প্রতারণা মামলা: পুলিশকে হস্তান্তরে গেজেটের অপেক্ষা দুদকে

সংসদে আইন সংশোধনের প্রস্তাব পাসের পর প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের করা বিচারাধীন ও অনিষ্পন্ন মামলাগুলোর তদন্তভার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে গেজেটের অপেক্ষায় রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 June 2016, 02:47 PM
Updated : 27 June 2016, 02:47 PM

দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সংশোধিত আইনের গেজেট হাতে পেলেই হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করবেন তারা।

এর আগে গত ৯ জুন সংসদে ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) বিল-২০১৬’ পাশ হয়, যেখানে সরকারি সম্পত্তি সম্পর্কিত এবং সরকারি ও ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত প্রতারণা বা জালিয়াতি মামলা ছাড়া অন্যান্য প্রতারণা ও জালিয়াতি মামলার তদন্তভার পুলিশের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

২০০৪ সালের দুদক আইন অনুযায়ী জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ ও অপরাধ জনিত বিশ্বাসভঙ্গের মত বিষয়গুলো দুদকের তফসিলভূক্ত অপরাধের তালিকায় ছিল।

২০০৯ সালে মুদ্রা পাচারের অভিযোগও দুদকের তফসিলভুক্ত করা হয়। আর ২০১৩ সালের নভেম্বরে এক সংশোধনীতে ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৬৯ এবং ৪৭১ নাম্বার ধারার অপরাধ তদন্তের দায়িত্বও দুদকের ওপর বর্তায়। এই ধারাগুলোর মধ্যে প্রতারণার অভিযোগ ৪২০ ধারায় অন্তর্ভুক্ত। অন্যগুলো ব্যাক্তিগত অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতি সংক্রান্ত মামলার ধারা।

দুদকে ন্যাস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত মামলাগুলোর তদন্ত করত পুলিশ, বিচার চলত হাকিমের আদালতে। কিন্তু ‘ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট’ অনুযায়ী দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধগুলোর এখতিয়ার জেলা জজ আদালতের হাতে চলে যায়। জজ আদালতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এসব মামলায় তৈরি হয় দীর্ঘসূত্রিতা।

আইন সংশোধনের পর পুলিশ স্বাভাবিক ভাবেই ৪২০ ধারার মামলা নেয়া বন্ধ করে দেয়। এক্তিয়ার না থাকার কথা বলে দুদকের যাওয়ার পরামর্শ দিতে থাকে তারা। অন্যদিকে লোকবলের অভাবের কথা বলে দুদক এসব অভিযোগের তদন্ত না করায় প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির মামলা নিয়ে তৈরি হয় অচলাবস্থা।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন থানা থেকে দুদক কার্যালয়ে পাঠানো জাল জালিয়াতির অভিযোগের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর এক পর্যায়ে এ ধরনের অভিযোগ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল কমিশন।

এই প্রেক্ষাপটে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলাগুলোর তদন্তভার দুদক থেকে আগের মতো পুলিশের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সংসদে আইন সংশোধন করা হয়।

রাজধানীর বিভিন্ন থানা থেকে দুদক কার্যালয়ে পাঠানো জাল-জালিয়াতির মামলাগুলোর মধ্যে প্রায় দেড় হাজারের মতো অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়েছিল বলে দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান।

এসব মামলার মধ্যে ইতোমধ্যে অনেকগুলোর অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে জানিয়ে ওই দুদক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংশোধিত আইন পাশের পর আসলে আমাদের মাথার ওপর থেকে বিশাল এক বোঝা নেমে গিয়েছে।

“ইতোমধ্যে আমরা অভিযোগগুলো যাচাই বাছাই শুরু করে দিয়েছি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতারণা ও সরকারি সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগগুলো রেখে বাকি সবগুলো পুলিশে হস্তান্তর করা হবে।”

যে মামলাগুলো অনুসন্ধানাধীন- সেগুলোর কী হবে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, “আমরা সবগুলো মামলা হস্তান্তর করব।”

দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল বলেন, “সংশোধিত আইনের গেজেট এখনো অফিসিয়ালি আমরা পাই নি। তবে আমি যতটুকু জানি, গেজেটে সবগুলো অভিযোগ ও মামলা হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। গেজেট হাতে পেলে আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করব।”