াও দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে তিনি শুনেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মাসুদ রানা বলেন, একটি আপিল করা হয়েছে। আপিলে মুহিবুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড থেকে ও আব্দুর রাজ্জাক আমৃত্যু কারাদণ্ড থেকে খালাসের আরজি জানানো হয়েছে।”

২৮ পৃষ্ঠার মূল আপিলে আসামিদের খালাসের পক্ষে ১০টি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রসিকিউশন এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে যে চার অভিযোগ এনেছিল, তার সবগুলোই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়।

এর মধ্যে প্রথম অভিযোগে হত্যার দায়ে মুহিবুরকে মৃত্যুদণ্ড ও তার দুই ভাইকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

অপর তিন অভিযোগে আসামিদের প্রত্যেকের ৩৭ বছর করে সাজার আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।

তিন আসামি বানিয়াচং উপজেলার মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া এবং আব্দুর রাজ্জাক বর্তমানে কারাগারে আছেন।

তারা তিনজনই একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সহযোগিতায় গঠিত রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন।

সে সময় হবিগঞ্জের কয়েকটি গ্রামে তারা যেসব মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ঘটান, তা এ মামলার বিচারে উঠে এসেছে।

বড় মিয়া, আঙ্গুর মিয়া

অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের কুমুরশানা গ্রামের মহিবুর রহমানের জন্ম ১৯৫০ সালে।তার ছোট ভাই মুজিবুর রহমান জন্ম নেন ১৯৫৫ সালে।

মহিবুরকে এলাকার মানুষ চেনে বড় মিয়া নামে; আর মুজিবুরের পরিচিতি আঙ্গুর মিয়া  নামে।

বানিয়াচংয়ের সন্দলপুর বিসি হাই স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন মহিবুর। আর মুজিবুর খাগাউড়ার ঢুলিয়া ঘাটুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। 

তারা দুই ভাই একাত্তরে ছিলেন পাকিস্তানের পক্ষের দল নেজামে ইসলামীর স্থানীয় নেতা সৈয়দ কামরুল আহসানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী।     

মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। খাগাউড়া গ্রামে এমএনএ সৈয়দ কামরুল আহসানের বাড়িতে খোলা হয় রাজাকার ক্যাম্প ও টর্চার সেল।

তাদের বড় ভাই কলমধর ছিলেন খাগাউড়া ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এবং ছোট ভাই মোস্তফা ছিলেন খাগাউড়া রাজাকার ক্যাম্পের কমান্ডার।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধীরা পুনর্বাসিত হলে মুজিবুর জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন বলে অভিযোযোগপত্রের তথ্য।

আব্দুর রাজ্জাক

বানিয়াচংয়ের খাগাউড়ার হোসেনপুর গ্রামের মো. আবদুর রাজ্জাকের জন্ম ১৯৫২ সালে। তিনি মহিবুর-মুজিবুরের চাচাতো ভাই।   

রাজ্জাকের প্রতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই বলে প্রসিকিউশনের দেওয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

চাচাতো ভাইদের মতো রাজ্জাকও তিনিও ছিলেন  নেজামে ইসলামীর নেতা সৈয়দ কামরুল আহসানের অনুসারী। একাত্তরে রাজ্জাকও রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন এবং বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধে সক্রিয় হন।