ঈদের ছুটিতে মাঠ প্রশাসনকে ‘সতর্ক’ থাকার নির্দেশ

ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে কোনো পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলায় বা কোনোভাবে যাতে অস্থিরতা সৃষ্টি না হতে পারে- সে বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2016, 07:26 AM
Updated : 29 June 2016, 07:39 AM

বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনারদের এক অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এই নির্দেশনা দেন।

বিভাগীয় কমিশনারদের উদ্দেশে মুখ্য সচিব বলেন, “নয় দিনের লম্বা ছুটিতে জেলা প্রশাসকদের সতর্ক রাখবেন। কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে ডিসিরা যেন সজাগ থাকেন।”

রোজার ঈদ সামনে রেখে শবে কদরের পরদিন আগামী ৪ জুলাই সরকারি ছুটি ঘোষণা হওয়ায় আগে ও পরে শুক্র-শনি মিলিয়ে এবার টানা নয় দিনের ছুটি পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা।

ঈদের ছুটিতে যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সঙ্গে সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের জানাতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন আবুল কালাম।

সরকারি কর্মকর্তাদের তিনি বলেন, “নয় দিনের ছুটি। ছুটি যত লম্বা আপনাদের রেসপনসিবিলিটি তত বেশি।”                      

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্য সচিবের পাশে বসে ভিডিও কনফারেন্স অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম বলেন, “নয় দিন সরকারি ছুটিতে নিরাপত্তার বিষয়টি বড় আকারে দেখা দরকার।”

এই সময়ে ব্যাংকের ভল্টের নিরাপত্তা আরও জোরদারের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “ঈদের ছুটিতে মানুষ যেন জরুরি চাহিদাগুলো মেটাতে পারেন। নিরাপত্তার বিষয়গুলো ভালভাবে দেখতে ডিসিদের সঙ্গে যেন কোঅর্ডিনেশন করা হয়।

“ডিসি অফিস সব সময়ই খোলা থাকবে, এরপরেও যেন এক্সট্রা কেয়ার নেওয়া হয়- এটাই মেসেজ,” বিভাগীয় কমিশনারদের বলেন সুরাইয়া।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বসে ভিডিও কনফারেন্সে অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বিভাগীয় কমিশনারদের জানান, ব্যাংকিং বিভাগ থেকে ঈদের ছুটিতে ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তার বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ঈদের ছুটিতে ব্যাংক খাতের নিরাপত্তায় বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদেরও সহযোগিতা চান অর্থ সচিব।

‘টার্গেটে’ এল মাঠ প্রশাসনের কাজ

প্রথমবারের মতো আট বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

মন্ত্রিসভা কক্ষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এবং আট বিভাগীয় কমিশনাররা বুধবার এই চুক্তিতে সই করেন।

কাজের ব্যবস্থাপনায় মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো মন্ত্রণালগুলোর সঙ্গে এপিএ করে।

এরপর মন্ত্রণালয়গুলো তাদের অধীন দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে এপিএ করে। এবার মাঠ প্রশাসন, অর্থাৎ বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে এপিএ করল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুযায়ী বিভাগীয় কমিশনাররা এক বছরের টার্গেট দিয়ে জানাবেন, তারা কী কী করতে চান এবং কোন কোন সূচক কোন মাত্রায় অর্জনের চেষ্টা করবেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বিভাগীয় কমিশনারদের সেই লক্ষ্য অর্জনে সার্বিক সহায়তা দেবে।

বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে চুক্তি শেষে শফিউল আলম বলেন, “আগে লিগ্যাল কোনো বাইন্ডিং ছিল না। এখন যেহেতু চুক্তি করলাম পারস্পারিকভাবে দায়বদ্ধতার মধ্যে চলে এসেছি। প্রথমবারের মত মাঠ পর্যায়ের কাজকে টার্গেটের মধ্যে আনা হয়েছে।”

সচিব বলেন, “জন প্রতিনিধিরা আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ করেন। শপথ ভঙ্গ হলে তারা জনগণের কাছে দায়ী হন, আমাদের সে রকম ব্যবস্থা নেই। এখন আমরা পারস্পারিকভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নিজেদের বাইন্ড করলাম যে, উই আর কমিটেড টু পারফরম আওয়ার ডিউটিজ।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যেসব লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে তার শতভাগ অর্জন কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।

বিভাগীয় কমিশনারদের পক্ষে ঢাকার হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই চুক্তির ফলে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হবে।

“একইসঙ্গে সেবাদাতাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং উদ্ভাবনী চর্চার মাধ্যমে মানসম্মত সেবা নিশ্চিত হবে।”

এপিএ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার।

আগামী বছর ডিসি সম্মেলনের পরের দিন ইনোভেশন ফেয়ার হবে জানিয়ে মুখ্য সচিব বলেন, জেলা থেকে ‘ফ্রেশ ইনোভেশনগুলো’ পাঠাতে হবে, এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনাররা সহযোগিতা করবেন।