নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য্য বলছেন, এহতেশামুল হক ভোলা ও মনির হোসেন নামের ওই দুইজনকে মঙ্গলবার ভোররাতে নগরীর বাকলিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদের মধ্যে ভোলা কয়েক দিন আগেই আটক হয়েছিলেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর এলেও পুলিশ তা স্বীকার করেনি।
দেবদাস ভট্টাচার্য্য বলেন, ভোলাকে প্রথমে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যে মনিরের বাসা থেকে একটি পয়েন্ট ৩২ বোরের দেশি রিভলবার, ৭ দশমিক ৬৫ বোরের একটি বিদেশি পিস্তল এবং ছয় রাউন্ড রিভলবারের গুলি উদ্ধার করা হয়।
“ভোলা তার কর্মচারী মনিরের কাছে ওই অস্ত্র রাখতে দিয়েছিল। অস্ত্রগুলো হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে কি না তা যাচাইয়ের জন্য বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হবে,” বলেন তিনি।
গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের ও আর নিজাম রোডে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় মাহমুদা আক্তার মিতুকে।
ওই ঘটনায় তার স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং মেরাদিয়ার হাজীপাড়ায় বাবুলের শ্বশুরবাড়িতে পুলিশের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে নানা খবরের মধ্যেই নতুন করে এ দুইজনকে গ্রেপ্তারের খবর এল।
পুলিশ বাবুলকেও ‘সন্দেহ করছে’ বলে এরপর পত্রিকায় খবর আসে, যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সন্দেহভাজন খুনিদের গ্রেপ্তারের পর তা যাচাইয়ের জন্যই বাবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।
বাবুল বাড়ি ফেরার পরদিন রোববার মোতালেব মিয়া ওয়াসিম ও আনোয়ার হোসেন নামে আরও দুজনকে আলোচিত এ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের কথা জানায় পুলিশ।
তারা ওইদিনই চট্টগ্রামের আদালতে ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি’ দিয়েছেন বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার সেদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মিতু হত্যাকাণ্ডে সাত থেকে আটজন জড়িত ছিলেন, তাদের মধ্যে দুজন হলেন ওয়াসিম ও আনোয়ার।
তিনি দাবি করেন, হত্যাকাণ্ডের পর মোটর সাইকেলে যে তিনজনকে পালাতে দেখা গিয়েছিল, ওয়াসিম তাদের একজন। সেই মিতুকে গুলি করে। আর আনোয়ার হলেন অনুসরণকারীদের একজন।
সন্দেহভাজন জঙ্গিদের হামলায় সম্প্রতি কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রামে সহকর্মীর স্ত্রী একই কায়দায় খুন হলে পুলিশের সন্দেহ হয় জঙ্গিদেরই।
আর বাবুল যেহেতু চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনের সময় জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নেতৃত্বে ছিলেন, সে কারণেও মিতু হত্যার পর ওই সন্দেহের কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছিলেন।
কিন্তু ওয়াসিম ও আনোয়ারকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা ‘পেশাদার অপরাধী’। তবে কার নির্দেশে তারা মিতুকে হত্যা করে থাকতে পারে- সে প্রশ্নের উত্তর সেদিন ইকবাল বাহার দেননি।
হত্যাকাণ্ডের পর শাহ জামান রবিন ও আবু নসুর গুন্নু নামে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। কিন্তু গত রোববার পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ওই দুজনের সম্পৃক্ততা মিতু হত্যাকাণ্ডে নেই।
অস্ত্রের ‘যোগানদাতা’
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য্য বলেন, আগে গ্রেপ্তার হওয়া ওয়াসিম ও আনোয়ার তাদের জবানবন্দিতে ভোলার কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহের কথা এবং হ্ত্যাকাণ্ড শেষে অস্ত্র ভোলাকে ফেরত দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
“সেই তথ্যের ভিত্তিতে ভোলাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অস্ত্র সরবরাহ ও ফেরত পাওয়ার কথা সে স্বীকার করেছে।’
ভোলার স্বীকারোক্তি অনুসারেই মঙ্গলবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে রাজখালী বিশ্বরোডের পশ্চিম পাশে এরশাদ কলোনির বাসা থেকে মনিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি জানান, ভোলাকে হত্যা ও অস্ত্র মামলায় এবং মনিরকে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
নগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো হয়, এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলার (৪১) বিরুদ্ধে নগরীর চান্দগাঁও ও বাকলিয়া থানায় দুটি হত্যা মামলাসহ মোট ১৬টি মামলা রয়েছে।
ভোলার বাবার নাম সিরাজুল হক। বন্দরনগরীর বাকলিয়া থানার রাজাখালী বিশ্বরোড এলাকায় নিজের নামে একটি কলোনি তৈরি করেছে সে, যা স্থানীয়দের কাছে ‘ভোলার বাড়ি’ নামে পরিচিত।
গ্রেপ্তার মনির হোসেন ওরফে মনির (২৮) কুমিল্লার মুরাদনগর এলাকার জানঘর সরকারবাড়ি এলাকার ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভোলা অস্ত্র সরবরাহ করলেও মিতু হত্যার বিষয়ে তিনি আগে থেকে জানতেন কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।