আদালত পাড়ায় লিফটের জীর্ণ দশা, আতঙ্ক

প্রতিষ্ঠার তিন মাসেই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের প্রায় এক কোটি টাকায় কেনা লিফটের অবস্থা বেগতিক।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2016, 02:19 PM
Updated : 17 Dec 2020, 02:51 PM

প্রতিদিনিই কোনো না কোনো সময় বিঘ্ন ঘটছে প্রায় নতুন এই লিফটিতে।

শুক্রবার রাজধানীর উত্তরায় ট্রপিক্যাল আলাউদ্দিন টাওয়ারের লিফট ছিঁড়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার পর লিফট নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে।

রোববার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে বেলা পৌনে ২টায় নয় জন নিয়ে ওপরে ওঠার সময় লিফট হঠাৎ করেই কেঁপে ওঠে বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় সাত মিনিট ওই অবস্থার মধ্যেই আটকে থাকেন তারা। কিছুক্ষণ পর লিফটি চালু হলেও আতঙ্কগ্রস্তরা নেমে পড়েন।

ঘটনার ভুক্তভোগী আইনজীবী শুভ্র সিনহা রায় রণি বিডিনউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা উপরে উঠছিলাম। ভেতরে ছিলাম মোট নয় জন। সিএমএম আদালতের ৪ নম্বর লিফটটি ওঠার সময় হঠাৎ করেই ঝাঁকুনি দিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। সবাই তখন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন।”

“তিন মাসের মধ্যেই লিফটের এই অবস্থা। আজকে এই লিফটে দুবার একই রকম ঘটনা ঘটেছে। নতুন লিফটে এ সমস্যা দুঃখজনক।”

গত ২৯ মার্চ উদ্বোধন হওয়া সিএমএম আদালতের এই লিফটটির ধারণ ক্ষমতা ২১ জন করে।

শুভ্র সিনহা রণি বলেন, “ধারণ ক্ষমতার কম মানুষ নিয়েই এগুলোর এই অবস্থা, ওভারলোড হলে কী হবে ভেবে দেখেন।”

এ বিষয়ে মুখ্য মহানর হাকিম আদালতের নাজির (নেজারত প্রধান) মো. নাজমুল আসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি কিছুদিন আগে বিষয়টি নিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো কোনো সাড়া মেলেনি।”

সিএমএম আদালতে এর বাইরেও দুটি ছোট আকারের লিফট রয়েছে, যেগুলো মাঝে মধ্যেই অচল হয়ে পড়ে থাকে।

গত সোমবার দেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিনহা ঢাকার নিম্ন আদালতে পরিদর্শনে এলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির পক্ষে তাকে কার্যকরী পরিষদ তাকে লিফট সমস্যার কথা তুলে ধরে।

ঢাকার জেলা জজ আদালতের পুরাতন ভবনে গিয়েও দেখা যায়, একটি লিফট বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। তবে সচল অবস্থায়ও ছিঁড়ে যাওয়ার ভয়ে তাতে চড়তে চান না কেউ।

এ বিষয়ে জেলা জজ আদালতের নাজির মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, “আমরাও একপ্রকার অসহায়। এ লিফট প্রতিস্থাপনের জন্য ঢাকা বার ও আমরা অনেকবার গণপূর্তকে বলেছি। কিন্তু এটি ঠিকও করা হচ্ছে না, আবার নতুন করে প্রতিস্থাপন করাও হচ্ছে না।”

মানুষ ভবনে প্রায় অযোগ্য এই লিফট দিয়েই বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা ওঠানামা করে বলে জানান তিনি।

ঢাকা বারের সভাপতি সাইদুর রহমান মানিক বলেন, “লিফটে যে সংখ্যক লোক বহন করার কথা, সে পরিমাণ লোক বহন করা হয় না। যখন তখন এ লিফট নষ্ট হয়ে যায়। আদালতে আরো পাঁচটি লিফট বাড়ানোর কথা। সে বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে আমরা বলেছি।”

তবে কেউ কেউ তদারকির অভাবকে লিফটের ‘করুণ’ অবস্থার জন্য দায়ী করেন।

ঢাকা বারের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী দুলাল মিত্র বলেন,  “লিফটের ভালো তদারকি নেই। আদালত পাড়ার লিফটের বিষয়ে আমারও অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। সিএমএম আদালতের লিফটে আটকা পড়ে এর আগে এক মামলার শুনানির সময় পার হয়ে গিয়েছিল।”

পুরাতন লিফট অপসারণ করে নতুন লিফট স্থাপনের দাবি জানান তিনি।