বাবুল আক্তার নজরদারিতে নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বাবুল আক্তারের অবস্থানস্থলে পুলিশ পাহারা নিয়ে তার পরিবার সন্দেহ প্রকাশ করলেও তিনি নজরদারিতে নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2016, 10:30 AM
Updated : 28 June 2016, 10:56 AM

মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “নো (না)। সে আমাদের নজরদারিতে আছে বলে আমরা কখনও বলিনি।”

স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের মামলা বাদী বাবুলকে গত শুক্রবার মধ্যরাতে নাটকীয়ভাবে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর নানা গুঞ্জনের মধ্যে তার পুলিশ পাহারা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।

চট্টগ্রামে স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ডের পর দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে ঢাকার মেরাদিয়ায় শ্বশুরের বাসায় আছেন বাবুল। সেখানে সবসময় পাহারায় থাকছে পুলিশ।

নানা গুঞ্জনের মধ্যেও কোনো কথাই বলছেন না বাবুল, বের হচ্ছেন না ঘর থেকেও। স্বজনরাও তার মুখ থেকে কিছু জানতে পারেননি বলে শ্বশুর মোশাররফ জানান, যিনি নিজেও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা।      

বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবারও বলেন, “যারা বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যা করেছে, বাবুলকে তাদের মুখোমুখি করা হয়েছিল। তিনি এদের চেনেন কি না বা হত্যার রহস্য কী, তা উদ্ঘাটনেই এই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।”

চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় জঙ্গি দমনে ভূমিকার জন্য আলোচিত ছিলেন বাবুল। সম্প্রতি তিনি ঢাকায় বদলি হয়ে এলেও স্ত্রী ও দুই ছেলে সেখানেই ছিলেন।

বাবুল বদলি হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দেওয়ার জন্য বের হলে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের কাছে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় মিতুকে। 

হত্যার ধরন এবং বাবুলের কার্যক্রমের কারণে শুরুতে জঙ্গিদেরই সন্দেহ করা হচ্ছিল এই হত্যাকাণ্ডের জন্য। তবে গত দু’দিনে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ বলেছে, এরা পেশাদার খুনি।

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল (ফাইল ছবি)

আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে খুনিদের শনাক্ত করা হয়েছে। যারা হত্যা করেছে, তাদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের ধরার প্রক্রিয়া চলছে।

চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিলেও কী কারণে মিতুকে খুন করা হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও কিছু স্পষ্ট করেনি পুলিশ। বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ নিয়েও চলছে রাখঢাক।

এনিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আপনারা ধৈর্য ধরেন। গোয়েন্দারা প্রতিবেদন দিক, তারপর আমরা সব বলতে পারব। আপনাদের কাছ থেকে একটু সময় নিচ্ছি আমরা।”

বাবুল আক্তারকে নিয়ে রাখঢাকের মধ্যে নানা গুঞ্জন ডালপালা মেলছে। তাকে সন্দেহের কথা আসছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে, আবার আসছে পেশাগত বিরোধের বিষয়টিও।

ঢাকা মহানগর পুলিশ ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ উভয়ই বাবুলকে চাইছিল বলে প্রকাশিত খবরের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এটা পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আপনি (সাংবাদিক) কীভাবে জানলেন?”

বাবুল চুপ

মিতু হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা গুঞ্জন চললেও টানা ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত শনিবার মেরাদিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে ফিরে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন এসপি বাবুল আক্তার।  

তার স্বজনরা জানান, কারও সঙ্গেই পারতপক্ষে কথা বলছেন না তিনি। কোনো সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতেও রাজি হচ্ছেন না।

বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাবুলকে বলেছি, তোমাকে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছে, অনেক ধরনের গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। তুমি তোমার অবস্থান পরিষ্কার করছ না কেন। কিন্তু সে কারও সঙ্গে কথা বলতে চায় না।”

তিনি আগের দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ডিবি অফিস থেকে ফেরার পর বাবুল একদিনও বাসার বাইরে যাননি। একটি ঘরের মধ্যেই থাকছেন। তাকে খুব বিষন্ন দেখাচ্ছে।

বাবুলকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার পর নানা গুজবের মধ্যে মোশাররফ বলেছিলেন, “আমি কোনোদিন বিশ্বাস করি না, বাবুল মিতুকে হত্যার পরিকল্পনা করতে পারে। এটা একেবারেই অসম্ভব।”

তিনি সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো চাই, মেয়ের হত্যার বিচার হোক। আমার কাছে সেইটাই মেজর বিষয়।”

“মিতু হত্যার তদন্তে যেই দোষী প্রমাণিত হোক তার বিচার দাবি করছি। এই হত্যাকে কেউ যেন ভিন্ন কোনো খাতে প্রবাহিত করতে না পারে এই দাবিও জানাচ্ছি,” মঙ্গলবার বলেন মিতুর বাবা।

বাবুল আক্তার (ফাইল ছবি)

বাবুলকে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে কি না- প্রশ্ন করা হলে হত্যা ও তদন্তস্থল চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে। সেই কারণে কথা না বলে থাকতে পারেন। তবে আমরা তাকে কথা বলতে নিষেধ করিনি।”

পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত এসপি বাবুল আর চাকরিতে ফিরছেন না বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

বাবুল চাকরি ছেড়েছেন কি না- জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহছান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এই নিয়ে কিছু বলতে পারব না।”

বাবুল আক্তারকে ঢাকায় ডিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদের সময় উপস্থিত থাকার কথাও অস্বীকার করেন চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার।

গত শনিবার বাবুল ডিবি অফিস থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাহবুব আলম বলেছিলেন, “সিএমপি কমিশনার মামলার তদন্ত নিয়ে বাবুল আক্তারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।”

মিতু হত্যার মামলাটি ছায়া তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের সদস্যরাও। গুঞ্জন রয়েছে পিআইবির ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার ঘটনাটি তদন্ত করতে গিয়ে বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্র তৈরি করেন।

এই বিষয়ে বনজ মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ছায়া তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আমার প্রতিবেদনের কারণে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে- এমন কিছু তো আমার জানা নেই।”

তবে তদন্তে কী পেয়েছেন, তা নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি ডিআইজি বনজ।

বাবুল সম্পর্কে তিনি বলেন, “বাবুল অত্যন্ত প্রফেশনাল কর্মকর্তা। তাকে পিবিআইয়ে বদলি করে আনার জন্য জোর চেষ্টা করছিলাম। দীর্ঘ সময় চট্টগ্রামে একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।”