ডিসিসির কানুনগো মোহাম্মদ আলী গ্রেপ্তার

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাময়িক বরখাস্ত কানুনগো মোহাম্মদ আলীকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করেছে দুদক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2016, 07:16 AM
Updated : 30 June 2016, 11:02 AM

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ)‍ প্রণবকুমার ভট্টাচার্য জানান, বুধবার রাতে ঢাকার শ্যামলী এলাকায় মোহাম্মদ আলীর বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

দুদকের উপ পরিচালক মাহবুবুল আলম ওই অভিযানের নেতৃত্ব দেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান তিনি।

কমিশনের দায়ের করা একাধিক মামলায় মোহাম্মদ আলী আসামি জানিয়ে মাহবুবুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,“আয়কর বিবরণীতে অসত্য তথ্য দেওয়া এবং ডিসিসি মালিকানাধীন দু’টি মর্কেটে অবৈধভাবে দোকান বরাদ্দে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দুটি মামলার আসামি হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে ২০০৫ সালে ডিসিসিতে নিয়োগ পাওয়া মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার পর ২০১৩ সালে অনুসন্ধান শুরু করে কমিশন।

অভিযোগে বলা হয়, চাকরিতে যোগ দেওয়ার চার বছরের মধ্যে আলী নিজের দায়িত্বের পাশাপাশি জৈষ্ঠ্যদের ডিঙিয়ে ‘অতিরিক্ত কিছু দায়িত্ব’ পালন করছিলেন যা ‘স্বাভাবিক নয়’। অল্প কিছু দিনের মধ্যে তিনি ডিসিসির ভূ সম্পত্তি শাখার ‘হর্তাকর্তা’ হয়ে ওঠেন।

ডিসিসি মালিকানাধীন বঙ্গবাজার ও ঢাকা ট্রেড সেন্টারে প্রায় দুই শতাধিক দোকান তিনি নিজের বন্ধু-বান্ধব, এলাকার রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, ও কয়েকজন সাংবাদিকদের বরাদ্দ দেন বলেও সে সময় অভিযোগ ওঠে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধান শেষে ২০১৪ সালের ২৫ আগস্ট রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা করে দুদক। ঢাকার সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা এবং মোহাম্মদ আলী সহ মোট আটজনকে আসামি করা হয় ওই মামলায়।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, দোকান বরাদ্দে অনিয়মের মাধ্যমে মোহাম্মদ আলী প্রায় ৩০০ কোটি টাকার সম্পত্তি করেছেন। তবে এগুলোতে তিনি নিজের নাম না দিয়ে নিবন্ধন করেছেন আত্মীয়-স্বজন, ও গ্রামের বাড়ির পরিচিত দরিদ্র মানুষের নাম।

এর মধ্যে মা-বাবার নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি; স্ত্রী শামীমা আক্তারের নামে শ্যামলীতে পাঁচ তলা বাড়ি এবং গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে জমি থাকার তথ্যও তদন্তে উঠে আসে।

মামলাপরবর্তী তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেশ কয়েকবার কমিশনে তলব করা হয় মোহাম্মদ আলীকে। তাকে আয়কর বিবরণীও দাখিল করতে বলা হয়; কিন্তু সেখানেও দেখা যায় গরমিল।

আয়কর বিবরণী অনুযায়ী, মোহাম্মদ আলীর নামে ৩৬ লাখ ৩৭ হাজার ২৬৩ টাকার সম্পদ থাকার কথা থাকলেও ২০১৫ সালে তার দেওয়া সম্পদের বিবরণীতে ৫৯ লাখ ৬ হাজার ৪১৮ টাকার সম্পদের হিসাব পাওয়া যায়।

আয়কর বিবরণীতে ‘অসত্য তথ্য’ দেওয়ার অভিযোগে ২০১৫ সালে কমিশনের উপ পরিচালক জুলফিকার আলী রাজধানীর রমনা থানায় মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে অন্য মামলাটি দায়ের করেন।

ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, মোহাম্মদ আলী ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি কানুনগো পদে পদোন্নতি পান এবং ২০১০-১১ করবর্ষে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) খোলেন।

২২ লাখ ৬৯ হাজার ১৫৫ টাকা তিনি অবৈধভাবে অর্জন করেছেন অভিযোগ করা হয় মামলার এজাহারে।

এর আগে দুর্নীতির মামলায় হাজিরার জন্য আলী আহম্মেদ নামের একজনকে ‘মোহাম্মদ আলী’ সাজিয়ে আদালতে পাঠিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বরখাস্ত এই কানুনগো।