জাহানারা ইমামের ‘আলোয়’ পথ খোঁজার আহ্বান

জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আড়াই দশক আগে একাত্তরের ঘাতকদের বিচার দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছিল, তা-ই এখন ‘জাতীয় ইস্যুতে’ পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য এসেছে একটি আলোচনা সভা থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2016, 05:45 PM
Updated : 26 June 2016, 05:52 PM

দেশে বর্তমানে যে সন্ত্রাস ও গুপ্তহত্যা চলছে তা রুখতে শহীদ জননীর চেতনাকে ধারণ করে ঐক্যবদ্ধ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন ওই সভার বক্তারা। 

জাহানারা ইমামের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে রোববার রাজধানীর উইমেন্স ভলান্টিয়ার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে  স্মরণসভা, স্মারক বক্তৃতা ও জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক বিতরণের আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

সেখানে বক্তব্যে কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, “মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে মুক্তচিন্তা ও মানবিকতার আলোর মশাল তরুণদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন জাহানারা ইমাম। সে আলোয় পথ খুঁজে নেওয়া এমন কোনো কঠিন কাজ নয়।”

একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচারে জণগণের একতা সবচেয়ে বড় নিয়ামক মন্তব্য করে অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, “মহিয়সী জাহানারা ইমাম আমাদের পথ দেখিয়ে গেছেন। জনগণের সমর্থন পেলে একাত্তরের ঘাতক জামায়াত ও তাদের সমর্থক শিবিরের বিচারকাজ এমন কোনো কঠিন কাজ হবে না।”

গত শতকের নব্বইয়ের দশকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ও গণআদালতের প্রধান উদ্যোক্তা জাহানারা ইমাম মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন মারা যান।

‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র  এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ‘শহীদ জননী’ হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন মুক্তিযুদ্ধে ছেলে গেরিলা যোদ্ধা শফি ইমাম রুমিকে হারানো এই নারী। ক্যান্সার নিয়েও আন্দোলন চালিয়ে পরিণত হন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আন্দোলনের প্রতীকে।

বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের যাবতীয় অর্থের যোগান বন্ধ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান শাহরিয়ার কবির। একইসঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে আরও বেশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী সামাজিকভাবে জামায়াতে ইসলামীকে বর্জনের আহ্বান জানান।

এখনও সমাজে জামায়াতের সমর্থন থাকায় হতাশাও ঝরে তার কণ্ঠে: “সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জামাতিরা ঢুকে পড়ে দেশকে তিলে তিলে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এসব ব্যাপারে আমি কাউকে সচেতন হতে দেখি না। জামায়াতি ভাবধারার প্রতি জনসমর্থন ক্রমেই বাড়ছে। জামায়াতে ইসলাম একাত্তরের জঘন্যতম অপরাধ করলেও সমাজে তাদের প্রতি তো তেমন ঘৃণা দেখি না।”

সমাজে সহনশীলতা কমে গেছে বলে মনে করছেন ইতিহাসের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।

তিনি বলেন, “পাকিস্তান আমলে দেশে যতটা সহিষ্ণু পরিবেশ ছিল, এখন তা নেই। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে ক্রমাগত শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে হোক কিংবা সামাজিকভাবে আমরা এ বিষয়ে মোটেই আলোকপাত করছি না।”

বিশ্বজুড়ে গণহত্যা, গণহত্যার বিচারের নানা প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, “পাকিস্তান কখনও যুদ্ধাপরাধী পাক সেনাদের বিচার করবে না, ক্ষমাও চাইবে না। বাংলাদেশও এক্ষেত্রে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবে না।”

সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব জেনোসাইড অ্যান্ড জাস্টিসের পরিচালক মফিদুল হক ‘একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও পাকিস্তান’ শীর্ষক জাহানারা ইমাম স্মারক বক্তৃতা দেন।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি মফিদুল বলেন, “গণহত্যার জন্য দায়ী পাকিস্তানি অপরাধীদের আন্তর্জাতিক আদালতে দাঁড় করাবার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি আমাদের দরকার।

“১৯৫ যুদ্ধাপরাধীর বিচারে প্রয়াসী হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী একসময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, বিশ্ববাসীকে যার মূল্য চরমভাবে দিতে হচ্ছে এখন। গণহত্যার থাবা বিস্তার পেয়েছে দেশে দেশে, সভ্যতার অবমাননা হচ্ছে।”