সংসদের মূল নকশা আনতে চুক্তি

জাতীয় সংসদ ভবন ও তার আশপাশের এলাকার ১১৫টি ‘আনবিল্ড’ নকশা ও ৮৫৩টি নকশার কপি আনতে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ার আর্কিটেকচারাল আর্কাইভ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2016, 04:25 AM
Updated : 26 June 2016, 04:25 AM

সরকারের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফরে এই চুক্তি হয় বলে প্রতিনিধি দলের নেতা সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইপিএ) গোলাম কিবরিয়া জানান।

নকশা যাচাই-বাছাইসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ার আর্কিটেকচারাল আর্কাইভ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করার পর শনিবার সকালে ঢাকার উদ্দেশে নিউ ইয়র্ক ছাড়েন এ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

নিউ ইয়র্ক ছাড়ার আগে জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে অতিরিক্ত সচিব গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কথা হয়।

প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. মনিরুজ্জামান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহকারী স্থপতি সাইকা বিনতে আলম।

জাতীয় সংসদ ভবনের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনি নির্মাণ নিয়ে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে সংসদ ভবনের স্থপতি লুই আই কানের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংসদ ভবনের মূল নকশা আনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর লুই কানের প্রতিষ্ঠান ডেভিড অ্যান্ড উইজডম এর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে স্থাপত্য অধিদপ্তর।

লুই কানের নকশাগুলো পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কিটেকচারাল আর্কাইভে থাকায় সরকারের পক্ষ থেকে সেখানেও যোগাযোগ করা হয়। ইতোমধ্যে সংসদ ভবনের অঙ্কিত বর্ণনামূলক তালিকা (ড্রয়িং ইনভেনটরি লিস্ট) যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে এসেছে বলে গত জানুয়ারিতে সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন।

এরপর গত মার্চে এক সংবাদ সম্মেলন করে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলকে নকশার বিষয়ে মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর কথা জানিয়েছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

তবে প্রতিনিধি দলটি ৭ জুন যুক্তরাষ্ট্র সফর শুরু করে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান দলের নেতা অতিরিক্ত সচিব গোলাম কিবরিয়া।

তিনি বলেন, “কিছু নকশা যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজনে ১৬/১৭ দিন অবস্থান করতে হলো। তবে আমাদের এই আসাটা সফল হয়েছে বলতে পারি।”

সফরে লুই আই কানের প্রতিষ্ঠান ডেভিড অ্যান্ড উইজডমের শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে জানিয়ে কিবরিয়া বলেন, “জাতীয় সংসদ ভবনের নকশা তৈরিসহ স্থপতি লুই আই কানের সঙ্গে যোগাযোগের কিছু কপিও দেখেছি, ফটোগ্রাফিও রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে সাত হাজার পৃষ্ঠার মতো হবে। আমরা তাদেরকে অনুরোধ জানিয়েছি ফটোকপি করে বাংলাদেশে পাঠানোর জন্যে।”

সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়া।

ওইসব নকশায় জাতীয় সংসদ ভবনের সাথে মিল রেখে আশপাশে কী ধরনের ডিজাইন অনুসরণ করে ভবন নির্মাণ করা হলে পুরো এলাকার সৌন্দর্য আরও বাড়বে সে ধরনের দিক-নির্দেশনাও রয়েছে বলে জানান কিবরিয়া।

সংসদ এলাকায় নকশা বহির্ভূত হিসেবে ইতোমধ্যেই কয়েকটি ভবন নির্মাণ এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরকে মাজারে পরিণত করাসহ বেশ ক’জন রাজনীতিকের কবর রয়েছে।

এখন সেগুলোর ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে চাইলে এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, “শেরে বাংলা নগরের সৌন্দর্যকে অটুট রাখার স্বার্থে কী করা প্রয়োজন, সে সিদ্ধান্ত দেবেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা নেই।”

সংসদ ভবন ও এর আশ-পাশের এলাকার ছোট-বড় প্রায় আট হাজার নকশা ও ডকুমেন্ট পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির কাছে রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রয়োজন ৮৫৩টি নকশা। এছাড়া আনবিল্ড নকশা (এখনো কোন ভবন হয়নি) রয়েছে ১১৫টি।

স্থাপত্য অধিদপ্তরের পরামর্শে এসব নকশা চূড়ান্ত করা হয়। এর আগে প্রতিটি নকশার যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশকে গুণতে হয়েছে সাড়ে তিন হাজার ডলার।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে স্থপতি লুই কান কয়েকবার বাংলাদেশে এসেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মূল নকশা সংশ্লিষ্ট কিছু ‘প্ল্যান’ তিনি হস্তান্তর করতে পারেননি। পরবর্তীতে এ নিয়ে কোনো সরকার আগ্রহ দেখায়নি।

গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেও সংসদ এলাকায় মূল নকশার বাইরে স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারের জন্য বাসভবন বানানো হয়।

উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তখন ভবন দুটি তৈরি হয়। এ সংক্রান্ত একটি মামলা এখনো বিচারাধীন। ২০১৩ সালের ২ জুন সংসদ কমিশনের বৈঠকে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ ভবন সংরক্ষণে মূল নকশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় এমন কিছু না করার ব্যাপারে মত দেন। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলারও পরামর্শ দেন তিনি।

১৯৬১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের আমলে বর্তমান সংসদ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সে সময় স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে এই ভবনের স্থপতি নিয়োগ করা হয়। তার প্রস্তাবেই লুই আই কান এই প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি এ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।