ফাহিমের জন্য ‘মায়াকান্না’ কেন: প্রধানমন্ত্রী

মাদারীপুরে শিক্ষককে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আটক ‘জঙ্গি’ ফাইজুল্লাহ ফাহিম পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর তার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘মায়াকান্না’ করছেন মন্তব্য করে এর কারণ জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2016, 09:11 AM
Updated : 29 June 2016, 09:53 AM

জাতীয় সংসদে বুধবারের অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে লোকটা (ফাহিম) একজন কলেজ শিক্ষককে মারতে গিয়ে জনগণের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে। তার জন্য খালেদা জিয়ার এত মায়াকান্না কেন এটা আমার প্রশ্ন?”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তার মানে কী দাঁড়াচ্ছে? হাড়ির ভাত সিদ্ধ হচ্ছে কী না একটা টিপলেই বুঝা যায়। এই ঘটনা থেকেই বুঝা যায় গুপ্ত হত্যার সাথে তাদের (বিএনপি) একটা সম্পর্ক রয়েছে। প্রকাশ্যে মানুষ পুড়িয়ে তারা জনগণের রুদ্ধরোষের শিকার হয়েছে। এখন গুপ্ত পথে এসব ঘটনা ঘটিয়ে দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।”

মাদারীপুরে গত ১৫ জুন মাদারীপুরে সরকারি নাজিম উদ্দিন কলেজের গণিতের প্রভাষক রিপন চক্রবর্তীর উপর হামলার পর জনতা ফাহিমকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে দিয়েছিল।

পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত। রিমান্ডে নেওয়ার পরদিন সকালে মাদারীপুরের একটি চরে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গুলিবিদ্ধ হয়ে ফাহিম নিহত হন বলে পুলিশের দাবি।

সম্প্রতি এক ইফতার অনুষ্ঠানে ঢাকার উত্তরার কলেজ ফাত্র ­ফাহিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ‘সম্পৃক্ততার’ অভিযোগ তোলেন খালেদা জিয়া।

শেখ হাসিনা সংসদকে বলেন, “মাদারীপুরে একজন শিক্ষক রিপনকে হত্যার জন্য তার ওপর আঘাত করা হলো। মাদারীপুরের জনগণ সাহসের সাথে সেই ‌আঘাতকারীকে ধরে ফেলল। পরে ‍তাকে নিয়ে আরও লোকজন ধরতে গেলে সে ক্রসফায়ারে বা.. যে কোনো কারণে হোক মৃত্যুবরণ করেছে।”

দেশের সাধারণ নাগরিকরা খালেদা জিয়ার বিচার করবে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রোজা রমজানের দিনে আমরা ইফতার অনুষ্ঠানে গিয়ে আল্লাহ রসুলের নাম নিই। আর ওই মহিলা ইফতারে গিয়ে.. প্রতিদিন নতুন নতুন গিবত গাওয়া, মানুষের বদনাম করা আর মিথ্যা অসত্য কথা বলা, এটাই হচ্ছে তার চরিত্র। এর বেশি আমি বলতে চাই না।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর

প্রধানমন্ত্রীর আগে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

গুপ্তহত্যা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এ ধরনের হত্যাকাণ্ড যারাই ঘটাবে, যে-ই হোক, তার বিষয়ে আমরা অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নেব। জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব এবং আমরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন।”  

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা সরকারের আসার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের স্থান এখানে হবে না। আর বাংলার মাটি ব্যবহার করে কেউ কখনও জঙ্গি তৎপরতা চালাতে পারবে না। এ ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট শক্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে কিছু কিছু ঘটনা ঘটছে। তবে সাথে সাথে এসব ঘটনা তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচার করার ব্যবস্থা আমরা করে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা সংস্থা যথেষ্ট তৎপর।”

গোয়েন্দাদের তৎপরতার জন্য বেশ কিছু বড় ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখানে অনেকগুলি বড় বড় ঘটনা ঘটার ষড়যন্ত্র হয়েছে। সেগুলো যথাসময়ে গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য দিয়েছেন। আমরা সেগুলো ধরেছি।”

অর্থমন্ত্রীর জন্য দোয়া

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতে প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, “২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য আমরা দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড়; ৩ লাখ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছি।”

গত ৭ বছরে বাজেটের পরিমাণ সাড়ে ৫ গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসাবে টানা আট বারের মতো বাজেট পেশ করেছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। 

প্রধানমন্ত্রীর তার বক্তব্যে বলেন, “জাতীয় সংসদে অষ্টমবারের মতো বাজেট দিয়েছেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন এই সংসদে আরও বাজেট দিতে পারেন।”

পরনির্ভরশীলতা কমিয়েছি

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছি। আগে বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে অন্যের থেকে অনুদান নেওয়ার প্রয়োজন হতো, এখন আর অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হয় না।”

২০০৮-০৯ অর্থবছরে বৈদেশিক অনুদানের প্রস্তাবিত হার ছিল ৬.৪ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বৈদেশিক অনুদান হার ধরা হয়েছে মাত্র ১.৬ শতাংশ। 

“এখন উন্নয়ন বাজেটের ৯০ শতাংশ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। আমরা আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলার সক্ষমতা অর্জন করেছি।”

বিশ্ব মন্দা সত্ত্বেও বিনিয়োগ ৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আরও বিনিয়োগ যাতে হয় তার জন্য উদারনীতি গ্রহণ করেছি।”

রামপাল নিয়ে হৈ চৈ কেন?

রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প  নিয়ে অনেকের উদ্বেগের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে অনেক হৈ চৈ। কী করণে এটা নিয়ে হৈ চৈ হচ্ছে তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।

পরিবেশ নষ্টের কথা যারা বলছেন তাদের জানাতে চাই, অক্সফোর্ড থেকে বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশের শহরের পাশেই এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এখানে পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা মোটেও নেই।”

তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ কেন্দ্র যেখানে হচ্ছে সেখান থেকে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই। কয়লা দিয়ে কিন্তু পানি ফিল্টার করা হয়। সেখানে কয়লায় কী করে প্রকৃতি নষ্ট হবে বা সুন্দরবন নষ্ট হবে এটা কীভাবে আসে বোধগম্য  নয়। কোন উদ্দেশ্যে এই পরিবেশ নষ্টের কথা বলা হয় সেটাই আমার প্রশ্ন। এটা যদি সত্যি পরিবেশ বা সুন্দরবন নষ্টের এতটুকু আশংকা থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই এটা আমরা করতাম না।”

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্য সিমেন্ট কারখানায় যাবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

রাশিয়ার সহযোগিতায় রূপপুরে পরমানু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে রওশন এরশাদের উদ্বেগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাকে আমি এতটুকু নিশ্চিত করতে চাই পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এখন অনেক আধুনিক হয়েছে। এখন আর চেরনবিলের মত ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই। এখন আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ নির্মাণ হচ্ছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রর বর্জ্য তারাই নিয়ে যাবে।

“কাজেই এখানে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। বরং এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে আমরা নতুন যুগে পর্দাপন করছি। একই সাথে দেশের বিদ্যুৎ সমস্যারও সমাধান হবে।”

পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা এসেছে

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে নেওয়া পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটি স্থিতিশীল, স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক, দক্ষ ও জাতীয় অর্থনীতিতে যথেষ্ট অবদান সৃষ্টিকারী এক পুঁজিবাজারের জন্য আমরা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

এক্সচেঞ্জ ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির সুশাসন নিশ্চিত করতে নেওয়া পদক্ষেপ, শেয়ার বাজারে লেনদেন কারচুপি ও অনিয়ম শনাক্তকরণ ও যথাযথ নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেওয়া, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রনোদনা প্যাকেজের সফল বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা, পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তিতে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চালু এবং আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য ফাইনানসিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট প্রনয়নের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট) রুলস, ২০১৫ প্রণয়নের ফলে তথ্য-প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে দেশিবিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস, ২০১৫ প্রণয়নের ফলে আইপিও প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এসেছে বলেও তিনি জানান।